নিশ্চয়ই এমন একটা ফলাফলের প্রত্যাশা করেননি। করবার কথাও না। একটা দল যখন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তখন এমন হতাশাজনক পারফরমেন্স নিঃসন্দেহে আশাহত করেছে সবাইকে। অন্তত শ্রীলঙ্কার সাথে এই ম্যাচে কাগজে-কলমে বাংলাদেশই ছিল এগিয়ে।
কারণটা নতুন করে বলার নয়। শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ চারজন খেলোয়াড়ই রয়েছেন দলের বাইরে। চারজনেরই ইনজুরি। তারা আবার প্রত্যেকেই বোলার। সুতরাং দূর্বল এক বোলিং আক্রমণ নিয়েই আসলে শ্রীলঙ্কা খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে।
সেদিক বিবেচনায়, বাংলাদেশের ব্যাটারদের থেকে রান ফোয়ারার আশাই করেছিল সবাই। দলে অভিজ্ঞ ব্যাটাররা নেই। তরুণদের উপর চাপটা ছিল। তরুণরা সেই চাপটা সামলে আর নিতে পারলেন কই! চাপে একেবারে ভেঙে পড়লেন সকলে। স্রেফ নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া ব্যাট হাতে সবাই ব্যর্থ।
এমন দিন অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন নয়। তবে সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বেলে এশিয়া জয়ের যেই মশাল জ্বলছিল, সেটা দপ করেই নিভে যাওয়ার পথে। দলটা যেন বড্ড খাপছাড়া। ওপেনিংয়ে লিটন দাস ও তামিম ইকবাল নেই। সেটার খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশ। তরুণ তানজিদ হাসান তামিমকে দোষারোপ করাও অবান্তর।
তামিম ইকবালের জুতোয় পা রাখতে হয়েছে তাকে। চাপটা ছিল ভীষণ। তাছাড়া বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও তো খুব একটা নেই তার। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও দল পেতে ধুকতে হয়েছে তাকে। এমন একজন খেলোয়াড়কে আসলে এশিয়া জয়ের মিশনে নামিয়ে দেওয়াটা প্রশ্নের জন্ম দিতেই পারে। তামিমের সম্ভাবনা বা প্রতিভা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়।
তার অবশ্যই সময় লাগবে। সে সময়টা দেওয়ার মত সুযোগ অবশ্য বাংলাদেশ দলের নেই। আরেক ওপেনার নাঈম শেখের কথাই ধরা যাক। তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের গেল আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনি বড্ড অনুজ্জ্বল, দৃষ্টিকটু। ঘরোয়া ক্রিকেটটা যে এখনও বেশ দূরত্বে বসে আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, সে কথাই যেন নাঈমরা বারংবার বুঝিয়ে দেন।
তবে এশিয়া কাপের মত এক টুর্নামেন্টে নাঈমকে দলে রাখা মানে তার মধ্যে ভাল করবার সম্ভাবনা রয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তিনি আদোতে নিজেকে কখনোই মেলে ধরতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সিতে। আর তিনিই যখন ওপেনিংয়ে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকেন, তার মানে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ভাল কোন অবস্থানে নেই।
ইনজুরি আর অসুস্থতায় জর্জরিত বাংলাদেশ দল আসলে এর থেকেও ভাল করবার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু পরিকল্পনা করেছে এক, হয়েছে আরেক। রান প্রসবা উইকেটের গালগল্প হয়েছে অনেক। কিন্তু স্লো উইকেটের প্রস্তুতিতেই যেন ঘাটতি ছিল বাংলাদেশের।
উইকেটকেও আসলে পুরোপুরি দোষারোপ করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের এই ব্যাটিং লাইনআপে প্রায় প্রতিটা ব্যাটারই মিরপুরের স্লো উইকেটে খেলেছেন। সমস্যাটা আসলে একাদশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে বটে। আফিফ হোসেন ধ্রুবকে হয়ত একাদশে সুযোগ চাইলেই দিতে পারতেন টিম ম্যানেজমেন্ট। ধসের মুখে ইনিংস বড় করবার সামর্থ্য তার রয়েছে।
সমালোচনা করা বা প্রশ্ন তোলা যাবে অনেক, কিন্তু আসলে সেসবের তো শেষ নেই। প্রক্রিয়ার মধ্যেই থেকে যায় গলদ। সে নিয়ে আবার বিস্তর আলোচনা করা যায়। তাছাড়া এমন ব্যাটিং দুর্দশার কোন উত্তর থাকে না। একটা বিষয় ইতিবাচক যে বাংলাদেশের বোলাররা চেষ্টা করেছে। স্রেফ স্কোরবোর্ডে রান ছিল না পর্যাপ্ত। তাছাড়া একাদশে বোলার পছন্দের বিষয়টাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সেই যাই হোক, বাংলাদেশের এমন ক্রিকেটীয় প্রদর্শন আসলে হতাশাজনক। অন্তত ওয়ানডে সুপার লিগের তৃতীয় অবস্থানে থাকা দলটা লড়াই করবে না বা করতে পারবে না, এমনটা মেনে নেওয়া দুষ্কর। বাংলাদেশের পথটা কঠিন হয়ে গেল। রশিদ, নবী, মুজিবদের সামলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। আর বিশ্বকাপ জয়ে স্বপ্নটা বিলাসিতাই বটে।