মোহাম্মাদ আশরাফুলের ধুলো জমা এক রেকর্ডের সাথে মিশে আছে সিংহলিস স্পোর্টস ক্লাব স্টেডিয়াম। নিজের টেস্ট অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাকিয়েছিলেন আশরাফুল। শুধু তাই নয়, সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ডটাও দখলে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের পোস্টার বয়।
সেই ২০০১ সালের কথা। আশরাফুলের গা থেকে তখনও উবে যায়নি কৈশরের গন্ধ। তিনি এলেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে তার ডাক আসে একাদশে। কিশোর আশরাফুলের মনে তখন উন্মাদনার জলোচ্ছ্বাস। বয়স তখন তার ১৭ বছর দুই মাস। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ১৭ বছর ৬১দিন।
যথারীতি প্রচণ্ড স্নায়ুচাপ ঘিরে ধরার কথা। তবুও আশরাফুল নিজের পরিপক্কতা প্রদর্শনের জন্যে ছিলেন মড়িয়া। চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরনের মত বোলারদের বিপক্ষে নির্ভয়ে চালালেন নিজের ব্যাট। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট স্রেফ ৯০ রানে।
সেই ইনিংসেও আশরাফুলের ব্যাটে সর্বোচ্চ ২৬ রান। চামিন্দার পকেটে তিন আর মুত্তিয়ার শিকার পাঁচ উইকেট। কলম্বোর এই উইকেট যেন বাংলাদেশের মরণফাঁদ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ৫৫৫ রান। মারভান আতাপাত্তু সেদিন দ্বিশতক হাঁকিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সামনে তখন ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের হাতছানি। শেষ অবধি হয়েছেও তাই। ধ্বংসস্তুপের মাঝ থেকে এক কিশোর সেদিন জানান দিয়েছিলেন লড়াইয়ের রসদ আছে বাকি। এক নতুন দিনের ঊষার আলো হয়ে আবির্ভূত হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
মুত্তিয়া মুরালিধরনদের চোখে চোখে রেখে ১৭ বছরের কিশোর দেখালেন ব্যাটিং নৈপুণ্য। তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান কমে তার খেলা ১১৪ রানের ইনিংসের কল্যাণে। সেদিন ২১২টি বল তিনি ঢাল হয়ে মোকাবেলা করেছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামাই তো যমদূতের নিমন্ত্রণ।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও মুত্তিয়া মুরালিধরনের ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেয়েছে বাংলাদেশের পাঁচ ব্যাটার। তবে সেদিন স্পিন উইজার্ডের সামনে মাথানত করেননি আশরাফুল। তবে রুচিরা পেরেরার বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আশরাফুল। আর ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশের সকল প্রতিরক্ষা বূহ্য ভেঙে পড়ে।
তবে রেকর্ড বইয়ে ঠিকই জায়গা হয় মোহাম্মদ আশরাফুলের। ১৭ বছর ৬১ দিনে টেস্ট ম্যাচ শুরু করে ১৭ বছর ৬৩ দিনের মাথায় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন।