অমিমাংসিত রহস্যের আরেক অধ্যায়

গেল পাঁচ কোপা আমেরিকার আসরের চারটাতে ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে কখনোই শিরোপার স্বাদ পায়নি দলটি। ফলে বলা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে কোপা আমেরিকা আর্জেন্টিনার জন্যই একটা আক্ষেপের নাম। আর্জেন্টিনার মত মেসির জন্যও কোপাটা আক্ষেপেরই মঞ্চ। কারণ, তিনটি কোপার ফাইনাল হেরেছেন তিনি।

  • আর্জেন্টিনা ১ – ১ চিলি

এবারো চিলি গেঁড়ো কাটাতে পারলো না আর্জেন্টিনা। দুবার কোপার ফাইনালে চিলির কাছে ফাইনালে হারা আর্জেন্টিনা চিলিকে হারাতে পারেনি এবারো। কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুদলই খেলা শেষ করে ১-১ সমতায়। রিও ডি জেনিরোতে লিওনেল মেসির দারুণ এক ফ্রি কিকে আলবিসেলেস্তেরা এগিয়ে গেলেও এদুয়ার্দো ভার্গাসের গোলে সমতা ফেরায় চিলি।

বিশ্বকাপে বাছাইপর্বের দুই ম্যাচে দারুণ খেলা ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে বেঞ্চে রেখে দল সাজায় আর্জেন্টিনা। তাদের ৪-৩-৩ ফর্মেশনের বিপরীতে ৪-৪-২ ফর্মেশনে ম্যাচ শুরু করে চিলি। উদ্দেশ্য মাঝমাঠে একজন বেশি খেলোয়াড়ের সুবিধা নিয়ে মেসির কাছে বলের যোগান বন্ধ করা। কিন্তু খেলোয়াড়টা লিওনেল মেসি, শুরুর প্রথম কয়েক মিনিটেই চিলির খেলার ধরণ দেখেই বুঝে যান নিজের করণীয়। নিজের স্বভাবজাত পজিশন থেকে কিছুটা নিচে নেমে খেলা শুরু করতেই ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেয় আর্জেন্টিনা।

১৮ মিনিটের মাথায় দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন স্টুটগার্ডের উইংগার নিকো গঞ্জালেস, জিওভান্নি লো সেলসোর দারুণ এক ডিফেন্সচেরা পাসে চিলির ডিফেন্স উন্মুক্ত হয়ে গেলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান নিকো। কিন্তু তার দুর্বল শট ঠেকাতে বেগ পেতে হয়নি গোলরক্ষক ক্লাওডিও ব্রাভোর। এদিন চিলিকে বেশ ভুগিয়েছেন জিওভান্নি লো সেলসো। ক্লাব মৌসুমটা সাদামাটা কাটালেও জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে ফিরব পেয়েছেন দারুণভাবে। দুর্দান্ত সব পাসে চিলিয়ান ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন তিনি।

৩৩ মিনিটেই লো সেলসোকে চিলির ডি বক্সের ঠিক আগে ফেলে দেয়া হলে ফি কিক পায় আর্জেন্টিনা। দারুণ এক ফ্রি কিকে দলকে এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। জাতীয় দলে মেসি পেনাল্টি ছাড়া গোল করতে পারেন নাহ এমন সমালোচনাকে তিনি যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এই গোলের মাধ্যমে।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততাকে পেছনে ফেলে আকাশি-সাদা জার্সিতে তার গোলসংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯। প্রথমার্ধেই ঠিক আগমুহূর্তে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন লাওতারো মার্টিনেজ। কিন্তু গঞ্জালো মন্তিয়েলের ক্রসে পা লাগাতে ব্যর্থ হন তিনি। প্রথমার্ধে তাই ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই শেষ করেন মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচে সমতা ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালায় চিলি। ৫৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ভিদালকে অবৈধভাবে ফেলে দেন টাগলিয়াফিকো, ফলাফল পেনাল্টি। পেনাল্টিতে ভিদালের শট এমি মার্টিনেজ দারুণভাবে রুখে দিলেও ফিরতি শটে বল জালে জড়ান এদুয়ার্দো ভার্গাস। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা অবশ্য হ্যান্ডবলের দাবি জানিয়েছিলেন কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি রেফারি।

সমতা ফেরানোর পর চিলির গোলমুখে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে বাকিটা সময় রক্ষণ সামলে গেছে চিলিরা, তাতেই ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টাইনদের সকল প্রচেষ্টা। অতিরিক্ত সময়ের সাত মিনিট পরেও কোনো দল গোলের দেখা না পাওয়ায়, পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছেড়েছে দুই দল।

  • প্যারাগুয়ে ৩-১ বলিভিয়া

বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয়ার্ধের তিন গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে প্যারাগুয়ে।

করোনা পজিটিভ হবার কারণে বলিভিয়া তাদের নিয়মিত একাদশের পাঁচজনকে ছাড়াই মাঠে নামে, এদের মধ্যে ছিলেন তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মার্সেলো মার্টিন্স, যিনি বলিভিয়ার জার্সিতে সর্বশেষ সাত ম্যাচেই গোল করেছেন। তবে বলিভিয়া ১৯৬৩ সালের পর প্রথম প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ১০ মিনিটেই এরভিন সাভেন্দ্রার পেনালিতে এগিয়ে যাওয়ার পর।

ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা ফেরাতে মরিয়া প্যারাগুয়ে একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে বলিভিয়া রক্ষণ। ৩৫ মিনিটে পেনাল্টিও পেয়েছিল তারা, কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্টান্ট রেফারি অফসাইডের কারণে বাতিল করে দেন সে পেনাল্টি। ম্যাচে সমতা ফেরানোর সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন স্ট্রাইকার কাকু, গোলবার খালি পেয়েও বল বাইরে মারেন তিনি। প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহূর্তে বলিভিয়ান স্ট্রাইকার কুয়েলার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দশজনের দলে পরিণত হয় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরো চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করে প্যারাগুয়ে। আক্রমণের সুফল পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি, ৬২ মিনিটে কাকুর শট প্রতিপক্ষে ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে প্রতিহত হলে বলকে মাটিতে পড়বার সুযোগ না দিয়ে দারুণ এক ভলিতে দলকে সমতায় ফেরান আলেহান্দ্রো কোরেয়া।

সমতা ফেরানোর মাত্র তিন মিনিট পর, ৬৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা বলে হেড করেন প্যারাগুয়ে স্ট্রাইকার আভালোস। তার হেড গোলরক্ষক কারদানো ফিস্ট করতে ব্যর্থ হলে বল জালে জড়ান অ্যাঞ্জেল রোমেরো। ৮০ মিনিটে দারুণ এক মাটি কামড়ানো শটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল করে প্যারাগুয়ের জয় নিশ্চিত করেন অ্যাঞ্জেল রোমেরো। প্যারাগুয়ের পরবর্তী খেলা ২২ তারিখ, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link