বিবর্তনের স্রোতে অবশেষে যেন বাংলাদেশও নিজেদের যুক্ত করছে। ইংল্যান্ডেই নাকি ক্রিকেটের উৎপত্তি, আর সেই ইংল্যান্ড থেকেই এর বিস্তৃতি। আবার বিবর্তনের প্রণেতাও থ্রি লায়ন্সরা। টেস্টে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বিবর্তনের শুরুটা ইংলিশদের হাত ধরেই। এবার সেই পথেই যেন হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। অন্তত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট সেটাই ইঙ্গিত দেয়।
‘বাজবল’ তত্ত্ব প্রণেতা ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচ ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। তাঁর অধীনেই টেস্টেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটা শুরু করে ইংল্যান্ড। এবার চান্ডিকা হাতুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশও সেই তত্ত্বই আপন করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ঢাকা টেস্টে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই আয়ারল্যান্ড আঘাত হেনেছে। বিপাকে ছিল টাইগাররা।
সেখান থেকে দু’টো দিকে যাওয়ার পথ খোলা ছিল বাংলাদেশের। একটি, খানিকটা আক্রমণ করে দ্রুত কিছু রান বের করা। সেই সাথে আয়ারল্যান্ডের উপর চাপ স্থানান্তর করা। আরেকটা ছিল খানিকটা থিতু হওয়ার প্রচেষ্টা চালানো। তবে আক্রমণের পথই বেছে নিয়েছে টাইগাররা। বিশেষত সাকিব আল হাসান চড়াও হয়েছেন আইরিশ বোলারদের উপর।
তিনি ৯৪ বলে ৮৭ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় নিঃসন্দেহে দ্রুতগতিতে রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ঠিক এখানটায়ই আসলে পরিবর্তনের আলাপটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ৯২.৫৫ স্ট্রাইকরেটে খেলা সাকিবের ইনিংসটি বাংলাদেশকে দিনের শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সহয়তা করে।
সাকিব হাঁটছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দিকে। তবে সেটা আর হয়নি। তবে নতুন দিনের ঝাণ্ডা উড়িয়েই তিনি বিদায় নিয়েছিলেন। সেই ঝাণ্ডা অক্ষত রেখেছেন মুশফিকুর রহিমও। মুশফিক তবুও খানিকটা বাইশ গজ আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে পাশাপাশি রানও তুলেছেন। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। শুধু টেস্ট বলেই যে দিন পার করে দিতে হবে বলের পর বল খেলে, তেমন মানসিকতার অনুপস্থিতি ছিল বেশ স্পষ্ট।
কেননা লিটন, মিরাজরাও তো ফলাফল পাওয়ার আশায় নিজেদের ব্যাট চালিয়ে খেলেছেন। লিটন বুঝে শুনে খেলেছেন ঠিক। তবে রান তুলেছেন সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। ১০৪ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাট করেছেন। তবে কোন মাইলফলক ছুঁতে না পাওয়ার একটা আক্ষেপ নিশ্চয়ই কাজ করেছে তাঁর মাঝে। তিনি না পারলেও মিরাজ ঠিকই টেল এন্ডারদের সাথে নিয়ে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ রানের গণ্ডি পেরিয়েছেন।
প্রতিটা সেশনে হিসেব যদি করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের চিত্রটা আরেকটু স্পষ্ট হয়। আগের দিন দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং শুরু করা বাংলাদেশ প্রথম ঘন্টায় হারায় মুমিনুলের উইকেট। এরপরও মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ১৩৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। প্রায় পাঁচ রানরেটে নিজেদের সংগ্রহ বাড়িয়েছে টাইগার ব্যাটাররা।
চা বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান ছাড়িয়ে যায় ৬৪ ওভারে। ২৭ ওভারে বাংলাদেশ এই সময়ে সংগ্রহ করে ১৪৬ রান। এই সেশনে রানরেট ছিল ৫.৪০। তৃতীয় সেশনে ক্রমাগত উইকেট পড়তে থাকে। তাছাড়া শেষের দিকের ব্যাটাররা তেমন কোন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। এর ফলে আর সংগ্রহ খুব একটা বাড়েনি। তাতে অবশ্য তেমন কোন সমস্যা হয়নি। স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধই ছিল। বাংলাদেশের লিড ১৫৫।
তবে এই যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট, সেটার প্রদর্শন যে কেবল ব্যাট হাতেই ছিল তা নয়। প্রথম দিন বল হাতেও বাংলাদেশ আক্রমণই করে গেছে। একেবারে সকাল সকাল বাংলাদেশের পেসারদের হাতে বল। আর স্লিপ কর্ডন পুরোপুরি জমাট। গালি অঞ্চল অবধি ফিল্ডার রেখে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আক্রমণ শুরু করেন।
যদিও দিনশেষে সাফল্যটা এনে দিয়েছে স্পিনাররাই। আবারও প্রধান চরিত্র হয়েছেন তাইজুল ইসলাম। নিয়েছেন পাঁচখানা উইকেট। স্পিনারদেরকে সবসময়ই দু’হাত ভরে দিয়েছে মিরপুরের উইকেট। সে ধারার ব্যত্যয় ঘটেনি আইরিশদের ক্ষেত্রেও। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনও নিয়েছেন ছয়টি উইকেট। সেটাই বরং বাংলাদেশকে আভাস দিয়ে দেয়। ক্রমশ স্পিনারদের স্বর্গে পরিণত হচ্ছিল। সেই স্বর্গের পূর্ণ ফায়দাটাই লুফে নিয়েছেন সাকিব আর তাইজুল।