‘আহমেদ’ একাদশ

ক্রিকেট পাড়ায় বহু ক্রিকেটার আছেন যারা খেলেছেন ভিন্ন ভিন্ন দেশের হয়ে কিন্তু নামের মাঝে মিল আছে। ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক ক্রিকেটার আছেন পূর্বে খেলেছেন বা এখন খেলছেন যাদের নামে যুক্ত আছে ‘আহমেদ’। অবশ্য নামে কি বা আসে যায়। তবুও চলুন আহমেদ নামধারী এমন ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে সেরা একটা একাদশ গঠন করা যাক।

ক্রিকেট পাড়ায় বহু ক্রিকেটার আছেন যারা খেলেছেন ভিন্ন ভিন্ন দেশের হয়ে কিন্তু নামের মাঝে মিল আছে। ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক ক্রিকেটার আছেন পূর্বে খেলেছেন বা এখন খেলছেন যাদের নামে যুক্ত আছে ‘আহমেদ’। অবশ্য নামে কি বা আসে যায়। তবুও চলুন আহমেদ নামধারী এমন ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে সেরা একটা একাদশ গঠন করা যাক।

এই একাদশের বেশিরভাগ পজিশন জুড়ে আছে পাকিস্তানিরা। তালিকায় আছেন বাংলাদেশের দুইজন, ভারতের একজন এবং পাকিস্তানের নয় জন।

  • আহমেদ শেহজাদ (পাকিস্তান)

রিকি পন্টিংয়ের মত আগ্রাসী ব্যাটার হিসেবেই পরিচিতি ছিল সাবেক পাকিস্তানি ওপেনার আহমেদ শেহজাদের। রঙিন পোশাকে তিনি ছিলেন অসাধারণ এক ব্যাটার। ওপেনিংয়ে পাকিস্তানের হয়ে রঙিন পোশাকে খেলেছেন দীর্ঘদিন। অধিকাংশ ক্রিকেটারের নামের শেষে থাকলেও শেহজাদের নামের শুরুতেই যুক্ত আছে আহমেদ।

পাকিস্তানের হয়ে ১৩ টেস্ট। এই ১৩ টেস্টে ৪১ গড়ে করেছেন ৯৮২ রান। পরিসংখ্যান বেশ ভারী হলেও সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেননি তিনি। ৮১ ওয়ানডে ও ৫৯ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টেস্টে অনিয়মিত মুখ হলেও রঙিন পোশাকে করেছেন প্রায় ৪ হাজার রান।

  • ইমতিয়াজ আহমেদ (পাকিস্তান)

পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান ক্রিকেটে অন্যতম সেরাদের একজন ছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ। ১৯৫২ সালে ভারতের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেকের পর পরের দশ বছরে খেলেছেন ৪১ টেস্ট। ৩ সেঞ্চুরি আর ১১ ফিফটিতে ২০৭৯ রানের মালিক সাবেক এই পাকিস্তানি তারকা। গড়টাও প্রায় ত্রিশের কাছাকাছি। গ্লাভস হাতেও তিনি ছিলেন বেশ সফল একজন। ৭৭ ক্যাচের পাশাপাশি স্টাম্পিং করেছেন ১৬ বার।

  • সাঈদ আহমেদ (পাকিস্তান)

মাঠের চারদিকেই শটস খেলতে পারতেন। ষাটের দশকে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা স্টাইলিশ ব্যাটার ছিলেন। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে সাদা পোশাকে খেলেছেন ৪১ টেস্ট। এই ৪১ টেস্টে ৪০ গড়ে রান করেছেন প্রায় ৩ হাজার। ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটি করেন তিনি। ২১ বছর বয়সে অভিষেকের পর জাতীয় দলে খেলেছেন প্রায় ১৩ বছর।

  • ইজাজ আহমেদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তান ক্রিকেটের আন্ডাররেটেড ব্যাটারদের একজন ইজাজ আহমেদ। হয়ত ভুল সময়ে জন্মেছিলেন তিনি। তবুও খেলেছেন দীর্ঘসময়। পাকিস্তান ক্রিকেটে ইমরান খানদের স্বর্ণালি যুগে খেলতে এসেও দলে তৈরি করেছিলেন নিজের একটি আলাদা অবস্থান।

খেলেছেন ৬০ টেস্ট। প্রায় ৩৮ গড়ে ৩ হাজারের বেশি রানের মালিক তিনি। সেঞ্চুরি আর ফিফটিও সমান সমান। ১২ ফিফটি আর ১২ সেঞ্চুরিতে সীমাবদ্ধ ছিল ইজাজের টেস্ট ক্যারিয়ার।

অপরদিকে, ওয়ানডেও খেলেছেন লম্বা সময়। ২৫০ ম্যাচে ৩২ গড়ে করেছেন ৬৫৬৪ রান। ১০ সেঞ্চুরি আর ৩৭ ফিফটি করেছেন সাবেক এই তারকা।

  • সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান): উইকেটরক্ষক

মিসবাহ উল হকের পর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান সরফরাজ আহমেদ। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতে পাকিস্তান। রঙিন পোশাকে পাকিস্তানের সফল অধিনায়কের একজন হলেও টেস্টে অনেকটাই ছিলেন ফিকে। তাঁর অধীনে খেলা ১৩ টেস্টের মধ্যে মাত্র ৪ টি টেস্টে জয় পায় পাকিস্তান। বাকি ৯ টেস্টের মধ্যে ১ পরাজয় এবং ৮ ড্র।

