ক্রিকেটের ব্যাড বয়েজ

ক্রিকেটটা ভদ্রলোকের খেলা বলেই পরিচিত। তবে ক্রিকেট মাঠে সবসময় কী একেবারে নিপাট ভদ্রতা বজায় থাকে? কিংবা ক্রিকেট ইতিহাসের সব ক্রিকেটারই একদম ভদ্রলোক তাও তো বলা যায় না। ব্যতিক্রম তো সব জায়গাতেই থাকে, ক্রিকেট ইতিহাসেও নিশ্চয়ই আছে।

আজ মূলত আমরা এই ব্যতিক্রম গুলোই দেখার চেষ্টা করবো। কোন ক্রিকেটাররা বিতর্ক তৈরি করতে ওস্তাদ তাঁদেরই খুঁজে বের করবো। ক্রিকেট ইতিহাসের সব বিতর্কিক ক্রিকেটারদের নিয়েই এই তালিকা।

  • মোহম্মদ আমির (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে বিতর্কের সংখ্যা কম না। তবে তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম মোহম্মদ আমির। ক্রিকেট বিশ্বের নতুন ওয়াসিম আকরাম হিসেবেও ভাবা হয়েছিল এই পেসারকে। তবে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ইচ্ছাকৃত ভাবে নো বল করার জন্য পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।

এরপর আবার ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পাকিস্তানের হয়ে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছিলেন। এরপর আবার ২০১৮ সালে হঠাতই ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। পরে আবার জানান যে তিনি ক্রিকেট খেলতে চান তবে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজম্যান্ট তাঁকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করছে। পাকিস্তানের এই পেসারের পুরো ক্যারিয়ারেই এমন আরো নানা বিতর্ক জড়িয়ে ছিল।

  • হরভজন সিং (ভারত)

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন তিনি। তবে বিতর্ক যেনো এই ক্রিকেটারের জন্য সকাল বেলার চায়ের মত। একবার অজি অলরাউন্ডার সাইমন্ডসকে ‘বানর’ বলে ডেকেছিলেন। এর জন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। আবার আইপিএলে আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার শ্রীশান্তকে থাপ্পড় মেরেছিলেন তিনি। এর কারণে আইপিএল ও ৫ ওয়ানডে ম্যাচের জন্যও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাঁকে।

  • হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও ফিল্ডার হারশেল গিবস। তবে ২০০০ সালে তিনি একবার ম্যাচ ফিক্সিং এর সাথে জড়িয়েছিলেন। বুকির কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিলেন ২০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যাবার শর্তে। যদিও সেই ম্যাচে তিনি ৭৪ রান করেছিলেন। এই কারণে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধও হয়েছিলেন তিনি। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েও একবার মাদক সেবনের কারণে বিতর্কিত হয়েছিলেন তিনি।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন তিনি। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় অদ্ভুত সব কীর্তি করে বিতর্কিত হয়েছেন। একাধিকবার ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েও আবার ফিরে এসেছেন তিনি। এছাড়া প্রেস কনফারেন্সেও নানা বিতর্কিত কথাবার্তা বলেছেন তিনি।

একবার পাকিস্তানের নারী ক্রিকেটারদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁদের হাতে জাদু আছে। তাঁরা অসাধারণ রান্না করতে পারে।’ আবার নিজের মেয়েকে কখনো ক্রিকেট খেলতে দিবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। আবার বল টেম্পারিং করেও নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে।

  • অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সত্যিকারের ব্যাড বয় তিনি। ২০০৮ সালে একবার টিম মিটিং বাদ দিয়ে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। এর কারণে তাঁকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অতিরিক্ত মদ্যপান করার জন্য তাঁকে আসরের মাঝখানেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এছাড়া এক সাক্ষাৎকারে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন ম্যাককালামকেও গালি দিয়েছিলেন তিনি।

  • মারলন স্যামুয়েলস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা পুরো ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তাঁদের সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিচিত। তবে মারলন স্যামুয়েলস তাঁর বিতর্কের কারণের বেশ পরিচিত। প্রথমে বুকিদের ম্যাচের তথ্য পাচারের জন্য ভারতের পুলিশদের নজরে পড়েছিলেন তিনি।

আইসিসি তাঁকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধও করেছিল। আবার বেন স্টোকসের সাথেও একবার তর্কে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। আবার বিগ ব্যাশে একবার শেন ওয়ার্ণের সাথে দারুণ দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন এই ক্যারিবীয়।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। মাঠের পারফর্মেন্সে কারণে এমনিতেই অনেক বেশি আলোচিত। তবে বিতর্কিত কান্ড করেও কম আলোচিত হননি। মাঠের মধ্যে অশালীন অঙ্গভঙ্গির জন্য একবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।

এছাড়া দর্শককে পেটানো সহ আরো নানা কারণে বিসিবি তাঁকে একাধিকবার শাস্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৯ সালে বুকিদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য দুই বছরের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। আবার সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ঘরোয়া ক্রিকেট লিগেও স্ট্যাম্পে লাথি মেরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সবমিলিয়ে বিতর্ক যেনো পিছুই ছাড়ছে না বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের।

  • এস শ্রীশান্ত (ভারত)

একসময় ভারতের অন্যতম সেরা পেসার ছিলেন। অনেকেই মনে করেন তিনি ভারতের অন্যতম সেরা পেসার হতে পারতেন। সেটা না হলেও ক্যারিয়ারে বিতর্ক অনেক জন্ম দিয়েছেন এই ক্রিকেটার।

২০০৬ সালে তাঁর ব্যাট ছুরে মারার জন্য প্রথম আইসিসি তাঁকে জরিমানা করে। এরপর আইপিএলে হরভজনের সাথেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। শেষে আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং এর কারণে আজীবন নিষিদ্ধ হন তিনি।

  • শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)

কোন বিতর্ক ছাড়াই তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা লেগ স্পিনার। তবে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আছে নানা বিতর্ক। ১৯৯৫ সালে বুকিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার জন্য প্রথম ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাঁকে শাস্তি দেয়।

১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে অবজ্ঞা করে কথা বলায় আইসিসি তাঁকে বিশ্বকাপের আগে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল। আবার ২০০৩ বিশ্বকাপের আগেও মাদক নেয়ার জন্য বিতর্কিত হয়েছিলেন এই পেগ স্পিনার।

  • শোয়েব আখতার (পাকিস্তান)

ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলারের নাম শোয়েব আখতার। ক্যারিয়ারের লম্বা একটি সময় টানা ১৫০ গতিতে বল করে গিয়েছেন। তবে ২০০৩ সালে বল টেম্পারিং করে প্রথম বিতর্কের জন্ম দেন। এই কারণে পরে নিষিদ্ধও হয়েছিলেন তিনি।

২০০৫ সালে ডিসিপ্লিনারি ইস্যুর কারণে তাঁকে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝ পথে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এরপর ২০০৬ সালে পুরো পাকিস্তান ক্রিকেট বিতর্কিত হয়েছিল ড্রাগের কারণে। সেই বিতর্কে কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শোয়েব আখতার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link