ইউরোপীয়ান ফুটবলের সেই বিখ্যাত হলুদ দূর্গ জয় করা হল না বার্সেলোনার। হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সা রীতিমত হাওয়াই গাড়িতে করে উড়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। কিন্তু প্রায় অসাধ্য সাধন তাদেরও করা হল না। জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে পরাজয় বরণ করে নিতেই হল স্প্যানিশ জায়ান্টদের।
সিগন্যাল ইদুনা পার্কে ডর্টমুন্ড নেমেছিল এক ব্রত নিয়ে, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সুচ্যগ্র মেদিনী’। ম্যাচের একেবারে প্রথম মিনিট থেকেই বুরুশিয়ার পরিকল্পনা ছিল পরিষ্কার- লড়াই হবে, নিজেদের নিঙড়ে দিয়ে, সমস্ত উজাড় করে দিয়ে লড়াই করবেন করিম আদিয়েমিরা।
ইদুনা পার্কের হলুদ স্রোতকে তারা নিরাশ করেনি। তারা একচুল পরিমাণ জায়াগা ছাড় দেয়নি বার্সেলোনাকে। কাতালানদের ফর্মের তুঙ্গে থাকা আক্রমণভাগ রীতিমত অনুপস্থিত থেকেছে পুরো নব্বই মিনিট। এমনকি ডর্টমুন্ডের মাঠে গোল হয়েছে সব মিলিয়ে চারটি, সেই চারটি গোলই এসেছে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে।
৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সেরহো গুইরাসিরা। তিনটি গোলই এসেছে এই স্ট্রাইকারের কাছ থেকে। বার্সেলোনার বিপক্ষে এই মৌসুমে তিনি একাই করেছেন পাঁচ খানা গোল। এক কথায় দূর্দান্ত ছিলেন গিনির এই স্ট্রাইকার।
তবে এ ম্যাচে হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনার বেজায় ধুকেছে। মধ্যমাঠে ছিলেন না পেদ্রি, অন্যদিকে ব্যাকলাইনে নেই আলেহান্দ্রো বালদে। এই দুই জনের অনুপস্থিতি বেশ খানিকটা বিপাকে ফেলেছে বার্সাকে। মধ্যমাঠে ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং নিয়ন্ত্রণ করবার আপ্রণ চেষ্টাই করেছেন। আক্রমণ সাজানোর পায়তারাও করে অধিকাংশ সময়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পেদ্রির অনুপস্থিতি তাকে খানিকটা অকেজো করে দিয়েছিল বটে।
অন্যদিকে এই মৌসুমে বার্সার বিখ্যাত হাই লাইন ডিফেন্স এদিনও ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু এই হাই লাইন ডিফেন্স বজায় রাখাও ভীষণ কঠিন। ফাঁকফোকর গলে ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়রা বারংবার বেড়িয়ে গেছেন। আর প্রায় প্রতিবারই বার্সাকে প্রাণপনে ঠেকাতে হয়েছে বুরুশিয়ার আক্রমণ।
মধ্যমাঠ থেকে ঠিকঠাক বল সাপ্লাই না থাকায়, রাফিনহা ও লামিন ইয়ামালের ক্রিয়েটিভিটিও নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। সব কিছু মিলিয়ে এবারের মৌসুমের খুব সম্ভবত বাজে ম্যাচটাই উপহার দিয়েছে কাতালান ক্লাবটি। আর এই কৃতীত্ব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ওই লয়্যাল ফ্যানবেজের প্রাপ্য। তারা পুরো নব্বইটা মিনিট নিজেদের দলকে বিশ্বাস করে সমর্থন জুগিয়ে গেছে। ডর্টমুন্ড সেমিফাইনালে পৌঁছাতে না পারলেও, মাঠ ভর্তি দর্শকদের নিশ্চয়ই আনন্দ দিয়েছে।
দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোল ব্যবধানে সেমিফাইনালে টিকিট কেটে ফেলেছে বার্সেলোনা। কিন্তু দুশ্চিন্তা তবুও তাদের পিছু ছাড়ছে না। বার্সেলোনার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ কিংবা ইন্টার মিলান। শক্তিমত্তার বিচারে বর্তমান ডর্টমুন্ডের চাইতে ঢের এগিয়ে এই দুই দল। তাদের বিপক্ষে ভুলচুক করবার অবকাশ কম।
হ্যান্সি নিশ্চয়ই এখন থেকে তার বই-খাতা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন পরবর্তী পরীক্ষার। ছয় বছর বাদে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে কাতালানরা। শিরোপাটা যে এবার তাদের চাই-ই চাই।