তাঁদের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ দল

শেষ হয়েছে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ মিশন। বড় লক্ষ্য নিয়ে গেলেও তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অ্যাপ্রোচ, ইন্টেন্ট সব ব্যাপারেই উঠেছে প্রশ্ন। খেলোয়াড় থেকে বোর্ড কর্মকর্তা সমালোচনার বৃত্তে আছেন সবাই।

শেষ দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেনো দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। লড়াই করার মতোন মানসিকতাটাও দেখাতে পারেননি লিটন-মুশফিকরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের এমন ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন সাবেক ক্রিকেটার সহ ধারাভাষ্যকাররাও।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচের সময় ধারাভাষ্য কক্ষে শেন ওয়াটসন বলেন, ‘আমি কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানকার উইকেট দেখে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম এই উইকেটে খেলে বাংলাদেশ বড় আসরগুলোতে ভালো করতে পারবে না । সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ খেলেই মাত্র দুইটা স্টেডিয়ামে এবং তাঁদের বেশিরভাগ ম্যাচ হয় ঢাকাতে। ঢাকার মন্থর উইকেটে খেলে আর যা ই হোক টি-টোয়েন্টিতে ভালো করা সম্ভব না।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের সময় সাবেক প্রোটিয়া তারকা ডেল স্টেইনও ধারাভাষ্য কক্ষে এখন নিয়মিত মুখ। তিনি বলেন, ‘সুপার টুয়েলভের বারোটা দলের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই মনে হয়েছে তারা কোনো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ছাড়াই খেলছে। মানে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে সবকিছু। জয়ের কোনো মানসিকতাই দেখছি না তাদের মধ্যে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ম্যাচটায় টিভি স্ক্রিনে একটা পরিসংখ্যান দেখানো হয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা পাঁচ জনের মধ্যে দুজনই বাংলাদেশের সাকিব ও মুশফিক! এই নিয়ে সাইমন ডউল বলেন, ‘মুশফিক টানা ৩৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে! অন্যান্য দেশের যারা টানা এত ম্যাচ খেলে তাদের মধ্যে একটা সাধারণ জিনিস খেয়াল করেছি সেটা হলো তারা নিজে দায়িত্ব নিয়ে দলকে জেতাতে পারতো। কিন্তু এমন কোনো গুণ মুশফিক বা রিয়াদের মধ্যে দেখছি না। আমি অবাক হই তারা প্রতি বিশ্বকাপে দলে জায়গা পাচ্ছে কিভাবে!’

২০০৭ সাল থেকে প্রতি আসরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশ নিলেও মূল পর্বে জয় পেয়েছে মাত্র একবার। ২০০৭ সালে আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুলদের দাপটে প্রথম এবং শেষবার বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এমন বাজে অবস্থার কারণটা কি?

মার্ক নিকোলাস বলেন, ‘বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে সাতটি ম্যাচ জিতেছে। যার মধ্যে মাত্র একটি জয় শক্তিশালী দলের বিপক্ষে! সেটাও প্রথম বিশ্বকাপে! বাংলাদেশের অভিজ্ঞ প্লেয়াররা এতগুলো ম্যাচ বিশ্বকাপে খেলেছে, বিশ্বকাপে তাদের পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভালো হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাদের পারফরম্যান্সেও কোনো উন্নতি নেই। ২০১৬ সালের মুশফিকের পারফরম্যান্স আর ২০২১ সালে মুশফিকের পারফরম্যান্সের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? উন্নতির কার্ভটা কোন জায়গায়?’

সাবেক ভারতীয় স্পিনার এবং বর্তমান ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিকের ভাষ্যটাও প্রায় একই। তার সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে মাইন্ডসেট কিংবা অ্যাপ্রোচে খেলতে এতো বছর পরেও সেটিতে পরিবর্তন দেখেননি সাবেক এই স্পিনার। কার্তিক বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগছে আমি যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছি, তখন তারা যে অ্যাপ্রোচে খেলতো এখনও একই অ্যাপ্রোচে খেলে। প্রাণহীন ক্রিকেট খেলছে। নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে এখন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link