বছরখানেক আগের কথা, স্প্যানিশ সুপার কাপে রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল জিতে নিয়েছিল বার্সেলোনা। গাভি, পেদ্রিদের দাপটের সামনে একরকম অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল মাদ্রিদ জায়ান্টরা। অথচ বারো মাসের ব্যবধানে উল্টো চিত্র দেখা গেলো, নূন্যতম প্রতিরোধ গড়া ছাড়াই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে সুপার কাপের শিরোপা হারিয়ে বসেছে কাতালান দলটি।
অথচ এই একবছরে বার্সেলোনার স্কোয়াড প্রায় সমমানের রয়েছে, কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ শক্তি হারিয়েছে ফরোয়ার্ড আর ডিফেন্স দুইদিকেই। ইনফর্ম করিম বেনজেমা দল ছেড়েছিলেন মৌসুমের শুরুতে, গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া আর ডিফেন্ডার এডার মিলিটাও এসিএলের ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন। তবু রিয়াল ছেলেখেলা করলো বার্সাকে নিয়ে।
কারণটা মূলত লুকিয়ে আছে জাভি হার্নান্দেজের ট্যাকটিক্সের মাঝেই। ২০২৩ সালের সেই ফাইনালে তিনি দল সাজিয়েছিলেন ৪-২-৩-১ ছকে; যেখানে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে সার্জিও বুস্কেটস ছিলেন, বল প্লেয়িং মিডফিল্ডার হিসেবে রাখা হয়েছিল ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে। উপরের দিকে ক্রিয়েটিভ পাসের দায়িত্ব ছিল পেদ্রির কাঁধে, আর দুই সাইডলাইনে খেলেছিলেন ওসমান ডেম্বলে আর গাভি।
সবমিলিয়ে বেশ শক্তপোক্ত মাঝ মাঠ, পরিপূর্ণ বলা চলে। কিন্তু, সর্বশেষ ফাইনালে সেটার পুনরাবৃত্তি করতে পারলেন না জাভি; মেক শিফট ডিএম হিসেবে খেলিয়েছেন ডি ইয়ংকে, কিন্তু তিনি প্রতিপক্ষের কাউন্টার এটাক আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার দুই উইংয়ে রাখা হয়েছে সার্জিও রবার্তো আর ফেরান তোরেসকে; অথচ দুইজনের কেউই স্পিডি নয় ডেম্বেলে বা গাভির মত।
ফলে দানি কারভাহাল আর ফারল্যান্ড মেন্ডির উপর তেমন কোন চাপ প্রয়োগ করতে পারেননি তাঁরা। এবং সেই কারণে পেদ্রিও থ্রু পাস দিয়ে সুযোগ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস পাননি খুব একটা। ঠিক বিপরীত কাজটা করেছিল রিয়াল, স্পিডি উইঙ্গার থাকায় জুড বেলিংহ্যাম দারুণ সব ডিফেন্স চেরা পাস দিতে পেরেছেন প্রতিপক্ষের গোল মুখে।
ব্লাউগানা জার্সিধারীরা বোধহয় সবচেয়ে বড় ভুল করেছে ডিফেন্সে। রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস জুনিয়রের মত স্পিডি ফরোয়ার্ডদের বিপক্ষে তাঁরা বেছে নিয়েছিল হাই লাইন ডিফেন্সের ট্যাকটিক্স। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে যতবার থ্রু বল পেয়েছেন এই দুজনই ততবারই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা ইন্টেন্সিটি কমিয়ে না আনলে সম্ভবত আরো গোল হজম করতে হতো কাতালানদের। সেই আলোচনা করে আপাতত লাভ নেই, ভুলত্রুটি শুধরে বার্সেলোনাকে এখন মনোযোগী হতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর লা লিগার দিকে। শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা কম হলেও সর্বোচ্চ ভাল ফলাফল করার লক্ষ্য নিয়েই মৌসুমের বাকি অংশ মাঠে নামতে হবে তাঁদের।