ভাল, মন্দ ও কুৎসিত

আরও এক প্রত্যাবর্তনের গল্প। জীবনে পরাজয় হয়ত বহুবার এসে দেবে হানা তবে তাই বলে থেমে থাকা তো আর যাবে না। যারা থেমে থাকে না, তারাই একদিন নিজেদের সেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা খুঁজে নেয়। শত বঞ্চনাও তখন মিথ্যে হয়ে যায়। খারাপ দিকগুলোর উপর একটা প্রলেপ ফেলে দিতে হয় নিজের বদলের যাওয়া জীবন দিয়ে। তেমনই এক গল্পের নায়ক ইংল্যান্ডের ব্যাটার অ্যালেক্স হেলস।

নিজের আগমনী বার্তায় ধ্বংসের লীলাখেলা দেখিয়েছিলেন হেলস। লম্বা গঢ়নের হেলস পাকিস্তানের বোলারদের রীতিমত তুলো-ধুনো করে করেছিলেন ১৭১ রান। সেটাই তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সেটা অবশ্য বছর ছয়েক আগের কথা। এরপর তো পেরিয়ে গিয়েছে একরাশ নিরাশায় ঠাসা সময়। যে সময় হেলস কেবলই নিজেকে অবহেলিত হিসেবেই অনুভব করেছেন। তবে সম্পূর্ণ অবহেলা বলাটাও ভীষণরকম অন্যায়।

২০১৯ সালে যেবার ইংল্যান্ড জিতল তাদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সেবার বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। ঐতিহ্য়ে ভরপুর লর্ডসের মাঠের আরও এক ইতিহাস লেখা হয়। সেই ইতিহাসের অংশ হবার কথা ছিল হেলসের। তবে তিনি সেবার পারেননি। নির্বাসন কাটিয়ে তিনি আবার ফিরেছেন জাতীয় দলে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। খেলছেনও বেশ। একটি শিরোপা জয়ের আশা নিশ্চয়ই তিনি করছেন।

তবে এই যে, শিরোপার আশা করা অথবা শিরোপার জন্য লড়াই করা এই বিষয়গুলো গুলো সহজাত ভাবেই পেয়ে যাননি হেলস। তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে, নিজের সাথে, সময়ের সাথে, সর্বোপরি ভাগ্যের সাথে। তারকা খ্যাতি আর জৌলুশ এই দুইয়ের সঙ্গে বেপরোয়া জীবন যে খাল কেটে আনা কুমির। হেলসের ক্ষেত্রে অন্তত তাই। নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার খেসারত তাঁকে দিতে হয়েছে বারংবার। ২০১৯ সালে ঠিক সে কারণেই তিনি বাদ পড়েছিলেন দল থেকে।

বিশ্বকাপের আগে ডোপ টেস্ট পাশ করতে পারেননি হেলস। অগ্যতা তাঁকে দল থেকে ছেটে ফেলেই অগ্রসর হতে হয় ইংল্যান্ড দলকে। সে বেদনা নিশ্চয়ই পুড়িয়েছে তাঁকে ভীষণভাবে। তবে এমন ঘটনা যে সেবারই তিনি প্রথম করেছিলেন তা নয়। ২০১৭ সালে নাইটক্লাবের বাইরে মারামারি। এরপর পুলিশের তদন্ত ও জনতা রায় ঘোষণা। ইমেজ সংকটে তখন হেলস। সাথে অবশ্য বেন স্টোকসও ছিলেন। তবে সে ঘটনার পর স্টোকস নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। হেলস পারেননি।

বরং তিনি দলের মাঝেও নানান বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন। বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগানের সাথেও বেশ মতবিরোধ ছিল তাঁর। এরপর থেকে তিনি নির্বাসনে। লাল বলের ক্রিকেটের জন্য তিনি আসলে বিবেচনায় থাকতেন না সচারচর। তবে সাদা বল থেকেও আলোচনার অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত হন হেলস। নিরাশায় তিনি হারিয়ে যাওয়ার মিছিলে নাম লেখান নি। তিনি লড়াই করতে চেয়েছেন। নিজের সম্মান আর স্থান ফিরে পাওয়ার লড়াই।

 

তিনি বেছে নেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থাকা প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগেই তিনি খেলতে শুরু করেন। শুধু খেলতে থাকেন বললে খানিকটা ভুল বলা হয়। তিনি পারফর্ম করতে শুরু করেন। তবে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের পথটা তবুও তাঁর জন্য ছিল সংকীর্ণ। সেখানে ভাগ্য দেবি হলে সহায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মহূর্তে জাতীয় দলের দ্বার আরও একবার নতুন করে উন্মোচিত হল অ্যালেক্স হেলসের জন্য।

বিগ ব্যাশের মত জমজমাট ফ্রাঞ্চাইজি লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার হওয়ার পরও তিনি সংশয়ে ছিলেন জাতীয় দলে আবারও সুযোগ পাওয়া নিয়ে। কেননা তাঁর অবর্তমানে দলের ওপেনিংটা বেশ ভালভাবেই সামলে নিচ্ছিলেন জেসন রয় ও জশ বাটলার। তবে হঠাৎ করেই ফর্মহীনতায় ভুগতে শুরু করে রয়। ২০২২ সালে রয়ের ১০৪ স্ট্রাইকরেটের ১৮ গড়ের ইনিংসগুলো ইংল্যান্ড দল বিবেচনায় বড্ড বেমানান। তবে তাঁর অবর্তমানে জনি বেয়ারস্টো ছিলেন বিকল্প।

বিধিবাম বেয়ারস্টো ইনজুরির কারণে ছিটকে গেলেন বিশ্বকাপ থেকে। ব্যাস! পারফর্মার হেলসের চাইতে ভাল বিকল্প আর কেই বা হতে পারে! হেলস নিজের এই দ্বিতীয় সুযোগটা নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবেন না। তাইতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে তিনি তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। ৪০ বলে ৫২ রানের সেই ইনিংসে সাতটি চারের বিপরীতে একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন হেলস। তাঁর আর বাটলারের ওপেনিং জুটির উপর ভর করেই ভাল সূচনা পায় ইংল্যান্ড।

শেষমেশ ২০ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড। এই জয়ে নিজেদের সেমিফাইনালে যাবার আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখলো ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সমান পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে ইংলিশদের অবস্থান এখন টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link