২০২১/২২ মৌসুমে স্বপ্নীল সময় কাটিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। জিতেছে লা লিগা, জিতেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ। শুধু শিরোপা জয় নয়, রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিটি ম্যাচে ফুটে উঠেছে খেলোয়াড়দের জেদ আর হার না মানা মানসিকতা। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুণ ফুটবলাররা দলীয় সাফল্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
সুপার কাপ ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে জয়, লা লিগায় সেভিয়ার বিপক্ষে ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জিতে নেয়া তো আছেই; ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যাবর্তনের গল্পগুলো ছিল অবিশ্বাস্য।
পিএসজি, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি কিংবা লিভারপুল – কারো বিপক্ষেই বল দখল কিংবা গোলের সুযোগ সৃষ্টিতে এগিয়ে ছিল না লস ব্ল্যাঙ্কোস। কিন্তু অদৃশ্য এক জাদুবলে মুহূর্তের মাঝে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে তারা।
দুর্দান্ত সেই মৌসুম শেষ, অর্জনে ভারি হয়ে উঠেছে ট্রফি ক্যাবিনেট। আপনি কি ভাবছেন, নতুন মৌসুমে আত্মতুষ্টিতে ভোগা অল হোয়াইটদের দেখবেন? আপনি যাই ভাবেন না কেন, আত্মতুষ্টি এই দলের মাঝে নেই। নবাগত, অভিজ্ঞ কিংবা তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর কোন খেলোয়াড়; সবার কথা এবং কাজে ফুটে উঠেছে সেটা। পুরোনো স্মৃতি ভুলে আবার নতুন করে শুরু করতে চায় তাঁরা।
১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩৬তম লা লিগা শিরোপা সহ মৌসুমের সম্ভাব্য সবকয়টি ট্রফি নিজেদের করার মিশনে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত প্রি-সিজন ক্যাম্পেইনে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে বেনজেমা, মদ্রিচরা। তাছাড়া নানারকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কার্লো আনচেলত্তিও বুঝে নিয়েছেন স্কোয়াডের শক্তিমত্তা।
যুক্তরাষ্ট্রে দলের প্রাক-মৌসুম পারফরম্যান্সে খুশিই হয়েছেন রিয়াল কোচ। এক ম্যাচ হার, একটা ড্র এবং এক ম্যাচ জিতেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তবে ফলাফলের হিসেব করেননি এই ইতালিয়ান। বরং তিনি স্কোয়াডের সদস্যের ভাল পারফরম্যান্সের দিকটায় নজর দিয়েছেন। বলাই যায়, সূদুর আমেরিকায় মাঠে শিষ্যেদের যে কাজ এবং মনোভাব দেখেছেন তাতে এই বর্ষীয়ান কোচ বেশ সন্তুষ্ট।
লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দলটিকে পরবর্তী মৌসুমের আগে যে-কেউ বিশ্রাম দিতে চাইবে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজম্যান্টের মাঝে এমন কোন ইচ্ছে নেই। এমনি কোন খেলোয়াড়ও বিশ্রামের প্রয়োজন বোধ করছেন না।
কার্লো আনচেলত্তি আরো একবার শিরোপাজয়ী মৌসুম কাটাতে চান। তিনি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বাকি ক্যারিয়ারের সদ্বব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন আবার জয়ের লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। ফেদে ভালভার্দে, ভিনি জুনিয়রের মত তরুণরাও ক্লাব কিংবদন্তিদের সাথে যোগ দিতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে রাজি।
এছাড়া অ্যান্তোনি রুডিগার এবং অরেলিয়ান শুয়েমেনির আগমনের কারণে গত মৌসুমের তুলনায় এখন রিয়াল মাদ্রিদ স্কোয়াড আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিভাবে দলীয় ভারসাম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছেন তা নিয়ে প্রকাশ্যেই কথা বলেছেন দলটির ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি।
তাছাড়া করিম বেনজেমার বাইরেও হ্যাজার্ড, আসেনসিও, রদ্রিগোর মত আক্রমণভাগে ভরসাযোগ্য বিকল্প থাকায় নতুন কারো জন্য মরিয়া নন তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যেক কোচের বুঝেছে যে তাদের এই মৌসুমে প্লেয়িং ইলেভেন এবং সাইড বেঞ্চের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কারণ দলে এমন কিছু তরুণ রয়েছে যারা ম্যাচে অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে আছে। তাছাড়া ব্যস্ত শিডিউলের দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
আপাতত পুরো দল নিশ্চিত যে, ড্রেসিংরুমে একতাবদ্ধ থাকাটাই মৌসুম শেষে লক্ষ্য অর্জনের সেরা উপায়। ইতোমধ্যে কার্লো আনচেলত্তি সব শিষ্যের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন, তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
ইতালীয় কোচের জন্য এটি খুবই বিশেষ একটি মৌসুম। এর আগেরবার আনচেলত্তি তার দায়িত্বে থাকা দ্বিতীয় মৌসুমে বরখাস্ত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে লা ডেসিমা জেতা সত্ত্বেও পরের মৌসুমে ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল। সেই দুঃসহ স্মৃতি এবার সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে চান তিনি।
কার্লো আনচেলত্তির মত সর্বজয়ী কোচের কাছে কেউই একই ভুল দ্বিতীয়বার দেখতে চাইবে না।