৪৯ টেস্টে ৩৬ গড়ে রান করেছেন ২৬৫৭। আছে ৩ সেঞ্চুরি ও ১৮ ফিফটি। উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে ৯৫ ক্যাচ ও ১৭ বার স্টাম্পিং আউট করেছেন তিনি। অপরদিকে, রঙিন জার্সি গায়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৭২ ম্যাচে করেছেন ৩ হাজারের বেশি রান। টি-টোয়েন্টিতে তিনি অন্যতম সফল। অধিনায়কের একজন ছিলেন।

ইমতিয়াজ আহমেদ থাকলেও পরিসংখ্যান বিবেচনায় এই একাদশের উইকেটরক্ষক হিসেবে থাকছেন সরফরাজ আহমেদ। একই সাথে অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্বে থাকবেন তিনি।

  • আফতাব আহমেদ (বাংলাদেশ)

‘হার্ড হিটার’ শব্দটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে আফতাব আহমেদই চিনিয়েছেন। ব্যাট হাতে হাঁকাতে পারতেন বড় বড় ছক্কা। টেস্ট ক্যারিয়ারটা সমৃদ্ধ না হলেও ওয়ানডে খেলেছেন লম্বা সময়। ১৬ টেস্টে ২০ গড়ে করেছেন ৫৮২ রান।

অপরদিকে, ৮৫ ওয়ানডেতে ২৪ গড়ে ১৯৫৪ ও ১১ টি-টোয়েন্টিতে ২২ গড়ে করেছেন দুইশোর বেশি রান। নিষিদ্ধ টি-টোয়েন্টি লিগ আইসিএলে গিয়ে ক্যারিয়ার খুইয়েছেন সময়ের অনেক আগেই।

  • মুশতাক আহমেদ (পাকিস্তান)

নিজের সময়ের সেরা লেগ স্পিনার। আব্দুল কাদিরের পর পাকিস্তানের সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন মুশতাক আহমেদ। ৫২ টেস্টে ৩৩ গড়ে নিয়েছেন ১৮৫ উইকেট। ১০ বার পাঁচ উইকেট ও তিনবার শিকার করেছেন দশ উইকেট।

অপরদিকে, ১৪৪ ওয়ানডেতে শিকার করেছেন ১৬১ উইকেট। রঙিন জার্সিতে পাঁচ উইকেটের দেখা মিলেছে একবারই। মুশতাক আহমেদের সামর্থ্যটা স্পষ্ট তাঁর পরিসংখ্যানে। আহমেদ একাদশে জায়গা পেতে তাই বেগ পেতে হয়নি এই পাকিস্তানি স্পিনারকে।

  • শাব্বির আহমেদ (পাকিস্তান)

২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক। আর অভিষেক টেস্টেই শিকার করেছিলেন ফাইফর। দুই ইনিংস মিলিয়ে শিকার করেন ৮ উইকেট। তবে ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ হতে পারেনি এই পেসারের। ফিক্সিং ইস্যুতে আজীবন নিষেধাজ্ঞা পান তিনি।

১০ টেস্ট ও ৩২ ওয়ানডেতেই সীমাবদ্ধ ছিল শাব্বিরের ক্যারিয়ার। টেস্টে মাত্র ২৩ গড়ে শিকার করেছিলেন ৫১ উইকেট। অপরদিকে, ৩২ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৩৩ উইকেট। শাব্বিরের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারটা নিভে গিয়েছে অল্পতেই।

  • তৌসিফ আহমেদ (পাকিস্তান)

আব্দুল কাদির ও ইকবাল কাসিমদের ছায়াতলেই কেটে গিয়েছে তৌসিফ আহমেদের সম্ভাবনাময় এক ক্যারিয়ার। যদিও সুযোটা সে হিসেবে একেবারেই কম পাননি এই অফ স্পিনার। ৩৪ টেস্ট ও ৭০ ওয়ানডে খেলেছেন পাকিস্তানের জার্সি গায়ে। ৩৪ টেস্টে ৯৩ ও ৭০ ওয়ানডেতে ৫৫ উইকেট শিকার করেছেন সাবেক এই স্পিনার।

  • তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)

পেস বিভাগে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা। দেশে এবং দেশের বাইরে সমানতালে পারফর্ম করে চলেছেন তাসকিন আহমেদ। দল থেকে বাদ পড়ে আবার রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে দলে এসেছেন।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ১১ টেস্ট, ৪৮ ওয়ানডে ও ৩৩ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই পেসার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে শিকার করেছেন ৯৫ উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন আস্থার এক নাম তাসকিন আহমেদ।

  • গুলাম আহমেদ (ভারত): অধিনায়ক

বিনোদ মানকড়, শুভাষ গুপ্তের সাথে জুটি বেঁধে ভার‍ত জাতীয় দলের হয়ে প্রায় দশ বছর ক্রিকেট খেলেন সাবেক অফ স্পিনার গুলাম আহমেদ। অবশ্য খেলেছেন মোটে ২২ টেস্টে। এই ২২ টেস্টে ৩০ গড়ে শিকার করেছেন ৬৮ উইকেট। চারবার নিয়েছেন পাঁচ ও একবার শিকার করেন দশ উইকেট।

  • ইউনুস আহমেদ (পাকিস্তান): দ্বাদশ খেলোয়াড়

খেলেছেন মাত্র চার টেস্ট। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে মাত্র ৬ ম্যাচের ক্যারিয়ার। ৪ টেস্টে ২৯ গড়ে করেছেন ১৭৭ রান। অভিষেক টেস্টেই খেলেছিলেন ৬২ রানের ইনিংস।

কিন্তু, এরপরের তিন টেস্টের ব্যাট হাতে ছিলেন চরম ব্যর্থ। যদিও দ্বিতীয় টেস্টের পরেই বাদ পড়েন ইউনুস খান। এরপর ১৪ বছর দলের বাইরে। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে দলে ফিরলেও সুযোগ পান দুই টেস্টে। সেখানেও ছিলেন ব্যর্থ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...