সাদা বলের ক্রিকেটে বাবর আজমের একাধিপত্য পুরনোই বটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে নাম্বার ওয়ান ব্যাটার রয়েছেন বেশ কিছুদিন ধরে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও রয়েছেন সেরা তিনে। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেই প্রতাপ টেনে আনলেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।
সোমবার সাকিবদের গল টাইটান্সের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জিতেছে বাবর আজমের কলম্বো স্ট্রাইকার্স। সাকিবের নিষ্প্রভ থাকার দিনে পুরো ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন বাবর আজম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি পূরণ করার মধ্য দিয়ে বলতে গেলে একাই গলকে হারিয়েছেন পাকিস্তানি এ ব্যাটার। ৫৯ বলে ১০৪ রানের ইনিংস সাজিয়েছেন ৮ চার ও ৫ ছক্কায়।
এমন দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা অনুমিতভাবেই উঠেছে বাবর আজমের হাতে। তবে এ দিন দারুণ এক কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। প্রথম এশীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছুঁয়েছেন ১০ সেঞ্চুরির কীর্তি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২২ টি সেঞ্চুরি করেছেন ক্রিস গেইল।
সেঞ্চুরির দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানেই রয়েছেন বাবর আজম। নিজের দশম সেঞ্চুরি পূরণ করতে তিনি ইনিংস খেলেছেন ২৫৪ টি। ৮ সেঞ্চুরি নিয়ে বাবরের পরে রয়েছেন মাইকেল ক্লিঙ্গার (১৯৮ ইনিংস), ডেভিড ওয়ার্নার (৩৫৫ ইনিংস), বিরাট কোহলি (৩৫৭ ইনিংস) আর অ্যারন ফিঞ্চ (৩৭৬ ইনিংস)।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭ টি করে সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ডের লুক রাইট আর নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনাক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ৬ টি করে সেঞ্চুরি রয়েছে ৭ ব্যাটারের; লোকেশ রাহুল, কুইন্টন ডি কক, রাইলি রুশো, জেসন রয়, শেন ওয়াটসন, জস বাটলার ও রোহিত শর্মা।
এলপিএলে বাবরের সেঞ্চুরির পাওয়ার দিনে শুরুতে গল্পটা অবশ্য ছিল গল টাইটান্সেরই। কলম্বোকে ১৮৯ রানের বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু অমন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেই ১১১ রানের জুটি গড়েন কলম্বোর দুই ওপেনার বাবর ও পাথুম নিসাঙ্কা। ৪০ বলে ৫৪ রান করে নিসাঙ্কা ফিরলেও বাবর পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে।
সেঞ্চুরির যাত্রায় প্রথম ৩৪ বলে ৫০ রান পূরণ করলেও পরের ৫০ রান করতে বাবর খেলেন মাত্র ২৩ টি বল। যদিও সেঞ্চুরির পরই কাসুন রাজিথার বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ ওভারে থেমেছিলেন। আর তাতে ম্যাচ হারের শঙ্কাও জেগেছিল। কিন্তু পরের ব্যাটার মোহাম্মদ নওয়াজ সে সব শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। ৫ বলে থাকা ১৪ রানের সমীকরণ তিনি টপকে যান ৪ বলেই। ১ বল হাতে রেখে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় কলম্বো স্ট্রাইকার্স।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দশম সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করা বাবর আজম অবশ্য এই সংস্করণে ব্যাটিং প্রতাপ দেখিয়েছেন আগেও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ইনিংসের ২০০০ রানের মাইল ফলক স্পর্শ করা ব্যাটার হচ্ছেন তিনি। মাত্র ৫২ ইনিংসে তিনি এ মাইল ফলক ছুঁয়েছিলেন।
তাছাড়া, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান ও অর্ধ-শতকের রেকর্ডও এ পাকিস্তানি ব্যাটারের দখলে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান সেমি ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে ব্যাট হাতে সেবার বাবর আজম ছিলেন রীতিমত অপ্রতিরোধ্য।
৬ ম্যাচের চারটিতেই পেয়েছিলেন ফিফটি। যা এক আসরে করা কোনো ব্যাটার সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ড। একই সাথে ঐ আসরে মোট ৩০৩ রান করেছিলেন বাবর আজম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা এখনো এক আসরে করা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হিসেবে অক্ষত রয়েছে।