হ্যাটট্রিক বলে ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় রোহিত শর্মা ডিনারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অক্ষর প্যাটেলকে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর অক্ষরের জন্যে নিদেনপক্ষে তিনদিনের উৎসবের আয়োজন করা উচিত গোটা ভারত দলের। ভারতের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা জয়ে অক্ষর ছিলেন ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
কিভাবে তিনি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন, তার একটা উদাহরণ হতে পারে, ফাইনালে স্যান্টনারকে হাঁকানো তার ছক্কাটি। একটু পরিস্থিতিটা মনে মনে ভেবে দেখুন- মাত্রই প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন ইন ফর্ম শ্রেয়াস আইয়ার। শ্রেয়াস ও অক্ষরের ৬১ রানের জুটিটাও কেবলই ভেঙেছে। শ্রেয়াস ফিরে যাওয়ার এক বল পরে, ওভারের শেষ বল- স্যান্টনার ডিপ স্কোয়ার লেগ, ডিপ মিড উইকেটে ফিল্ডারকে খানিকটা স্কোয়ারের দিকে চাপিয়ে রাখলেন, এছাড়াও লং অনে একটা ফিল্ডার রাখলেন।
যেন তিনি নিমন্ত্রণ দিতে চাইলেন অক্ষরকে। স্যান্টনার জানতেন অক্ষর স্লগ-সুইপ হাঁকাতে পছন্দ করেন। তাইতো তাকে ফ্লাইটেড একটা ডেলিভারিতে স্লগ-সুইপের প্রলোভন দেখালেন। সেই সময় অন্য যেকোন ব্যাটার থাকলে সে একটু পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টায়, আক্রমণাত্মক কোন শট খেলত না। কিন্তু অক্ষর ঠিকই স্লগ সুইপে ছক্কা হাঁকালেন।
এই একটি ঘটনার বিবরণে অন্তত আন্দাজ করে নেওয়া যায় যে- কেন পাঁচ নম্বরে ভারতের আস্থা ছিলেন অক্ষর প্যাটেল। অবশ্য আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি প্রায় প্রতি ম্যাচেই। ওই পজিশনে সাধারণত পালটা আক্রমণের মত পরিস্থিতি দাঁড়ায়, আবার উইকেট হারানোর মত ঝুঁকি নেওয়ারও সুযোগ খুব একটা থাকে না।
এমন পরিস্থিতিতে অক্ষরের মত ব্যাটারের প্রয়োজন যেকোন দলের। অক্ষর বিগত বছর খানেকে ব্যাট হাতে অনেক বেশি উন্নতি করেছেন। তাছাড়া তার হাতে পর্যাপ্ত শটও রয়েছে। তিনি ব্যাট চালাতেও পছন্দ করেন। পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার দৃঢ় চরিত্রের অধিকারি তিনি। ভারতের জন্যে রীতিমত আশির্বাদ হয়ে হাজির হয়েছেন অক্ষর প্যাটেল।
ফাইনালে শ্রেয়াসের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ৬১ রানের জুটি গড়ার পাশাপাশি, সেমিফাইনালে বিরাট কোহলির সাথে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছেন তিনি পাঁচ নম্বরে নেমে। এই অদেখা ইম্প্যাক্টগুলো ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জেতার পথে।
তাছাড়া মিডেল ওভারে স্পিনাররাই মূলত বোলিং করেন। তাদের বিপক্ষে অক্ষরের ব্যাটটা চলে বাকিদের তূলনায় অনেকটাই সাবলীলভাবে। এমনকি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে মিডল ওভারে স্পিনারদের বিপক্ষে স্ট্রাইকরেট ও গড়ের দিক থেকে অক্ষর ভারতের সব ব্যাটারকে ছাপিয়ে গেছেন।
৯০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটের সাথে ৪০ এর বেশি গড়ে তিনি রান করেছেন ১০-৪০ ওভারের মধ্যে স্পিনারদের বিপক্ষে। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে তিনি আগ্রাসী হওয়ার সাথে সাথে বেশ স্থিতিশীলও। বুঝে-শুনে ঝুঁকি নিতে পারেন। পেস বোলিংটাও ভালই সামলে নিতে জানেন অক্ষর। তাছাড়া ভারতের টপ অর্ডারে ডানহাতি ব্যাটারদের আধিক্য রয়েছে। পাঁচ নম্বরে অক্ষর নেমে অন্তত প্রতিপক্ষের জন্যে অসুবিধার সৃষ্টি করে।
কেননা প্রতিপক্ষ লাগাতার একই ধরণের ব্যাটারদের বিপক্ষে একই ধরণের পরিকল্পনায় বল করে যায়। হুট করে অক্ষরের অন্তর্ভুক্তি তাদের পরিকল্পনায় খানিক হলেও আঘাত করে, সেই সাথে বাইশ গজের বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করে। এদিক থেকেও ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের রাস্তাটা নিরবেই তৈরি করেছেন অক্ষর প্যাটেল।
তাছাড়া বল হাতেও বেশ ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছেন ভারতের পক্ষে। রবীন্দ্র জাদেজার সমান ৪.৩৫ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন। তবে জাদেজা প্রথম পাওয়ার প্লে-তে বোলিং না করলেও অক্ষর ঠিকই করেছেন। পাঁচ ওভার বোলিং করেছেন পাওয়ার প্লে-তে। রান দিয়েছেন ৩.২ ইকোনমিতে।
উইকেট নিয়েছেন দুইটি। হ্যাট্রিকের সুযোগটা হাত থেকে ফেলে দিয়েছিলেন তারই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেদিন বেশ রাগ ঝেড়েছিলেন রোহিত নিজের উপর। কিন্তু এখন নিশ্চয়ই তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি নিজের সেনানিদের উপর, নিজের উপর।