বিশ্বকাপের আগে থেকেই টি-টোয়েন্টি দলটা ঢেলে সাজানোর কথা বলা হচ্ছিল।
বিশ্বকাপে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরে সেটা চাওয়ার সাথে বাস্তবের মিল দেখা গেল। টি-টোয়েন্টি দলে যুক্ত হলেন ছয় ছয় জন নতুন মুখ। তবুও সেই স্কোয়াড কিংবা একাদশের পরিকল্পনা নিয়ে কিছুটা ভয় ছিল। ভয়-ঢরহীন ক্রিকেট চাপা পড়ে গেল বামহাতি–ডানহাতি কম্বিনেশনের গোড়াকলে। ঘুরে ফিরে সেই একইরকম ম্যাড়মেড়ে শুরু, ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারবাহিকতা বজায় থাকলো মিরপুরেও।
তবে ধুকতে থাকা ব্যাটিং লাইন আপ আঁকড়ে ধরতে চাইলো আফিফকে। দীর্ঘসময় পরে মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা আশা দেখছিলেন আফিফকে নিয়েই। পাকিস্তানের স্পিনার নেওয়াজকে পরপর দুই বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরে আশা কিছুটা মিটিয়েছনও বটে। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
তবুও ভেঙে চৌচির হওয়া ব্যাটিং লাইন আপে বলার মত শুধু আফিফই। তবে আজকে আফিফকে দেখা গিয়েছে একটি ভিন্ন চরিত্রে। আমারা অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলাম আফিফের ইনিংস বিল্ড আপ ও স্ট্রাইক রোটেট করার ক্ষমতার জন্য তাঁকে উপরের দিকে খেলালেই আফিফের পুরোটা পাওয়ার কথা।
তবে বিশ্বকাপে আফিফকে টপ অর্ডারে খেলানোর ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলে রিয়াদ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন আফিফকে ছয় নম্বরের জন্যই পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ দল। তবে নিজের ছয় নম্বর পজিশন থেকে আজ প্রমোশন পেলেন আফিফ। তাঁকে নামানো হলো মুশফিকের চার নম্বর পজিশনে। তাঁকে উপরে খেলানো কেনো জরুরি সেটার খানিক উত্তরও দিলেন আফিফ।
তৃতীয় ওভারেই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দল যখন বিপাকে তখন নামলেন দলকে এবার লড়াইয়ের ফেরানোর জন্য। এরপর শান্তও বিদায় নিলে একপ্রান্তে একাই লড়াই চালিয়ে যান তিনি। কখনো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কখনো সোহানের সাথে মিলে দলকে তুলে আনতে চেয়েছেন। নিজের ইনিংস বিল্ড আপ ও এক্সিলারেট দুই ক্যাপাবিলিটিরই পরিচয় দিয়েছেন।
পরে অবশ্য আফিফের সাথে হাত মিলিয়েছেন নুরুল হাসান সোহানও। আজ ছয় নম্বরে নেমে দলের হালও ধরেছেন, স্লগও করেছেন। হাসান আলীর বলে ফেরার আগে ২২ বলে করেছেন ২৮ রান। ওদিকে এর আগেও নিজের ব্যাটিং সক্ষমতার টুকটাক পরিচয় দিয়েছেন শেখ মাহেদী হাসান। তবে নিয়মিত তাঁকে ব্যাটসম্যান হিসেবে কখনোই ব্যবহার করেনি বাংলাদেশ। কখনো কখনো পিঞ্চ হিটার হিসেবে উপরের দিকে নামানো হলেও মূলত স্পিনার হিসেবেই একাদশে খেলেছেন।
তবে আজ সাত নম্বরে সুযোগ পেয়ে মাহেদী উল্লাসে মাতিয়েছেন মিরপুরের দর্শকদের। তাঁর চার-ছয়ে টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পরেও খানিক স্বস্তি পেয়েছে গোটা বাংলাদেশ। ২০ বলের ইনিংসটিতে ছিল ২ টি ছয় ও ১ টি চার। ১৫০ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৩০ রান। বিশেষ করে স্কুপ করে মারা ছয়টাতেই পরিষ্কার মাহেদীর ব্যাটিং সক্ষমতা।
শেষ পর্যন্ত আফিফ, সোহান ও মাহেদীর ব্যাটে চড়ে সম্মানজনক একটা স্কোর দাঁড় করাতে পেরেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ১২৭ রানকে বেশ বড় স্কোরই মনে হচ্ছিল এই মিরপুরে। তবে সেই সিরিজ গুলোর তুলনায় এবারের উইকেট খানিকটা ব্যাটিং সহায়কই মনে হয়েছে। ফলে বাবর আজম, রিজওয়ানদের বিপক্ষে কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব না। মাঠটা যে মিরপুর, তাও এতদিন পর সেখানে ফিরেছে দর্শকের “বাংলাদেশ বাংলাদেশ” ধ্বনি।