সোফিয়ার চোখের জলের প্রতিশোধটা কড়ায় গন্ডায় নিলো বার্সেলোনা। ভক্তের জন্যই তো এই ক্লাব, ইয়ামাল-রাফিনহারা যেন আরও একবার দিলেন সেই কথারই প্রমাণ।
‘মোর দ্যান অ্যা ক্লাব’ মোটোটা শুধুমাত্র ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সাথেই যায়। বার্সেলোনা আসলে ফুটবল দল হিসেবেই কখনো সীমাবদ্ধ ছিল না। এটিই কাতালানদের আশা, ভরসা, শক্তির জায়গা যুগ যুগ ধরে। ফুটবল দিয়েই তারা লড়ে যাচ্ছে স্পানিশ আধিপত্য, আঞ্চলিক বিদ্বেষের বিপক্ষে। সর্মথকরাই এই ক্লাবের প্রান ভোমরা। সেই প্রামভোমরাতেই যখন আঘাত হানে কেও তখন আসলে কাতালানদের স্বভাবসুলুভ সেই লড়াকু বুক যেন আরও একবার চিতিয়ে দাঁড়ায়। হুঙ্কার দেয়, জানান দেয়, আজও ফুটবলটাই তাদের ভাষা, ঢাল এবং একইসাথে তরোয়ারও। একটা ভক্তের চোখের পানির দাম নিতে যারা স্পানিশ লিগ তো বটেই পুরো ইউরোপ তছনছ করে ফেলতে দ্বিধাবোধ করেনা।
২০২৪ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখ। রিয়াল সোসিয়েদাদের ঘরের মাঠে খেলতে যায় লিগে ১২ ম্যাচের ১১টাই জিতে উড়তে থাকা বার্সা। তবে সেদিনই প্রথম পা হড়কায় বার্সার, মাত্র ৩৩ মিনিটে তাদের জালে বল জড়ায় শেরাল্ডো বেকের। পরে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বার্সা। ম্যাচের শেষাংশে দেখা যায় কাধে কাধে মিলিয়ে বুনো উল্লাসে মত্ত সোসিয়েদাদ ভক্তরা। ঠিক মাঝখানে একা ঠাই দাঁড়িয়ে আছেন সোফিয়া, নীল-লালের বিরহে যেন প্রকট চিৎকার আটকে রাখছেন নিজের চাপা মুখে। আহা, কি করুণ দৃশ্য!
সেদিন সোফিয়ার চোখের জলেই হয়ত হঠাৎই নিভিয়ে গিয়েছিল বার্সার জয়ের স্পৃহার লাভাটা। নাহলে পরের আট ম্যাচে কেন মাত্র ছয় পয়েন্টই সংগ্রহ করতে পারবে টেবিল টপাররা। এরমধ্যে দুই মাদ্রিদ রিয়াল আর অ্যাতলেটিকো পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অনেক। একটা পর্যায়ে তো লিগ টপার রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে গিয়েছিল বার্সা।
তবে যে ক্লাবের ভিত্তিই ভক্ত, পাড় সর্মথকেরা তাদের জন্য হলেও যে ঘুরে দাঁড়াতেই হত বার্সার। বার্সা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, একের পর এক ম্যাচ প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দিয়ে ফিরে এসেছে আবারও পয়েন্ট তালিকার উপরে। বিপ্লবীদের ক্লাব যেন আরেক বিদ্রোহী নজরুলের গলাতেই গাইতে চেয়েছে, ‘আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।’ এই মন্ত্রেই হয়ত উজ্জীবিত রাফিনহা, ইয়ামালরা অবিশ্বাস্য ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লা-লিগায়। এখনো শিরোপা দৌড়ে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ ঘরোয়া সব টুর্নামেন্টেও।
রাজনৈতিক দর্শন যদি ফুটবলেও টেনে আনা যায়, তাহলে বার্সার জন্য তা হবে, ‘বার্সেলোনা ইজ আ ক্লাব বাই দ্য ফ্যান, অফ দ্য ফ্যান ,ফর দ্য ফ্যান। সোফিয়ার চোখের জল শোধ করার এর থেকে মোক্ষম উপলক্ষ হয়ত আর সম্ভব ছিল না। মাস তিনেক পর বার্সার মাটিতে খেলতে এসেছিল দলটি। শুরুতে একটা গোলও করে বসেছিল, কিন্তু স্বয়ং ফুটবল বিধাতাও হয়ত চেয়েছিলেন, সোফিয়া আজ হাসুক, তাকে হাসতেই হবে।
তাইতো গোল তো অফসাইড বাতিল হলই, মিনিট পাঁচেক পরে লালকার্ডে মাঠ ছাড়েন সোসিয়েদাদ ডিফেন্ডার এলুসটোন্ডোও। এরপরে তাদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছে বার্সা। গুনে গুনে এক হালি গোল দিয়েছে সোসিয়েদাদের জালে। সহজ জয় নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ থেকে দুই আর অপর মাদ্রিদ থেকে এক পয়েন্টে এগিয়ে আবারও টেবিলের শীর্ষে উঠলো হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
আচ্ছা, আজ কি সোফিয়া মাঠে এসেছেন? তিনি কি দেখছেন তার ক্লাব তার জন্য পুরো ইউরোপ পায়ের নিচে নামিয়ে আনতে পারে! যেখানেই থাকুন তিনি, নিশ্চয়ই মোর দ্যান অ্যা ক্লাবের আসল মানেটা তিনি আবারও বুঝেছেন। বার্সা যেন আরেকটা বুঝ পুরো বিশ্বকেই দিল, আজও ফুটবলটাই তাদের মূল অস্ত্র, সংগ্রাম আর লড়াইয়ের মুখ্য প্রতীক।