গল স্টেডিয়ামের চারপাশ ছেয়ে গেছে বিলবোর্ডে। সেখানে বড় করে লেখা আ লায়ন ইন হোয়াইট! সেই সিংহ হলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন, শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অনুশীলনের মধ্যমণি তিনি। নিজেদের আক্ষেপের যুবরাজকে শেষবারের মত বিদায় বলার মঞ্চ প্রস্তুত গল টেস্টে।
ম্যাথিউস — নামটা যেন এক ধৈর্যের প্রতীক। একটা মন খারাপ করা আক্ষেপের প্রতীক। শুরুর দিকে ভাবা হত, একজন প্রকৃত অলরাউন্ডার পেয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট, বল আর ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই নিজের জাত চেনাতেন।
কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে ব্যাটিংকে প্রাধান্য দিলেন, টেস্টে খেললেন কার্যত একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেই। নিচের সারিতে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের মতো হাল ধরতেন, বিপর্যয়ের মধ্যে থেকেও থাকতেন স্থীর, নি:শব্দে লড়তেন। ইনজুরির জন্য বারবার সাইডলাইনে চলে গেছেন।
হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট কখনও পিছু ছাড়েননি তাঁর। কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনে পরবর্তী যুগের অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু, ঠিক নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। বোর্ডের সাথে, কখনও কোচের সাথে নিজেকে ঝামেলায় জড়িয়েছেন বারবার।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, ওয়েলিংটনে সাত ঘণ্টার বেশি ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচালেন। সেঞ্চুরি করেই মাঠে শুয়ে দশটা পুশ-আপ দিলেন, তারপর নিজের বাইসেপ দেখিয়ে বোঝালেন— ‘যে বলে আমি আনফিট, তার জন্য জবাব এটাই।’
এর পরের টেস্টেই আবার হ্যামস্ট্রিং ছিঁড়ে চার মাস মাঠের বাইরে। নাটক এখানেই শেষ নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপে আট মাস বল না করেও প্রথম বলেই উইকেট—ম্যাথিউস যেন ক্রিকেটের চিরন্তন নাট্যকার। লঙ্কানদের স্বর্ণযুগ, ব্যর্থতা আর পুনরুত্থানের মাঝে সেতুবন্ধন গড়ে দেওয়া মানুষটার নাম অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।
চোটে-চাপেই দ্বিতীয়ার্ধের ক্যারিয়ারটা গেছে, তবু থামেননি। ২০২২ সালে পা রাখলেন ১০০ টেস্টের মাইলফলকে, আর সেখানে গিয়েই দু:খ-কাব্য রচনা করেছিলেন আরেকবার —১৯৯ রানে আউট, টেস্ট ইতিহাসের ১২তম মানুষ যিনি ডাবল সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থেমেছেন।
২০২৩ বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউটের শিকার হন। হেলমেটের স্ট্র্যাপ খুলে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রিজে আসতে পারেননি তিনি। সেই সুযোগটা হাতছাড়া করেননি বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আঞ্জেলো ম্যাথিউস এমনই ছিলেন বরাবর। একজন নীরব যোদ্ধা, কখনও বা হাস্যরসের পাত্র কিংবা স্রেফ একজন আজন্ম আক্ষেপ। তাঁর গল্পটা ধীরগতির, কিন্তু প্রতিটি লাইনে আগুন আর আক্ষেপ দিয়ে মাখা।