বোলিং আক্রমণের মিউজিক্যাল চেয়ার

কোনোদিন ব্যাটিং খারাপ তো অন্যদিন বোলিং খারাপ- এই মুহূর্তে অবর্ণনীয় এক তেলেসমাতি খেলায় ব্যস্ত বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল। কোনো কোনো দিন আবার ব্যাটিং, বোলিং দুই ক্ষেত্রেই দেখা যায় দৈন্য দশা। সেই দৈন্য দশায় ম্যাচ হারের অভ্যাসটা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সমার্থক রূপ হয়ে গিয়েছে। 

ব্যাটিং ইনটেন্ট, ইম্প্যাক্ট নিয়ে কথার বুলি অনেক ছড়ানো হয়েছে। সেই তুলনায় বোলারদের নিয়ে কথা হয় কম। বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে কেমন করবে সেই সম্ভাবনার চেয়ে আশঙ্কা নিয়ে চর্চা হয় কম। অথচ ব্যাটিং লাইন আপের মত বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের পারফর্মেন্সও আশাব্যঞ্জক না। 

সাকিবকে আপাতত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাক। কারণ বাংলাদেশ দলে এখনও তিনি অটোমেটিক চয়েজ, একই সাথে সেরা পারফর্মারও। কিন্তু সাকিব আল হাসানের সাথে আরেকজন স্পিনার কে হবেন? নাসুম, মিরাজ নাকি মোসাদ্দেক।

ফরম্যাট বিবেচনায় নাসুম আহমেদ ব্যতীত বাকি দু’জন চার ওভার করার মত বোলার না। কিন্তু যে নাসুম পুরোদস্তুর স্পিনার সেই নাসুমও তো দলের অটোমেটিক চয়েস না। ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম ম্যাচের পর থেকেই আছেন একাদশের বাইরে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের এই দলে সাকিব বাদে একজনও চার ওভার করার মতো স্পিনার নেই। অথচ অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনেও ব্যাটারদের জন্য ত্রাস হতে পারেন এমন স্পিনার প্রত্যেক দলেই দেখা যাবে। এশিয়ার দলগুলোর দিকেই যদি একটু লক্ষ্য রাখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা, ভারতের চাহাল, পাকিস্তানের শাদাব খান- এরা প্রত্যেকেই এবারের বিশ্বকাপে দলের অটোমেটিক চয়েস হিসেবে খেলবে।

আর আফগান স্পিনারদের কোয়ালিটির কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ বাংলাদেশ দলে যে কোনো স্পিনার পুরো বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবে খেলবে সেই নিশ্চয়তা সামান্যটুকুও নেই। 

অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন, তাই পেসারদের প্রভাব থাকবে বেশি। সেই বিবেচনাতেও বাংলাদেশ দলের তেমন কোনো পেসারই অটোমেটিক চয়েস না। অর্থাৎ দলের একজনকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে যে কাউকে বিবেচনা করা হবে তেমন পেসারও নেই। গত বিশ্বকাপ পর্যন্তও দলের সেরা পেসার ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই অফ ফর্মে রয়েছেন তিনি। দলের একাদশ থেকেও বাদ পড়েছেন তিনি। 

পেসারদের মধ্যে কিঞ্চিত সাফল্যে সফল বলে যদি কাউকে গণ্য করা হয় সেটি তাসকিন আহমেদ। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে বেশ কার্যকরী হবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে এক মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মত সক্ষমতা কি রয়েছে? ভাল বোলিং করা আর ইম্প্যাক্টফুল বল করার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোন সময় উইকেট দরকার, আবার কোন সময় ইকোনমিক্যাল বোলিং প্রয়োজন। এ দুইয়ের মিশেলে একজন পেসারও কি বাংলাদেশ দলে আছে? উত্তর হচ্ছে, না। অথচ পাকিস্তানের হারিস রউফের দিকেই তাকানো যেতে পারে। হারিস খুব যে ইকোনমিক্যাল বোলার তা না। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি। অর্থাৎ দলের প্রয়োজনে যেটা দরকার সেটা তিনি ডেলিভার করতে পারেন। 

শরিফুল বেশ কিছু ম্যাচ ধরে ভাল করেছেন। কিন্তু তিনি তো বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই নেই। তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা অপ্রাসঙ্গিক। বাকি রইল ইবাদত, হাসান মাহমুদ, সাইফ উদ্দিন। চিন্তার বিষয় হলো, এরা কেউই একাদশে নিশ্চিত নন। অধিকাংশ ম্যাচেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয় তাদের। এবাদত বাউন্সি পিচে দুর্দান্ত হতে পারেন। তবে সেটি তার স্ট্রেন্থ দেখেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে যায়। কিন্তু মাঠের ক্রিকেট সেটি তো এক্সিকিউট করতে হয়। ইবাদত এখানেই অধারাবাহিক। 

একই কথা হাসান মাহমুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনিও তেমন ধারাবাহিক নন। আর সাইফউদ্দিনের ব্যাপারটা অনেকটা ভাগ্যের উপরেই ছেড়ে দেওয়ার মত। তার যেমন পেস তাতে বাউন্সি পিচে কার্যকর হওয়ার মত না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বাউন্ডারিও বেশ বড়।

সে হিসেবে কিছু ম্যাচে সফলও হতে পারেন তিনি। যেমনটি করে আজকের ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে দুটি উইকেট পেয়েছেন তিনি৷ কিন্তু ঠিকই ডেথ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছেন।  কার্যত একটি ওভারেই একটু খরুচে হয়ে গেলে একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ সেখানেই শেষ হয়ে যায়। তাই সাইফউদ্দিনও একাদশে অটোমেটিক চয়েজ হওয়ার মত নয়।

সাকিব আর তাসকিন, আপাতত অটোমেটিক চয়েস এ দুজনই। কিন্তু তারা মিলে তো এক ম্যাচে করতে পারবেন ৮ ওভার। বাকি ১২ ওভার ছেড়ে দিতে হবে একাদশে সুযোগ পাওয়া, না পাওয়ার দোলাচলে থাকা বোলারদের উপর। সমস্যাটা এখানেই। এবারের বিশ্বকাপে ভরাডুবি হলে সেটা অবশ্যম্ভাবীই বোলারদের কারণেই হবে।  কারণ বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগেও একাদশে খেলার মতো নির্দিষ্ট কোনো বোলিং লাইন আপ এখনও ঠিক হয়নি। 

 

   

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link