কপাল খুলবে বিজয়-নাইমের!

এনামুল হক বিজয় আর নাইম শেখ। চাইলেই বেশ কয়েকটি ব্র্যাকেটে দুইজনকে একসাথে করা যায়। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দুইজনেই ছোটাচ্ছেন রান বন্যা। আবাহনীর জার্সিতে সমান তালে রান করে যাচ্ছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই দুই ওপেনার।

গত মৌসুমে হাজারের বেশি রান করে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়া এনামুল হক বিজয় এবারও ১৫ ম্যাচ শেষে করেছেন ৭৬২ রান। তাকেও ছাপিয়ে গেছেন নাঈম শেখ। সমান ম্যাচে ৮৬৪ রান করে এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও নাঈম। কিন্তু প্রশ্ন হলো ডিপিএলের এই রান্না বন্যা কি জাতীয় দলে সুযোগ করে দিতে পারবে এনামুল আর নাঈমকে?

ঘরোয়া লিগে বরাবরই ভালো খেলে থাকেন এনামুল ও নাঈম। গত বছর তো এনামুল ডিপিএলে বিশ্বরেকর্ডই গড়লেন। গত আসরের এনামুলের দুর্দান্ত ফর্ম উপেক্ষা করতে পারেননি নির্বাচকরা। ডিপিএলের পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এওয়ে সিরিজের দলে ডাকা হয় এনামুলকে। এরপর তিন ফরমেটেই বাংলাদেশ দলে সুযোগ পান এনামুল। তবে সেই সুযোগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। একে একে বাদ পড়েন তিন ফরমেটের দল থেকেই।

তবে ডিপিএলের গত আসরের ফর্ম তিনি টেনে এনেছেন এই আসরেও। ১৫ ম্যাচ শেষে ৫৮.৬২ গড়ে করেছেন ৭৬২ রান। যে স্ট্রাইকরেট ছিলো আনামুলের সমালোচনার জায়গা সেই স্ট্রাইকরেটটাও দারুণ এবার। ৯৮.২০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন এনামুল।

তবে এবারের আসরে এনামুলকেও ছাপিয়ে গেছেন নাইম শেখ। আবাহনীর জার্সিতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। ১৫ ম্যাচে ৭২ গড়ে করেছেন ৮৬৪ রান। স্ট্রাইকরেটটাও দারুণ, ৯২.১১। বাংলাদেশের জার্সিতে মাত্র একটা ওয়ানডে ইনিংস খেলা নাঈম তাই জাতীয় দলে ফেরার দাবীটা জানাচ্ছেন জোরালো ভাবেই।

দুজনকে একই ব্র্যাকেট বন্দী করা যায় আরো একটি ক্ষেত্রে। দুইজনের ব্যাটিং নিয়েই সমালোচনাটা অনেকটা একইরকম। ফুটওয়ার্ক সমস্যার কারণেই জাতীয় দলে ব্যর্থ নাঈম ও বিজয় এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। জায়গায় দাঁড়িয়েই শট খেলতে পছন্দ করেন তারা।

যার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই দুই ব্যাটারের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা সাজানোটা সহজ হয়ে যায়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিম্নমানের উইকেট আর মানসম্মত বোলার না থাকায় তাদের এই দূর্বলতাটা খুব একটা চোখে পড়ে না। অনায়াসেই করে যান একের পর এক সেঞ্চুরি।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নাঈম ও বিজয়ের এমন ফর্ম উপেক্ষা করাটাও কঠিন নির্বাচকদের জন্য। কথিত আছে এনামুল হক বিজয়কে খুব একটা পছন্দ করেননা বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। হাতুরু তাঁর প্রথম মেয়াদের এনামুলের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন এক গুরুতর অভিযোগ।

দলের জন্য নয়, নিজের জায়গা টিকিয়ে রাখতে খেলেন বিজয়;এমন অভিযোগে এনামুলকে জাতীয় দলে বিবেচনা করতেন না হাতুরুসিংহে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে রান ফোয়ারা ছোটালেও আবারো বাংলাদেশ দলে বিজয়ের প্রত্যাবর্তনটা তাই অনেকটাই কঠিন।

তবে এক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা এক নয় নাঈম শেখের জন্য। বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ টি টি-টোয়েন্টি খেলা নাঈম ওয়ানডে ক্রিকেটে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন কেবল এক ইনিংস। নাঈম তাঁর খেলা ৩৫ টি-টোয়েন্টিতে রান করে গেছেন সমান তালে। তবে সমস্যা ছিলো স্ট্রাইকরেটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাই এনানুলের চেয়ে নাঈমের জাতীয় দলে ফেরার পথটা তুলনামূলক সহজ।

এদিকে বিশ্বকাপের আর বাকি ছয় মাসেরও কম সময়। বাংলাদেশ দলে ওপেনার হিসেবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর লিটন দাসের জায়গা পাঁকা হলেও এখনো নির্ধারিত হয়নি ব্যাকআপ ওপেনার। রনি তালুকদার ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে আয়ারল্যান্ড সিরিজে দলের সাথে থাকলেও এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এই জায়গাটাতেই হয়তো যেকোনো সময় সুযোগ পেতে পারেন নাঈম শেখ।

ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট কিংবা বোলারদের মানের বিষয়টিতে হাত নেই এখানে খেলা ব্যাটারদের। তাদের কাজ রান করা। রান করেই জাতীয় দলের দাবী জোরালো করা। সেই কাজটা বেশ ভালো ভাবেই সারছেন বিজয় ও নাঈম। জাতীয় দলে নাঈম শেখ কিংবা এনামুল বিজয় আবারো ফিরতে পারেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের।

তবে দুইজনেই আপাতত নিজেদের দাবীটা জানিয়ে রাখছেন জোরালো ভাবে। পূর্ববর্তী রেকর্ডের কারণে বিজয়ের পথটা বন্ধুর হলেও বিশ্বকাপের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট নাঈমকে বাজিয়ে দেখতে চাইলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link