তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে

‘টেস্ট ক্রিকেটের একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন আমাদের দায়িত্ব’ - ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে 'ওয়াইট ওয়াশ' হওয়ার পর এমন কথাই বলেছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। হ্যাঁ, বাংলাদেশ ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থেই টেস্ট সংস্কৃতি নেই। সাকিব যখন বলেছেন বিষয়টা তো তখন নিশ্চয়ই সত্যি।

‘টেস্ট ক্রিকেটের একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন আমাদের দায়িত্ব’ – ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়ার পর এমন কথাই বলেছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। হ্যাঁ, বাংলাদেশ ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থেই টেস্ট সংস্কৃতি নেই। সাকিব যখন বলেছেন বিষয়টা তখন নিশ্চয়ই সত্যি।

সাকিব তো প্রায় দীর্ঘ দেড় দশক কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যত উত্থান-পতন সবই তো সাকিব দেখেছেন, দেখছেন। তিনি নিশ্চয়ই আর দশটা সাধারণ ক্রিকেটারদের থেকে ভাল বুঝতে পারেন পরিস্থিতি। তবে সে এক অন্য আলাপ। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে একটা লজ্জার রেকর্ড করে ফেলেছে তা কি আপনারা জানেন?

অনেকেই হয়ত ভাবছেন এ আর নতুন কি! না মশাই এই রেকর্ড নতুন এবং বিরল। বাংলদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে দ্রুততম সময়ে ১০০ টেস্ট ম্যাচ হারা দল। মাত্র ১৩৪ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারেই বাংলাদেশ হেরে বসে আছে ১০০ খানা টেস্ট ম্যাচ। এখন তো মানছেন যে সাকিবের কথাই ঠিক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই টেস্টের সংস্কৃতি। টানা হারাটাই যদি সংস্কৃতি হয়, তাহলে সেটা মোটেও ভাল কোনো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না।

কিন্তু কেন থাকবে না? একটা দেশ প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। তবে কেন সে দেশের খেলোয়াড়দের মাঝে টেস্ট সংস্কৃতি থাকবে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া দায়। হয়ত একটা আন্দাজ করে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমেই হয়ত আসবে খেলোয়াড়দের মানসিকতার প্রশ্ন।

খেলোয়াড়দের মানসিকতায় বিশাল সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড় ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কোন ফরম্যাটে তাঁদের কেমন করা উচিৎ। আবার এমনটাও হতে পারে তাঁরা বড্ড বেশি ভয় পান। তেমনটা যদি নাই হবে তবে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ফরম্যাটে কেন ডট বলের সংখ্যাটা দৃষ্টিকটু ঠেকবে।

আবার সে ভয়ের কারণেই তাঁরা টেস্ট ক্রিকেটে মেরে খেলতে চান। অথচ, এখানে আক্রমণ কোনো কালেই ভয় জয় করার অস্ত্র নয়। অস্ত্র হল টেম্পারমেন্ট বা টেস্ট মেজাজ, যেটা আয়ত্ত্বে আসেনি আমাদের ব্যাটারদের। মানে, টেস্ট সংস্কৃতির গোড়ায় গলদ।

কিন্তু সমস্যা আরও একটা রয়েছে, ঠিক কোন বলটা খেলতে হবে আর কোনটা ছাড়তে হবে সে সিদ্ধান্তও তাঁরা নিতে পারেননা। সংস্কৃতির পরিচর্যার অভাব। আর ধৈর্য্য? তেমন কোন কিছুই যেন নেই টাইগারদের মাঝে। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তো বলেই বসেছেন, ‘আমরা এক সেশনের খুব ভাল করি। আবার পরের সেশনেই খুব বাজে করি। খেলোয়াড়েরা ধৈর্য্যশীল না।’

আচ্ছা সে যাই হোক, অনেক হল দূর্বল মানসিকতার কথা। এবার আসি খেলোয়াড়দের টেকনিকের কথায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশি ব্যাটাররা কাবু পেসে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় কুপোকাত হয়েছিল স্পিনে।

তাহলে আসলে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কোন বোলারদের ভাল খেলতে পারে? সত্যি বলতে বাংলাদেশ কোন বোলারদেরই ভাল খেলতে পারে না। মানসম্মত পেস কিংবা স্পিন যাই হোক বাংলাদেশের ব্যাটাররা খাবি খাবেই। এর পেছনের কারণ খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল দূর্বলতা।

টাইগার ব্যাটারদের অধিকাংশেরই রয়েছে বেশ কিছু টেকনিক্যাল দূর্বলতা। টেকনিক্যাল দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাউন্ড ব্যাটার হচ্ছে লিটন দাস। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি আর বাকি সবার চাইতে অন্তত সেরা। বাকিদের দূর্বলতা যেন খালি চোখেই দেখা যায়। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট-প্যাডের মাঝের গ্যাপের মতই। এমন নানানসব টেকনিক্যাল দুর্বলতায় জর্জরিত গোটা বাংলাদেশ দল।

এছাড়াও টেস্টে প্রতিনিয়ত এমন ভরাডুবির আরও একটি কারণ রয়েছে। সেটি হল সঠিক পরিকল্পনার অভাব। এই যেমন হঠাৎ করেই টেস্ট দলের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে। তবে তিনি নিশ্চয়ই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটের জন্যে।

তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে কাটিয়েছেন ভাল সময়। ‘লিস্ট এ’ টুর্নামেন্টের এক মৌসুমে হাজার রানের পুরষ্কার হিসেবেই সাদা বলের ক্রিকেটে জন্যে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। তবে হুট করেই টেস্ট দলে তাঁর অন্তর্ভূক্তির কারণের ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন।

ফিল্ডিং দূর্বলতা আরেকটা বড় কারণ। হঠাৎ আসা সুযোগগুলো টাইগার ফিল্ডাররা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। যার ফলশ্রুতিতে ম্যাচের পরিস্থিতি আরও বেশি কঠিন হয়ে যায়। এমন নানান সব কারণের লজ্জাজনক আরও একটি রেকর্ডের পাশে লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। এমন কালিমা ঝেড়ে ফেলে কবে উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...