আপনা টাইম আয়েগা

ম্যাচ শেষের চওড়া হাসি দেখা যায় ওয়াসিমের, আড়ালের সংগ্রাম কেউ দেখে না, সময়ের খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকে। ওয়াসিমরা অতীতত ভুলে যান না বলেই বর্তমানকে জয় করতে জানেন!

বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস শারজাহ’র প্যাভিলিয়নের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। কারণ, আরব আমিরাতের আকাশের কোণে জ্বলে উঠেছে এক অচেনা তারা — মুহাম্মাদ ওয়াসিম। ম্যাচ জুড়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন।

স্রষ্ঠার দরবারে তোলা দু’টি হাত! কখনও হতাশায় মুখ ঢাকছিলেন, কখনও আবেগে ভাসছিলেন। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় উদ্বেলিত হলেন। কে বলবে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মিয়াঁ চান্নু শহরে এক সময় যিনি গলি ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন তিনি।

২৩ বছর বয়সে পাকিস্তান থেকে এসেছেন আমিরাতে। পাকিস্তানের গলির টেপ টেনিস ক্রিকেট থেকে তিনি আজ আরব আমিরাত ক্রিকেটের বিস্ময়। যদিও, গলি ক্রিকেট থেকে এই পর্যন্ত আসতে তাঁকে পারি দিতে হয়েছে বিরাট এক সমুদ্র।

২০২১ সালের ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পা রাখেন নিতান্ত অজানা হিসেবেই। তবে,  সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত, টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান এই ওয়াসিমই করেছেন।

হ্যাঁ, প্রতিপক্ষ অনেক সময়েই সহযোগী দেশ। কিন্তু তিনি নিজেও তো সেই ‘সহযোগী’র অংশ। নিজের সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকেই যিনি সীমা ভাঙার সাহস রাখেন, তিনিই তো সত্যিকারের ক্রিকেটার। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫৬, গড় ৪০।

এমন ইনটেন্টের ব্যাটার বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জন্যও বড় স্বপ্ন। তরুণ আমিরাত দলটার কান্ডারি তিনি। একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। পুরো দলের জন্য অতিমানবীয় এক অনুপ্রেরণাও তিনি।

সাবেক পাকিস্তানি উইকেরটরক্ষক-অধিনায়ক রশিদ লতিফের একাডেমিতে গিয়ে বুঝলেন — টেপ টেনিস দিয়ে হবেন না, দরকার প্রকৃত শিক্ষা। দরকার পেশাদার জ্ঞান। ১৮ বছর বয়সে পেশাদার প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে বুঝলেন, পাকিস্তানের মূলধারায় তিনি টিকতে পারবেন না।

২৩ বছরে পাড়ি জমালেন আমিরাতে। ভিসা, চাকরি, অজানা শহরের ব্যস্ত রাস্তার অসংখ্য অলিগলি হেঁটে এসে এখন তিনি এখন একজন ‘ক্রিকেট যোদ্ধা’।

এই যুদ্ধটা তিনি আমিরাতের হয়ে করেন। কখনও করেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও। যে পাকিস্তান ছেড়ে এসেছেন, সেখানকার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলেছেন। খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগেও (এলপিএল)।

এই যাত্রাও সহজ ছিল না। আবুধাবি টি-টেন ক্রিকেটের ২০১৯ আসরে শিরোপার স্বাদ পান মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সের হয়ে। তবে স্রেফ স্কোয়াডের অংশ হিসেবে, মাঠে নামার সুযোগই পাননি!

তাঁর ভাগ্য বদলের শুরু ২০২১ টি-টেন লিগ থেকে। এক ম্যাচে ২৪ বলে ৭৬ করে প্রথম নজর কাড়েন। সে বছরই জাতীয় দলে অভিষেক। অভিষেকের পর চতুর্থ ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৬২ বলে অপরাজিত ১০৭ রান। ইতিহাসের শুরুও হয় সেখান থেকেই।

আরব আমিরাতের দৈত্য-বধের নায়ক তিনি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে ২৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন ওয়াসিম। আবার শারজাহতে বাংলাদেশকে হারানোর ম্যাচে ৪২ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেললেন।

ম্যাচ শেষের চওড়া হাসি দেখা যায় ওয়াসিমের, আড়ালের সংগ্রাম কেউ দেখে না, সময়ের খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকে। ওয়াসিমরা অতীতত ভুলে যান না বলেই বর্তমানকে জয় করতে জানেন!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link