আর অভিযোগ নয়, অজুহাতও নয়!

আইসিসি সম্প্রতি ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মোট চারবছরের জন্য চূড়ান্ত ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) প্রকাশ করলো। এতদিন ধরে আইসিসির কাছে সমর্থক বা বোর্ডের অভিযোগ ছিল যে বাংলাদেশ খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না।

অভিযোগাটা মিথ্যাও নয়। আইসিসির এফটিপিতে এতকাল ধরে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্ধ থাকতো অল্পসংখ্যক ম্যাচ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে গত কয়েক বছর ধরে অবিরত ম্যাচ খেলার সুযোগ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। এবার তারই সফল প্রতিফলন ঘটলো এফটিপি সূচিতে।

আসন্ন চার বছরের সাইকেলে পূর্ণ সদস্যের ১২ টি দল সবমিলিয়ে ৭৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। যাকে ভাগ করা হয়েছে ১৭৩ টেস্ট, ২৮১ ওয়ানডে এবং ৩২৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো ২০২৩ সালের ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে সবথেকে বেশি ম্যাচ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদশ সব মিলিয়ে এই চার বছরে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ১৫০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে।

তার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ৩৪ টি টেস্ট ও ৫৯ টি ওয়ানডে এবং ৫৭ টি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের জন্য। তবে এফটিপির এই হিসেব কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক সিরিজের জন্য।

২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে নতুন সাইকেলে খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজে তিন ওয়ানডে ও চারটি টি- টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। বাংলাদেশের ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হওয়া এই সাইকেল শেষ হবে ২০২৭ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়া সফরের মধ্য দিয়ে।

দল হিসেবে বাংলাদেশ ওয়ানডেটা ভালো খেললেও টেস্ট ও টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের অবস্থা বেশ নাজুক। আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ ম্যাচ বরাদ্দ থাকলেও, এই সুযোগটা বাংলাদেশ নিজেদের উন্নতিতে কতটা কাজে লাগাতে পারবে সেই জায়গাটায় একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।

এতোদিন খারাপ পারফরম্যান্সের কারণ হিসেবে ম্যাচ খেলার কম সুযোগকে ক্রিকেটাররা সামনে নিয়ে আসতো। কিন্তু এবারতো দারুণ ব্যস্ত সূচি টাইগারদের সাথে। রণক্ষেত্রে একেবারে শক্তিশালী থেকে দুর্বল সবগুলো দলের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ দল। তাই আগের ‘অজুহাত’টার আর জায়গা রইলো না।

তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে আসতে যাচ্ছে বেশ বড়োসড়ো পরিবর্তন। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে আস্থার জায়গায় যারা এতোদিন ছিলেন, সেই পঞ্চপাণ্ডবদের আর মাঠে দেখা যাবেনা। মাশরাফি তো নেইই। ইতোমধ্যেই তামিম ও মাহমুদউল্লাহ ও ফরম্যাট ভেদে বিদায়ের জানান দিয়েছেন। এবং সম্ভবত আইসিসির নতুন ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগেই মুশফিক, সাকিবও অবসরের দিকেই হাঁটবেন।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বেশ টান পড়বে। দলের দায়িত্ব ইয়ংস্টারদের ঘাড়ে বর্তাবে। নতুন যুগের বাংলাদেশ দলে সাকিবের মতোন একজন সেরা অলরাউন্ডার, মাশরাফির মতোন একজন অধ্যবসায়ী পেসার, তামিম ইকবালের মতোন একজন মারকুটে ওপেনার, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো ঠাণ্ডা মাথায় মিডল অর্ডার আগলে রাখার মতোন প্রহরীর রিপ্লেসমেন্টটা বড্ড জরুরি। ভরসা করার মতো পাকাপোক্ত কজন তারকার খুব দরকার। যারা হতে পারবে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ-র যোগ্য উত্তরসূরি।

কেবল বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই সন্তুষ্ট না থাকুক বাংলাদেশ দল। বরং সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিক টাইগারদের হুংকার, জানান দিক বাংলাদেশ নামক দেশটাও বিশ্বক্রিকেটের একটি শক্তিশালী দলের নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link