ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থাতায় লড়াই করার পুঁজিও পেয়েছিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু ছোট পুঁজি নিয়েই ইনিংসের প্রথম তিন ওভারে ধংসযজ্ঞ চালান স্বাগতিক বোলাররা। যে আধিপত্য অব্যহত থাকে পুরো ইনিংস জুড়েই। আর সেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নাসুম আহমেদ। এই স্পিনারের ঘূর্ণিতেই সিরিজের।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ দল।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়ানডে ও টেস্টে একটি করে জয় থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে অজিদের সাথে কোন জয় ছিলো না বাংলাদেশের। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথে চারটি টি-টোয়েন্টি খেলে সব গুলোতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম ম্যাচে এসে বোলারদের নৈপুণ্যে প্রথম জয়ের দেখা পেলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।
চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন নাসুম। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন দুটি করে উইকেট। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মৃতব্যয়ী বোলিংয়ে শিকার করেন একটি করে উইকেট। তবে দল জয় পেলেও ব্যর্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছিলেন সাকিব। এছাড়া নাঈম শেখের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩০ রান।
মাত্র ১৩১ রানের পুঁজি নিয়ে বল হাতে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল সেটাই পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারেই তিন উইকেট শিকার করেন বাংলাদেশের বোলাররা। প্রথম ওভারেই মেহেদী হাসানকে রাউন্ড দা উইকেটে খেলতে এসে বোল্ড হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান অ্যালেক্স ক্যারি। এরপর দ্বিতীয় ওভারে জশ ফিলিপকে ফিরিয়ে দেন নাসুম আহমেদ।
এই স্পিনারের একটু টার্ন করে বেড়িয়ে যাওয়া বল গ্লাভসে জমিয়ে চোখের পলকে বেল ফেলে দেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। ৫ বলে ৯ রান করে ফিলিপ ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই সাকিব আল হাসানের প্রথম শিকার হয়ে বিদায় নেন মোজেস হেনরিকস। সাকিবের অফ স্টাম্পে করা ফ্লাইটেড বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন হেনরিকস।
২ বলে ১ রান করে হেনরিকস ফিরে গেলে ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এরপর চতুর্থ উইকেট ৩৮ রান যোগ করে চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন ম্যাথু ওয়েড এবং মিশেল মার্শ। তবে এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি নাসুম। এই স্পিনারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৩ বলে ১৩ রান করে ফিরে যান ওয়েড।
৪৯ রানে চার উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে আবারো জোড়া আঘাত হানেন নাসুম। প্রথমে ১২ বলে ৭ রান করা অ্যাশটন অ্যাগারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর পথের কাটা হয়ে থাকা মিশেল মার্শকেও ফিরিয়ে দেন এই স্পিনার। ৪৫ বলে ৪৫ রান করে মার্শ ফিরে যাওয়ার পরই মূলত ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।
এরপর অ্যান্ড্রু টাই ও অ্যাডাম জাম্পাকে শরিফুল ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইনিংসের শেষ বলে মিচেল স্টার্কে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দিলে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর চারটি উইকেট শিকার করেন নাসুম আহমেদ। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান দুটি এবং একটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় ছয় দিয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মিচেল স্টার্কের লেগ স্টাম্পের বাইর বল দারুণ এক ফ্লিকে উড়িয়ে মারেন নাঈম শেখ। প্রথম ওভারে স্কোরিং শট ছিল সেই একটাই। ভালো শুরু পেয়েও পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তুলতে পারেননি দুই ওপেনার। এরপর নাঈম আরো একটি বাউন্ডারি মারলেও রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকেন সৌম্য সরকার।
সংগ্রাম করেও সফল হননি সৌম্য। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে জশ হ্যাজেলউডের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়ে ফিরে যান এই ওপেনার। ৯ বলে ২ রান করে সৌম্য ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। নিজের খেলা প্রথম বলেই তিন রান নিয়ে দারুণ করেন এই অলরাউন্ডার। অপর প্রান্তে নাঈমও ছিলেন বেশ সাবলীল।
পুনারায় আক্রমণে আসা স্টার্ককে দ্বিতীয় ছয় মারেন এই ওপেনার। চমৎকার এক ফ্লিকে বল পাঠান গ্যালারিতে। তবে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাঈম। অ্যাডাম জাম্পাকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ২৯ বলে ৩০ রান করে বোল্ড হয়ে যান তিনি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১ উইকেটে ৩৩ রান। পাওয়ার প্লের ৩৬ বলের ভিতর ২৩ বলই ডট খেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
মন্থর পাওয়ার প্লের পরেও রানের গতি বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটে এসে বেশি সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। একটি ছয় মারলেও সেটা যথেষ্ঠ ছিল না। আবার ছয় মারতে গিয়েই মিড অনে ধরা পড়ে ২০ বলে ২০ রান করে ফিরে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক। এরপর রান বাড়ানোর চেষ্টায় ৪ বলে ৩ রান করে নুরুল হাসান সোহান বিদায় নিলে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এক প্রান্ত সাকিব ধরে রাখলেও দ্রুত রান তুলতে পারেননি তিনিও। ক্লান্তও মনে হচ্ছিল সাকিবকে। হ্যাজেলউডেরস্টার্ক স্লোয়ার বল লেগে টেনে খেলতে গিয়ে ৩৩ বলে ৩৬ রান করে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। তাঁর ইনিংসে ছয় না থাকলেও ছিল তিনটি চার। সাকিবের বিদায়ের পর ঝড় তুলতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান শামিম হোসেন পাটোয়ারিও। স্টার্কের ইয়র্কারের কোন জবাব ছিলো না এই তরুণের কাছে।
৩ বলে ৪ রান করে শামিম ফিরে যাওয়ার পর শেষের দিকে আফিফ হোসেনের ১৭ বলে ২৩ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৬ বলে ৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ভিতর জশ হ্যাজেলউড তিনটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মিশেল স্টার্ক দুটি ও একটি করে উইকেট পেয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৩১/৭ (ওভার: ২০; নাঈম- ৩০, সৌম্য- ২, সাকিব- ৩৬, মাহমুদউল্লাহ- ২০, সোহান- ৩, আফিফ- ২৩, শামিম- ৪, মেহেদী- ৭*) (হ্যাজেলউড- ৪-০-২৪-৩, স্টার্ক- ৪-০-৩৩-২)
অস্ট্রেলিয়া: ১০৮/১০ (ওভার: ২০; ক্যারি- ০, ফিলিপ- ৯, মার্শ- ৪৫, হেনরিকস- ১, স্টার্ক- ১৬ ) (নাসুম- ৪-০-১৯-৪, সাকিব- ৪-০-২৪-১, মেহেদী- ৪-০-২২-১, শরিফুল- ৩-০-১৯-২, মুস্তাফিজুর- ৪-০-১৬-২)
ফলাফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: নাসুম আহমেদ (বাংলাদেশ)
সিরিজ: বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।