কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হব কবে!

প্রায় অষ্টম কিংবা নবম স্প্যাম্প কল্পনা করলে যে দূরত্ব হয়, সে বরাবর বল ধেয়ে যাচ্ছে। ক্যারিবিয়ান পেসার কেমার রোচের বল। অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল। তা আবার বাইরের দিকে সুইং করে বেড়িয়ে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের সাথে ১৭০ রানের ব্যবধান তখনও। কোন প্রয়োজন ছাড়াই টাইগার ব্যাটার তামিম ইকবাল সে বলটি খেললেন।

এরপর যা হবার তাই। ব্যাটের খোঁচা লেগে বল গিয়ে জমা পড়ে ডি সিলভার দস্তানায়। মাত্র চার রানেই সাজঘরে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার। অথচ তাঁর কথা ছিল দলকে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তিনি করলেন এমন খামখেয়ালিপনা। এমন দৃশ্য যেন পুরো সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশের সঙ্গী।

তবে তামিম ইকবাল নিজেই দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংস শেষে বলেছিলেন ধৈর্য্যের কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা এমন পিচ যেখানে আপনি যা ইচ্ছে তা করতে পারবেন না। এখানে আপনাকে ধৈর্য্য নিয়েই খেলতে হবে।’ নিজের কথার প্রতিফলনই যেন করতে পারলেন না তামিম ইকবাল। তারই যেন ছিল সবচেয়ে বেশি তাড়া।

প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছিল বিশাল ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টেও খুব একটা সুবিধাজনক পজিশনে ছিল না টাইগাররা। দলের ব্যাটারদের দূর্বলতা যেন একেবারে ‘চোখের বালি’। তাঁর উপর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে পাঁচ হাজার রান করা একজন ব্যাটারের এমন ব্যাটিং প্রদর্শন নিশ্চয়ই বড্ড পীড়া দেয় ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টের সবাইকে।

বিগত কিছু সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভরাডুবি যেন স্থিরচিত্র। এই নিয়ে বাংলাদেশের নব নিযুক্ত টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আপনি যদি শেষ তিন টেস্ট খেয়াল করেন তবে মনে হবে আমাদের দূর্বলতা রয়েছে পেসে। আবার তাঁর আগের দুই টেস্টে দেখলে মনে হবে দূর্বলতা স্পিনের বিপক্ষে। আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সব সময়ই ব্যর্থ হই।’

তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় সাকিব নিজেও দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছেন অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল স্ল্যাশ করতে গিয়ে। তাঁর উইকেট জমা পড়ে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা জন ক্যাম্পবেলের হাতে। নিজেদের কথার প্রতিফলন যেন ঘটাতে পারছেন না বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। ধৈর্য্যের সমস্যা বাংলাদেশের জন্যে তো নতুন নয়। তবে সিনিয়র খেলোয়াড়দের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শটের ব্যখা আসলে কি?

প্রায় দুই যুগের মত হতে চলল আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের পদযাত্রায়। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের সাফল্য বলতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক টেস্ট জয়। হ্যাঁ, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মত পুরো পাঁচটা দিন বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ভাল খেলার নজির খুব কম। টাইগাররা ধৈর্য্যশীল নয়। তাঁরা একাগ্রতা আর মনোযোগও ধরে রাখতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এই বিষয়টি নিয়েই বেশ ক্ষুব্ধ।

তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের এই মুহূর্তের টেস্ট ক্রিকেটের চিত্র। আমরা এক সেশনের খুব ভাল করি। আবার পরের সেশনেই খুব বাজে করি। খেলোয়াড়েরা ধৈর্য্যশীল না।’

টেস্ট ক্রিকেটই ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম ফরম্যাট। এখানে প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়কে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়। তবে আফসোস আমাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা ধৈর্য্যের কথা মুখে বললেও নিজেরা মাঠে তা করে দেখাতে হচ্ছেন ব্যর্থ।

এই ধৈর্য্যহীন ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিঁড়ে কবে বাংলাদেশ নিয়মকরে টেস্টে ভাল করবে বলতে পারেন? এই উত্তর হয়ত কারওই জানা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link