স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক। পাকিস্তানের সমর্থকই বেশি। অস্ট্রেলিয়ার হাতে গোনা ক জন।
মিল হলো, সবাই মাথায় হাত বা নখ কামড়াচ্ছেন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ম্যাচ পেন্ডুলামের মত দুলছিলো। শেষ পর্যন্ত হঠাৎ অতিমানব হয়ে উঠলেন ম্যাথু ওয়েড। তার দানবীয় সব ছক্কায় এক ওভার হাতে রেখেই সেমিফাইনাল জিতে গেলো অস্ট্রেলিয়া। থামলো পাকিস্তানের জয়যাত্রা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারের আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে পা দিলো অজিরা।
১৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই শাহিন আফ্রিদির বলে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। শুরুতে চাপে পড়লেও দ্বিতীয় উইকেটে মিশেল মার্শকে সঙ্গে নিয়ে অসাধারণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ডেভিড ওয়ার্নার। দু’জনে মিলে গড়েন ৩৩ বলে ৫০ রানের জুটি! এরপর দলীয় ৭২ রানে শাদাব খানের শিকার হয়ে মার্শ ফিরেন ব্যক্তিগত ২৮ রানে। শাদাব খানের আঘাতে দ্রুতই ফিরেন স্টিভ স্মিথও! ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অজিরা। এরপর কিছুদূর যেতেই শাদাব খানের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৩০ বলে ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৯ রানে আউট হন ওয়ার্নার।
৮৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ব্যাকফুটে অজিরা। তবে এখানেই শেষ নয়। নিজের স্পেলের শেষ ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে চতুর্থ শিকার বানিয়ে ম্যাচ নিজেদের আধিপত্যে নেন শাদাব। ৪ ওভারে ২৬ রানে ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। ৯৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে অজিরা।
শেষ ৫ ওভারে অজিদের প্রয়োজন ছিলো ৬২ রান। সেখান থেকে স্টোয়িনিসের দাপটে শেষ ৩ ওভারে ৩৭ রান। স্টোয়েনিস-ওয়েডের ব্যাটে দারুনভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় অজিরা। ১৯ তম ওভারে হাসান আলির ম্যাচ মিসের সুযোগ নিয়ে টানা তিন ছক্কায় অজিদের ফাইনালে পৌঁছে দেয় অজিরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু পায় পাকিস্তান। দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে দারুন সূচনা করে পাকিস্তানি ওপেনাররা। দু’জনে মিলে ওপেনিং জুটিতে করেন ৭১ রান। এরপর দলীয় ৭১ রানে ৩৪ বলে ৩৯ রান করে বাবর আউট হন। দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ানের সাথে জুটি গড়েন ফখর জামান। দু’জনে মিলে বেশ ভালোভাবেই এগোতে থাকে পাকিস্তান। একপ্রান্তে অসাধারণ ব্যাটিং করে রিজওয়ান তুলে নেন ফিফটি। হ্যাজেলউড, জাম্পারা দমাতে পারছিলেন না এই জুটিকে।
এরপর দলীয় ১৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে দু’জনে মিলে গড়েন ৭৩ রানের জুটি। ৫২ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৬৭ রান করে আউট হন রিজওয়ান। একপ্রান্তে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ফখর। তবে আরেকপ্রান্তে আসিফ আলি, শোয়েব মালিকরা এদিন ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে।
প্যাট কামিন্স, মিশেল স্টার্কদের সামনে এদিন দাড়াতে পারেনি আসিফ-মালিকরা। তবে ফখরের দুর্দান্ত ফিফটিতে বড় সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। শেষদিকে ফখরের অসাধারণ ফিনিশিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান করে পাকিস্তান। দলের পক্ষে ফখর জামান অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৫৩ রানে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে স্টার্ক সর্বোচ্চ ২ উইকেট লাভ করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
পাকিস্তান – ১৭৬/৪ (২০ ওভার); ৬৭(৫২), ৫৩(৩২)*, বাবর ৩৯(৩৪); স্টার্ক ৪-০-৩৮-২, জাম্পা ৪-০-২২-১, কামিন্স ৪-০-৩০-১।
অস্ট্রেলিয়া – ১৭৭/৫ (১৯ ওভার); ওয়েড ৪১ (১৭) ওয়ার্নার ৪৯(৩০), মার্শ ২৮(২২); শাদাব ৪-০-২৬-৪
ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: ম্যাথু ওয়েড।