স্রেফ অন্তর্জলের পাতায় দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে বাবর আজমের ইনিংসটিকে দলের ব্যর্থতার কারণ বলে মনে হবে। সবাই হয়ত ধরে নেবে নিজের জন্যই খেলে গেছেন পাকিস্তানের ডানহাতি ব্যাটার। মন্থর গতির একটা ইনিংসই হয়ত তিনি খেলে গেছেন বলেই ধারণা করে নেবে অধিকাংশ দর্শক। তবে বাবরের এদিনের দায়িত্বটা নিশ্চয়ই থেকে যাবে আড়ালে।
রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর খেলতে এসেছিলেন বাবর। প্রথম ম্যাচ থেকেই রংপুরের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছিলেন তিনি। এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার কার্যকর সব ইনিংস খেলে রংপুরের জয়ের কারণ হয়েছেন এর আগেও।
তবে এদিন যেন একেবারেই ভিন্ন গতির এক ইনিংস উপহার দিলেন বাবর আজম। ৪৩ বলে ৪৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। ধীর লয়ে খেলে গেছেন তিনি। মাত্র ১০৯ এর একটু বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন। আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি একটুর জন্য হয়েছে হাতছাড়া।
তবে এদিনের রংপুরের হয়ে ওপেনিংয়ে বাবরের সঙ্গী ছিলেন রনি তালুকদার। বাবরকে যেন তিনিই বাধ্য করেছিলেন একটু রয়ে সয়ে খেলতে। কেননা শুরু থেকেই একটা তাণ্ডব চালিয়েছেন রনি। পাওয়ার প্লে-এর পূর্ণ সুবিধা নিয়ে ব্যাট চালিয়ে গেছেন কোন প্রকার ভয় ছাড়াই। লেগ বিফোরে আটকা পড়ার আগে তিনি ২৪ বলে ৩৯ রান করেছিলেন রনি। প্রায় ১৬২.৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালিয়েছেন রনি।
স্বাভাবিকভাবেই আরেকটা প্রান্ত থেকে বাবরকে স্ট্রাইক রোটেশনেই মনোযোগ দিতে হয়েছে। এমনকি বাবরকে হাত খোলার সুযোগটিই দেননি সাকিব আল হাসানও। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাট করতে সমস্যা হচ্ছিল সাকিবের। তবে এদিন যেন দেখা পাওয়া গেল সেই পুরনো আগ্রাসী সাকিবকে। বহুদিন বাদে হাত খুলে চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সাকিব।
ইনিংসটা বড় হয়নি বটে। তবে মাত্র ২০ বলেই ৩৪ রান করেছেন সাকিব, স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৭০। তিনটি ছক্কায় ভুয়া ভুয়া স্লোগান ছাপিয়ে যায় সাকিব বন্দনায়। ঠিক এসব কারণেই বাবরকে খানিকটা ধীর লয়েই খেলতে হয়েছে বাবরকে। তিনিই বরং রনি আর সাকিবকে দিয়ে গেছেন ভরসা। তাদেরকে হাত খুলে খেলার পেছনের কারিগর হয়েই অ্যাংকরিং রোল প্লে করেছেন বাবর।
সেটাও পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কার্যকর পন্থা। প্রয়োজন মেনেই খেলে চলেছেন বাবর এবারের বিপিএলে। সে যাত্রায় ছয় ইনিংস খেলেই নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন সবার উপরে। ২৫১ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আপাতত বাবর আজম। গড়টা প্রায় ৫০.২০। তার পরে অবস্থান করা মুশফিকুর রহিম রয়েছেন ২২৯ রান নিয়ে।
অতএব নিজের প্রভাবটা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করে ফেলেছেন বাবর আজম। দলের জয়ের জন্য তিনি নিজেকে ভেঙে গড়তে পারেন নতুন করে। স্বাভাবিক খেলাটা খেলা ছাড়াও বদলে ফেলতে পারেন নিজের খেলার ধরণ। ঠিক এ কারণেই তো সারা বিশ্বে অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসেবেই সমাদৃত বাবর আজম।