দ্য পকেট রকেট

মাঝখানে ‘ব্যাট’ নামক তানপুরার সুরটা ছেড়ে গিয়েছিল। লাল বলের ক্রিকেটে ছন্দ চ্যুতি ঘটেছিল মুশফিকের ব্যাটে। রান নেই, হাফ সেঞ্চুরি নেই, সেঞ্চুরিরও দেখা নেই। এত ‘নেই’ -এর বেড়াজাল স্বয়ং মুশফিককেই বিষিয়ে তুলেছিল। আর সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে এ ব্যাটারকে রান স্রোতে ফিরতেই হতো। ফিরলেনও বটে। মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আবারো পুরনো ছন্দে ফিরলেন মুশফিকুর রহিম।

গত বছর এই মিরপুরেই সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুশফিক। লঙ্কানদের বিপক্ষে সে ম্যাচে ১৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন এ ব্যাটার। এরপর টেস্টে দীর্ঘ সময় যে রান খরায় ছিলেন, ব্যাপারটা তেমন নয়। মূলত বাকি দুই ফরম্যাটে রান পাচ্ছিলেন না। আর সেই রেশে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও খারাপ করে বসেন। ৪ ইনিংস মিলিয়ে করেন সর্বসাকুল্যে ৮৬।

আর এতেই মুশফিকের আত্মবিশ্বাস কিংবা মনোবলে কিছুটা চিড় ধরে। চারপাশের সমালোচনায় এ ব্যাটার জবাব দেওয়ার তাগিদে নিজেকে মেলেও ধরতে পারছিলেন না। কিন্তু আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে দারুণ ভাবে ফিরে আসেন মুশফিক। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবার টেস্টেও টেনে আনলেন রানের স্রোত। টেস্ট ক্যারিয়ারে দশম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এ ব্যাটার।

টেস্ট ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডকে দুর্বল প্রতিপক্ষ অথবা মুশফিকের এই ইনিংসকে একটুও ছোট করার সুযোগ নেই। বরং চাপের মুখেও দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে মুশফিকের এই ইনিংসের মাহাত্ম্য খানিকটা বেশি। চার নম্বরে মুশফিক যখন ব্যাটিংয়ে আসলেন তখন দুই ওপেনারকে হারিয়ে বাংলাদেশের বিপদ আসন্ন। এর মাঝে আবার মমিনুল ফিরে গিয়ে সেই বিপদের তীব্রতা আরো বাড়ালেন।

ঠিক এমন সময়েই বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম। আইরিশ বোলারদের তোপ সামলে ঠিকই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুশফিকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশও।

সুইপ, কভার ড্রাইভ, কাট শটের পসরা সাজিয়ে মুশফিকও পৌঁছে যান ব্যক্তিগত অর্ধ-শতকে। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূরণ করেন ৬৯ বলে। এর চেয়েও বড় কথা সাকিবের সাথে তাঁর যুগলবন্দীতে বাংলাদেশের রানের চাকা তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে মুশফিক এ দিন সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন বাউন্ডারিতেই। সেঞ্চুরি করার পথেই মেরেছেন ১৩ টি চার আর ১ টি ছক্কা।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মুশফিক যে এ দিন এলোপাতাড়ি শট খেলে রান করেছেন, ব্যাপারটা তেমন নয়। বরং ক্যালকুলেটিভ ইনিংসই খেলেছেন তিনি। বাজে বল গুলো সঠিক প্লেসমেন্টে অবলীলায় বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন। এর পাশাপাশি রানিং বিটুউইন দ্য উইকেটেও সিঙ্গেল তুলে নিয়েছেন অনেক বার। মুশফিক তাঁর ব্যাটিংয়ে আজ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল সমগ্র ইনিংস জুড়েই।

তবে সেই আত্মবিশ্বাস নিশ্চিতভাবেই আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সেঞ্চুরি পূরণ করার পর। ফিফটি পূরণ করার পর আরো সাবলীল হয়ে ওঠেন মুশফিক। পরের পঞ্চাশের জন্য বল হজম করেছেন মাত্র ৬৬ টি। ১৩৫ বলে পৌঁছে যান ব্যক্তিগত শতকে।

মুশফিকের এমন ব্যাটিংয়ে বড় লিডের পথেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিং ভগ্নদশায় তা একটা সময় পর্যন্ত দূরের পথই মনে হচ্ছিল। তবে এমন ক্রান্তিলগ্ন থেকে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসানোর কাজটা মুশফিক ঠিকঠাকভাবেই করেছেন।

নিজে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন, বাংলাদেশের ইনিংসকে এগিয়ে দিয়েছেন। এর চেয়েও স্বস্তির ব্যাপার হলো, লাল বলের ক্রিকেটে মুশফিক আবারো চেনা রূপে ফিরেছেন। ফেরাটা স্মরণীয় হয়ে থাকলো, সেঞ্চুরিসংখ্যায় দুই অঙ্কের পদার্পণে।

মুশফিকের এমন দুরন্ত বিচরণের যাত্রা আরো দীর্ঘায়িত হোক। লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর পরিসংখ্যান হয়ে উঠুক আরো রঙিন। এখন পর্যন্ত মুশফিকের নামে পাশে টেস্টে ১০ সেঞ্চুরি, আর ৩ ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি।

আইরিশদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পূরণের পর যেভাবে মুশফিক ব্যাট করছেন তাতে তাঁর জন্য আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছানো মোটেই অসম্ভব কিছু নয়। সম্ভাব্য এ যাত্রাটার নিশ্চায়নের দিকেই হয়তো ছুটবেন মুশফিক। আর তিনি ছুটলে, ছুটবে বাংলাদেশের রানেরও গতি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link