ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এর হল অফ ফেমের যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। মাত্র ১০ জন ক্রিকেটারকে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। ২৪ বছরে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে। এই হল অফ ফেমের সর্বশেষ সংযোজন লিসা স্ট্যালেকার।
হল অফ ফেম থাকার পরও অস্ট্রেলিয়ান রাগবি দলের মত আজীবন সন্মাননা দেয়ার রীতি প্রচলিত নেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে। যদিও আজীবন সন্মাননাকে বলা হয় যেকোনো পর্যায়ের সর্ব্বোচ্চ সন্মাননা।
যদি কখনো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই রীতি চালু করে, তাহলে কারা এই সন্মাননা পাবেন সেটা নিয়ে তর্ক হবে না। কিন্তু হল অফ ফেমে থাকা ক্রিকেটাররা আগে এই সন্মাননা পাবার যোগ্য সেটা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু কিছু ক্রিকেটার আছে যারা আগে সন্মাননা পেলে কোনো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সমর্থক তর্ক করবেন না।
- রিচি বেনো
স্যার ডন ব্রাডম্যানের পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তা হল বিচি বেনো। শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় পারফর্মেন্স নয়, ক্রিকেটকে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও স্মরণ করা হয় তাকে। ক্রিকেটের মাধ্যমে দর্শকদের বিনোদন দেয়ার এই কাজের শুরুও তারই মাধ্যমে। পরিসংখ্যান দিয়ে বিবেচনা করলেও রিচি বেনো অবস্থান থাকবে বেশ উঁচুতে। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০ম সর্ব্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারী রিচি বেনো। ৬৮ টেস্টে ২৪৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এছাড়াও ব্যাট হাতে করেছেন ২২০১ রান। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ উইকেট এবং ২০০০ রান করার মাইলফলক স্পর্শ করেন রিচি বেনো।
অধিনায়ক হিসেবেও বেশ সফল ছিলেন তিনি। ২৮ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ১২ টেস্ট এবং ড্র করেছেন ৪ টেস্ট। তিনি যেখানে পারতেন সেখানেই করতেন আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব।
তার কল্যানেই তৈরি হয়ে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজ। এই ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজ না হলে হয়তো ক্রিকেট বিশ্বকাপ কখনই হতো না।
- স্যার ডন ব্র্যাডম্যান
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে শুধু অস্ট্রেলিয়রা নয়। বিশ্বের কোনো লোকই সম্ভবত কখনই ভুলবে না। যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য তার মত হিতে চাওয়া দিবাস্বপ্নের মত। তার মত আধিপত্য করে কোনো খেলোয়াড়ই সম্ভবত খেলেনি। কোনো খেলাতেই একক আধিপত্য দেখানো কোনো খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ক্রিকেট ব্যাট ছাড়া ৭৩ বছর এবং ওপারে পাড়ি জমানোর ২০ বছর পরেও কেউ এখনো তাকে ভুলতে পারেনি। কিংবা কেউ কখনো ভুলতে পারবেও না।
- কিথ মিলার
কিথ মিলার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ক্রিকেটের পাশাপাশি ছিলেন মিলিটারিতেও। এছাড়াও আরো অন্যান্য অনেক খেলাতেই নিয়মিত অংশগ্রহন করতেন কিথ মিলার। ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন ছিলেন কেইথ মিলার। ব্যাট হাতে করেছিলেন প্রায় ৩ হাজার রান। যেখানে ব্যাটিং গড় ছিলো ৩৬.৯৭। এছাড়াও বল হাতে নিয়েছিলেন ১৭০ উইকেট। বোলিং গড় মাত্র ২৩।
তিনি বল হাতে ইনিংস শুরু করার পাশাপাশি টপ অর্ডারেও ব্যাট করতে পারদর্শী ছিলেন। ক্রিকেটের বাইরের জীবন ছিলো বেশ উচ্ছৃঙ্খল। কিন্তু মাঠে ছিলো সঠিক পেশাদারিত্বের ছাপ। মাঠে আধিপত্য বিস্তারকারী কোনো ক্রিকেটার ছিলেন না তিনি। কিন্তু বেশ ভালোভাবেই দলের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে পারতেন মিলার।
মিলারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ছোটো হয়েছে তার মিলিটারি ক্যারিয়ারের জন্য। তিনি ছিলেন বোমারু প্লেনের পাইলট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের কারণে সংক্ষিপ্ত হয়েছে তার ক্যারিয়ার।
- রিকি পন্টিং
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক রিকি পন্টিং। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যেসব ব্যাটসম্যান বিশ্বকে শাসন কিরেছে তার মধ্যে সেরা হলেন পন্টিং। ১৯৯৫ সালে ওয়ানডে অভিষেকে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে নিজের উপিস্থিতি জানান দিয়েছিলেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন৬৮ টেস্ট। এতে করেছেন ১৩ হাজার ৩৭৮ রান। টেস্ট ব্যাটিং গড় ৫১.৮৫। টেস্টে তার নামের পাশে আছে ৪১ সেঞ্চুরি এবং ৬২ হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড।
এছাড়াও ওয়ানডেতেও করেছেন সাড়ে ১৩ হাজার রান। ব্যাটিং গড় ৪০ এর উপরে এবং সাথে স্ট্রাইক রেট ৮০ এর বেশ উপরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার নামের পাশে আছে ২৯ সেঞ্চুরি এবং ৮২ হাফ সেঞ্চুরি। ফিল্ডিংয়েও বেশ দূর্দান্ত ছিলেন রিকি পিন্টিং। পুরো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিয়েছিলেন ৩৫০ ক্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে জিরিয়েছিলেন ২ টি ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা।
- শেন ওয়ার্ন
এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬ বছরে খেলেছিলেন ১৪৫ টেস্ট। আরচেই ১৪৫ টেস্টে শিকার করেছেন ৭০৮ উইকেট। বোলিং গড় রীতিমত ২৫.৪১। পেস কন্ডিশনে বেশ স্পিনার হিসেবে বেশ কার্যকর ছিলেন শেন ওয়ার্ন। এখন পর্যন্ত টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি।
ওয়ার্ন বোলিংয়ে আসলেই ধরে নেয়া হত বিশেষ কিছু ঘটতে চলেছে। আর এই বিশেষ কিছু ঘটানোর মাধ্যমেই পরিণত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা লেগ স্পিনার। তাকে আপনি পছন্দ করেন কিংবা না করেন,সে আজীবন সন্মাননা পাবার যোগ্য।