হতশ্রী মুস্তাফিজের নির্বিষ বোলিং

এবারের আইপিএলে দিল্লীর একাদশে আর কি সুযোগ মিলবে মুস্তাফিজের? প্রশ্নটা বোধহয় এবার করাই যায়। আগের ম্যাচে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পেয়ে খুব যে সফল ছিলেন, এমনটি নয়। বরং দিল্লীকে ম্যাচে ফেরানো মুস্তাফিজই ১৯ তম ওভারে গিয়ে ১৫ রান দিয়ে দিল্লীকে ডুবিয়েছিলেন।

তারপরও সে ম্যাচে মাঝের দুই ওভারে তাঁর বোলিংয়ে ম্যাচে ফেরায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে এ দিন মুস্তাফিজের উপর আস্থা রেখেছিল দিল্লীর টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সে আস্থার প্রতিদান দিতে রীতিমত ব্যর্থ হয়েছেন মুস্তাফিজ। পুরো ম্যাচেই অগোছালো বোলিংয়ের পসরা সাজিয়ে এ পেসার ৩ ওভারেই হজম করেছেন ৪১ রান। আগের ম্যাচে একটি উইকেট পেলেও এ দিন ছিলেন উইকেটশূন্য।

ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে এ দিন ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন দিল্লীর অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু প্রথম ওভারে বলে এসেই ডু প্লেসির সামনে অসহায় হয়ে পড়েন মুস্তাফিজ। শুরুটা ডটবল দিয়ে করলেও মুস্তাফিজের পরে দুই বলে টানা দুটি চার মারেন ডু প্লেসি। যদিও পরের ৩ বলে ২ রান দেওয়ায় কিছুটা ছন্দ ফিরে পাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন।

তবে সে ছন্দ এক নিমিষেই মিলিয়ে যায় নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে। এবার বিরাট কোহলির তোপের মুখে পড়েন মুস্তাফিজ। ঐ এক ওভারেই কোহলির কাছে একটি ছক্কা ও একটি চার হজম করেন ফিজ। কোহলির সাথে  অপর প্রান্তে থাকা লোমরারও শেষ বলে একটি ছক্কা হাঁকান। ২ ছক্কা আর ১ চারসহ এ ওভারে মুস্তাফিজ ১৯ রান দেন। ফলত, ২ ওভার শেষেই ২৯ রান দিয়ে বসেন মুস্তাফিজ।

নিজের এমন বাজে দিনে আর বোলিং প্রান্তে আসতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কা তখন জেঁকে বসেছিল। তবে ওয়ার্নার নিজেও যেন মুস্তাফিজের চেনা রূপ দেখতে মরিয়া। তাই ইনিংসের ১৯ তম ওভারে আবারো মুস্তাফিজকে বোলিং প্রান্তে আনলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দিনটা যেন হতাশাতেই মোড়ানো ছিল মুস্তাফিজের জন্য। নিজের তৃতীয় ওভারে এসেও ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটারদের সামনে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হন এ পেসার।

সে ওভারের শুরুতেই মুস্তাফিজকে চার মেরে স্বাগত জানান শাহবাজ আহমেদ। এর দুই বল বাদে আবারো ঐ শাহ্‌বাজের কাছেই বাউন্ডারি হজম করেন মুস্তাফিজ। আগের ওভারে ১৯ রান দেওয়া মুস্তাফিজ অবশ্য এ ওভার শেষ করেন ১২ রান দিয়ে। অর্থাৎ ৩ ওভারে ৪১ রান দিয়ে এ দিন নিজের বোলিং শেষ করেন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজের এমন বোলিং ফিগার কতটা বাজে ছিল তা বুঝা যায় আরেকটি তথ্যে। এ দিন ৩ ওভারের এই ১৮ টা বলের মধ্যে ৭ টি বলেই ব্যাটারদের কাছে বাউন্ডারি হজম করেন মুস্তাফিজ। আরো হতাশার বিষয় হচ্ছে, নিজের করা ৩ ওভারে মাত্র দুটি বলে তিনি ডটবল আদায় করতে পেরেছেন। বাকি ১৬ টি বলেই প্রতিপক্ষের ব্যাটার তাঁকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছে। অর্থাৎ নিজের বোলিং দিয়ে এ দিন প্রতিপক্ষকে সামান্য চাপেও ফেলতে পারেননি মুস্তাফিজ।

আগের ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়ে তবুও কিছুটা মান বাঁচানো বোলিং করেছিলেন। কিন্তু এ ম্যাচে যেন নিজেকে এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে খুঁজেই পাননি দ্য ফিজ।এমন হতশ্রী বোলিংয়ের পর এখন একটাই প্রশ্ন, এবারের আইপিএল আর সুযোগ মিলবে তো মুস্তাফিজের? আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলার জন্য আগামী ১ মে’র আগেই আইপিএল ছাড়তে হবে তাঁকে। এ সময়ের মধ্য হয়তো আর ৩/৪ টা মতো ম্যাচ পাবেন মুস্তাফিজ।

কিন্তু সেই ম্যাচগুলোতে খেলতে পারবেন কিনা সেটিই এখন শঙ্কায় পড়ে গেল।  কারণ যে আশায় মুস্তাফিজকে একাদশে ফিরিয়েছিল দিল্লী, তার কানাকড়ি প্রত্যাশাও মেটাতে পারেননি তিনি। অবশ্য গত এক বছর ধরেই তো মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সেই ধারটা অনুপস্থিত। এবার আইপিএলেও সেই একই নির্বিষ বোলিংয়ের উপস্থিতি। এমন নির্বিষ বোলিংয়ের মুস্তাফিজকে কোন দলই বা একাদশে পেতে চাইবে? এমন হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর দিল্লীও হয়তো সেই ভাবনাতেই এগোবে।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link