বাইশ গজের লড়াই তো এক প্রকার যুদ্ধক্ষেত্রই বটে। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে কতশত রেকর্ড, কীর্তি আর ইতিহাস লেখা হয় তার ইয়ত্তা নেই। তবে এবার দিল্লী অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম স্বাক্ষী হলো দ্বৈরথ ভুলে আলিঙ্গনের মায়াবী এক দৃশ্যের। বিশ্বকাপ মেলালো বিরাট কোহলি আর নাভিন উল হককে।
ঘটনা খুব বেশি দিন আগের নয়। এ বছরের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু আর লখনৌ সুপারজায়ান্টস মধ্যকার এক ম্যাচে মাঠের উত্তাপে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিরাট কোহলি আর নাভিন উল হক। এ দুই ক্রিকেটারের তুমুল ঝামেলা সেবার শুধু মাঠেই আটকে থাকেনি। সেই ঘটনার জল গড়ায় বহুদূর। তরুণ আফগান বোলারকে নাকি জুতো দেখিয়েছিলেন বিরাট! এমন অভিযোগও ওঠে ভারতীয় এ ব্যাটারের বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে নাভিন উল হকও থেমে থাকেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত বিরাটকে খুঁচিয়েছিলেন এ বোলার। আর তাতে ভারতীয় সমর্থকদের চক্ষশূলও হয়ে পড়েন তিনি। তবে বিতর্কের সেই জল বিশ্বকাপ অবধি আর গড়ালো না। সব শত্রুতা যেন মিইয়ে গিয়েছে বিরাট কোহলি আর নাভিন উল হকের আলিঙ্গনে।
অবশ্য ভারতের মাটিতে ম্যাচ খেলতেই নেমেই নাভিনকে শুনতে হয়েছে কোহলি-কোহলি স্লোগান। ধর্মশালাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে বিরাট না থেকেও ছিলেন নাভিন উল হককে উদ্দেশ্য করে বলা কোহলি-কোহলি ধ্বনিতে। এমনকি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভারতের ইনিংসের সময়েও গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছিল সেই ধ্বনি। তবে সব কিছুর যেন একটা প্রশমন ঘটলো বিরাট কোহলির সৌজন্যে।
নাভিন বোলিং প্রান্তে আসতেই গোটা স্টেডিয়াম তাঁকে কটাক্ষ করতে ব্যস্ত ছিল। তখন বিরাট নিজেই সেটা থামিয়ে দিলেন। সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বোঝালেন, আমাদের মাঝের দ্বৈরথ এখন অতীত। ওকে বিরক্ত করো না। এরপর নিজেই বিরাট কোহলি হাত বাড়িয়ে দেন নাভিনের দিকে। একে অপরের পিঠ চাপড়ে দেওয়া দৃশ্য দেখল বিশ্ব। যেন মনেই হল না, মাস ছয়েক আগেও তুমুল ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন তাঁরা।
তাঁদের শেষ দৃশ্যটা আরো নজর কাড়ে। হাসিমুখে একে-অপরের দিকে ‘থাম্বস আপ’ দিয়ে দুজনেই জানান – যুুদ্ধ শেষে শান্তি ফিরেছে। এমন কিছুর পরে প্রশংসায় ভাসছেন এখন বিরাট কোহলি। মাঠের ক্রিকেটে চিরায়ত রাজকীয় ভূমিকায় থাকা বিরাট এবার ছাপ রাখলেন উদার মানসিকতারও। অবশ্য গ্রেটরা তো এমনই হয়। মাঠের পারফর্ম্যান্সের ছাপটা তাঁরা রাখেন মাঠের বাইরেও।
বিরাট-নাভিন উল হকের এমন মেলবন্ধনের দৃশ্য আটকে থাকবে বহুদিন। বিশ্বকাপের মঞ্চ বলেই এই মুহূর্তের মাহাত্ম্য যেন আরো বেশি। কারণ বিশ্বকাপই যে এ দুই ক্রিকেটার মধ্যে সব ক্ষোভ, বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটিয়ে একটা পুনর্মিলনের মঞ্চস্থ করলো।