সম্ভাবনা ছিল দু’টো। এক জয়, দুই ড্র। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেন সে সম্ভাবনার প্রথমটি বদলে যায়, পরাজয় এবং ড্র। অন্তত চতুর্থ দিনের ব্যাটিং সেটাই প্রমাণ করে। যেখানে টেস্ট জয়ের একটা সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে একটু টেকলিক্যালি খেলে জয়ের জন্যে যাওয়াটা স্বাভাবিক। অন্তত বড় দলগুলো তাই করে। পাঁচ দিন শেষে একটা ফলাফল নিজেদের পক্ষে এসে গেলে কার না ভাললাগে বলুন।
তবে না বাংলাদেশ যেন টেস্ট খেলতে নামেই হার এড়িয়ে, ড্র করতে। ড্র-টাই যেন আমাদের অর্জন। অথচ আমরা দুই দশক ধরে সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলি। এইতো সেদিন নিউজিল্যান্ডের মত কঠিন কন্ডিশনে পুরো পাঁচটা দিন ভাল খেলে জয় নিয়েই ফিরেছি। তবে ঘরের মাঠে কেন এমন নেতিবাচক মানসিকতা? সে প্রশ্ন তোলা থাক।
হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা শ্রীলঙ্কার সামনে। সে শঙ্কা নিয়েই চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে লঙ্কান ব্যাটাররা ব্যাট করতে নেমেছিলেন। অথচ চাইলেই লাঞ্চের পর হাত চালিয়ে রান তুলে বাংলাদেশ আরেকটু আগে তাঁদেরকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে পারত। দিনের শেষ দিকে অন্তত আরেকখানা উইকেট তুলে নেওয়া যেত। আর দ্রুত কিছু রান করা গেলে লিডও বাড়ত। তবে লাঞ্চের পরে বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন ভিন্ন পথে হাটার কথা মাথায় নিয়ে নেমেছিলেন।
পর পর দুই বলে লিটন-তামিমের উইকেট পতনে বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায়। তখনও ক্রিজে ছিলেন পাঁচ হাজার টেস্ট রান করা মুশফিকুর রহিম ও সে সাথে সাকিব আল হাসান। তাঁরা দুইজন চাপ সামলে নিতে চেয়েছিলেন এবং সে কাজটাই করেছেনও। তবে সেটা করতে গিয়ে রানের চাকা স্তিমিত হয়ে যায়। লাভটা হয় লঙ্কানদের। লিডের চাপ তেমন একটা ছিল না। আর দিনশেষে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে লংকানরা খানিক স্বস্তিতেই ছিল।
পঞ্চম দিনে শুধুমাত্র ড্রয়ের জন্যেই খেলেনি শ্রীলঙ্কা। তাঁরাও দিনের শুরুতে মেরে খেলে স্কোরবোর্ডে দ্রুত রান তুলে বাংলাদশকে আবার ব্যাটিংয়ে নামানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সে পরিকল্পনা মোতাবেক অধিনায়ক দ্বিমুথ করুণারত্নকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে ব্যাট চালিয়ে খেলতে শুরু করেন কুশল মেন্ডিস। তবে ৪৩ বলে ৪৮ রানে মেন্ডিস তাইজুলের বলে বোল্ড আউট হলে শ্রীলঙ্কার পরিকল্পনায় আসে পরিবর্তন।
তাঁরা বাকিটা সময় শুধুই ম্যাচ বাঁচানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। আর অন্যদিকে বাংলাদেশি স্পিনাররাও শেষ দিনের উইকেট থেকে খুব একটা ফায়দা আদায় করে নিতে পারেনি। তবুও তাইজুল-সাকিবের বুদ্ধিদীপ্ততায় শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার সাজঘরে ফেরে। কিন্তু ম্যাচ বাঁচাতে তখন শ্রীলঙ্কার প্রচেষ্টার শেষ নেই। দলের হাল ধরেন দীনেশ চান্দিমাল ও নিরোশান ডিকওয়েলা।
তাঁরা দুইজন টেনে নিয়ে যান লংকানদের ইনিংস। অন্যদিকে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের শরীরি ভাষায় তখনও ‘ড্র করলেই বাঁচি’ এমন এক চিত্র স্পষ্ট। তারাও যেন দিন পার করতে পারলেই খুশি। শেষমেশ চান্দিমাল ও ডিকওয়েলাকে ফেরানোর কোন উপায় আর খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের বোলাররা। লংকান ইনিংসের নব্বইতম ওভারে দুই দল ড্র মেনে নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
তবে এই ড্র নিয়ে খুব বেশি উৎফুল্ল হওয়ার কি আদৌ কিছু আছে? হ্যাঁ তামিম, মুশফিক রানে ফিরেছেন। লিটন ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন, তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় নিজেকে গড়ে তুলছেন, সে প্রমাণ রেখেছেন। আরেক তরুণ নাঈম হাসান যে সদা প্রস্তুত সেটার একটা আভাস পাওয়া গেল। এসব কিছুই আমাদের প্রাপ্তি। কিন্তু এখানেই কি শেষ? দুই দশক ধরে টেস্ট খেলে আমরা একটা ড্র, আর কিছু খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সেই খুশি থাকব?
আমরা ঠিক কবে থেকে টেস্ট জয়ের জন্যে খেলা শুরু করব? আমরা কবে টেস্ট হারের ভয় থেকে নিজেদেরকে বের করে নিয়ে আসতে পারব? এত সব প্রশ্নের জবাব আসলে দেবে কে আমাদের জানা নেই। জবাবের দরকার নেই। শরীরি ভাষায় জয়ের সে ছাপটা থাকুক প্রত্যাশা সেটুকুই।