এক অর্থহীন ড্রিবলারের আক্ষেপ

সর্বকালের সেরা ড্রিবলারদের তালিকা করা হলে সেখানে ওর্তেগার নাম এসে জেতে পারে। কিন্তু সে কেবলই অর্থহীন ড্রিবলিং। এই ড্রিবলিং প্রায়শই পরিণতি পেত না। প্রায়শই এর কোনো গন্তব্য থাকতো না। ফলে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থহীন আফসোসের নাম হয়ে আছেন আরিয়েল ওর্তেগা

আপনি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মত ড্রিবল করতে পারেন; কিন্তু কি পাসটা দিতে পারেন না। কিংবা আপনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত বল নিয়ে দৌড়াতে পারেন; কিন্তু লক্ষ্যে বলটা রাখতে পারেন না।

তাহলে আপনাকে আমরা কী বলবো?

হ্যাঁ, আপনি তাহলে আরও একজন আরিয়েল ওর্তেগা। সর্বকালের সেরা ড্রিবলারদের তালিকা করা হলে সেখানে ওর্তেগার নাম এসে জেতে পারে। কিন্তু সে কেবলই অর্থহীন ড্রিবলিং। এই ড্রিবলিং প্রায়শই পরিণতি পেত না। প্রায়শই এর কোনো গন্তব্য থাকতো না। ফলে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থহীন আফসোসের নাম হয়ে আছেন আরিয়েল ওর্তেগা।

একজন খেলোয়াড়কে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই সর্বোচ্চ লেভেলে নিজের সেরাটা দিতে হবে, সেটাও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে করতে হবে। আর সেরাদের বিপক্ষে লড়াই করেই করতে হবে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।

আর্জেন্টিনার ইতিহাসে অন্যতম সেরা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ছিলেন আরিয়েল ওর্তেগা। বিতর্ক, নিষেধাজ্ঞা আর অধারাবাহিকতার মাঝেও আর্জেন্টিনার ইতিহাসে অন্যতম সেরাদের একজন হিসেবেই শেষ করেছেন ক্যারিয়ার। পুরো ক্যারিয়ারে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগটাও পাননি। তিনি চেয়েছিলেন সবকিছুই অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে করতে।

তিনি পেয়েছিলেন আর্জেন্টিনার পরবর্তী ম্যারাডোনার তকমা। এমনকি ডিয়েগো ম্যারাডোনার অবসরের পর দশ নম্বর জার্সিটা ওর্তেগার গায়েই ওঠে। ‘এল বারিতো’ খ্যাত আরিয়েল ওর্তোগা ছিল ম্যারাডোনার আরেক ব্যর্থ এক কপি। আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা স্কিলফুলদের ফুটবলারদের একজন ভাবা হয় এই ওর্তেগাকে।

ওর্তেগার বয়স যখন ৫ বছর, শিশু বয়সেই তখন তাঁর সামনে ছিল রঙ আর আঁকার খাতা। নিজের ইচ্ছামতো আঁকাআঁকি করে বেড়াতেন সেখানে। দাগের বাইরে রঙ গেল কি গেল না, তাতে কোনো চিন্তা ছিল না তাঁর। মাঠের ফুটবলটাও একই ভাবে খেলেছিলেন তিনি। গোল করার চেয়ে মাঠ জুড়ে ড্রিবল করাটাই যেন তাঁর লক্ষ্য ছিল।

ওর্তেগা সব সময়ই নিজের মতো করে খেলতেন। কোচ কিংবা টিমমেট, প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকেই তিনি এতে হস্তক্ষেপ করতে দেননি। ইউরোপে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই তিনি কাটিয়েছেন ক্লাবগুলোর সাথে। সাম্পদোরিয়ার হয়ে ইন্টারন্যাসিওনালের বিরুদ্ধে তার করা সেই গোলটিকে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা গোল হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

সাম্পদোরিয়া তখন রেলিগেশন ম্যাচে লড়াই করছিল। এমন একটা লড়াই যেখানে তারা হেরে যেতেই পারতো। কিন্তু ভিনসেনজো মনটেলার হ্যাট্রিক ছাড়াও ওর্তেগার সেই দুর্দান্ত গোল যেন ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো ছিল।

পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই ওর্তেগা নিজের সাথেই নিজে লড়াই করেছেন। সুযোগ পেলেই বলকে জালে জড়াতেন, সুযোগ না পেলেও যেন প্রতিপক্ষের গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে নিজের জন্য সেই সুযোগ করে নিতেন। আর্জেন্টিনার হয়ে দুর্দান্ত কিছু গোলই এর প্রমাণ।

ওর্তেগার কাছে একাধিক সুযোগ থাকলে সব সময়ই কঠিন অপশন বেছে নিতেন। সহজসাধ্য ব্যাপারকে কঠিন করে সেখানে সফলতা পাওয়াই ছিল ওর্তেগার লক্ষ্য। ওর্তেগার একটা পুরাণ ছিল সহজকে কঠিন আর কঠিনকে সহজ করা। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে নান্দনিক ফুটবল খেলেই কামিয়েছেন সবার ভালোবাসা। অবশ্য ব্যক্তিগত কারণ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্যারিয়ার জুড়েই ছিলেন অধারাবাহিক। তবে ম্যারাডোনা পরবর্তী সময়ে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল অ্যাটাকিং এক তারকাকে।

প্রতিভা, সামর্থ্য সবকিছুই ছিল ওর্তেগার কাছে। ড্রাগ-অ্যালকোহল নেওয়াসহ হেয়ালিপনা স্বভাবেরই ছিলেন তিনি। তবে গতি, পাসিং, আর ড্রিবলিংয়ে ছিলেন সময়ের সেরাদের একজন। ক্যারিয়ারে বহুবার তিনি দেখিয়েছেন ম্যারাডোনার মতোই লড়াই করতে পারেন তিনি।

ম্যারাডোনার ছায়াও ডাকা হতো তাঁকে। তবে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের তার কাছ থেকে যে প্রত্যাশা ছিল তার সিকিভাগও যে দিয়ে পারেননি ওর্তেগা। যে সম্ভাবনা আর প্রতিভা নিয়ে এসেছিলেন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে! তার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে পারেননি ক্যারিয়ারে। ওর্তেগাকে কেউ কেউ বলেন প্রতিভাবান, কেউ বলেন অতিরিক্ত প্রতিভাবান। তবে দিন শেষে তিনি আর্জেন্টিনা ফুটবলের এক আক্ষেপ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...