বার্সা সমর্থকদের আনন্দের রেশটা হয়তো এখনও কাটেনি। এক সপ্তাহ হয়েছে নিজেদের লিজেন্ড প্রথমবারের মতন ঘরে তুলেছেন আন্তর্জাতিক শিরোপা। তাতে আনন্দ ছুঁয়ে গিয়েছে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের সকল মেসি ভক্তদের মনে।
বার্সা সমর্থকেরাও তা থেকে পিছিয়ে থাকবেন কেন? বার্সা সমর্থকদের জন্য সময়টা তো ডাবল আনন্দের।
গত বছরের একই সময়ে দিনকেদিন জোরদার হচ্ছিল মেসির ক্লাব ছাড়ার গুজব। মেসি এক ইন্টার্ভিউতে সরাসরি বলেও দিয়েছিলেন, এই গর্ভনিং বডির অধীনে তিনি খুশি নন। তিনি কেন, গোটা বার্সার কেউই খুশি নন। বার্তামেউ বোর্ড এমন কিছু নেই, যেটা করেনি। বার্সেলোনাকে একেবারে ভেতর থেকে যেন ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তিনি।
সুখবর ছিল তাকে সরিয়ে উপরমহলে আসা লোকটার নাম দেখে। লোকটার নাম হুয়ান লাপোর্তা। বার্সেলোনা সমর্থকদের জন্য বেশ পরিচিত এই নামটা। এর আগেও এক মেয়াদে থেকে গিয়েছেন, বার্সাকে সেরা বানানোর পেছনের অন্যতম বড় কারিগর ছিল তার প্রেসিডেন্সি।
কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে আসতে না আসতেই তাঁর উপর চেপেছে বিশাল দায়িত্ব। উপরে উপরে বার্সেলোনাকে দেখে কেউ বলতেই পারবে না সে কথা। লাপোর্তা আসতে না আসতেই পরিবর্তন এনেছেন ড্রেসিংরুমে।
এমনকি মাঠের ভেতরে বাইরেও। আগের মোউসুমগুলোতে করা ক্লুলেস ট্রান্সফারগুলো একে একে দূর হচ্ছে। বরং কোথায় কাকে দরকার সেই ভেবেই লাপোর্তা কিনে আনছেন খেলোয়াড়, তাও আবার ফ্রিতে!
মৌসুম শুরুই হতে পারেনি এখনও, বড় বড় দলগুলোর বাজারে নামতে এখনও অনেকটা দেরি, এর মধ্যেই তাদের খেলোয়াড় কেনার লিস্টটা দেখুন। সার্জিও আগুয়েরো, মেমফিস ডিপায়, এরিক গার্সিয়া, এমারসন রয়্যাল; সবমিলিয়ে তাদের দামপরেছে মাত্র ৯ মিলিয়ন ইউরো! ব্যবসায়িক দিক দিয়ে অবস্থাটা ভালোই যাচ্ছে বার্সার। কিন্তু বাধ সেঁধেছে লা লিগার স্যালারি ক্যাপ।
তার আগে স্যালারি ক্যাপ বিষয়টা জানা দরকার, স্যালারি ক্যাপ হলো প্রতিটি ক্লাবের জন্য থাকা নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ, যা তারা খেলোয়াড়দের বেতনের পেছনে খরচ করতে পারবে। এর বেশি যদি তাদের খরচ চলে যায় তবে তারা অতিরিক্ত খেলোয়াড় রেজিস্টার করতে পারবে না।
এই স্যালারি ক্যাপ উঠানামাও করতে পারে, তবে তা নির্ভর করে আগের মৌসুমে দলের অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর।যেমন ২০১৯ সালে বার্সেলোনার স্যালারি ক্যাপ ছিল মোট ৬৭১ মিলিয়ন ইউরো।
কিন্তু, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে এক বছরের মাথায় তা কমে নেমে এসেছে ৩৪৮ মিলিয়ন ইউরোতে। একটি দলের স্যালারি ক্যাপ নির্ভর করে তাদের বার্ষিক আয়ের উপর। একটি ক্লাবের মোট বার্ষিক আয়ের ৭০% হয় তাদের মোট স্যালারি ক্যাপ। তার মধ্যে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ সকলের বেতন অন্ততভুক্ত এতে।
পুরো অর্থনীতির এমন অবস্থাতে লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস সুযোগ দিয়েছিলেন দলগুলোকে নিজেরদের স্যালারি ক্যাপ গুছিয়ে নেওয়ার। যে কারণে আগের মৌসুমে নিজেদের স্যালারি ক্যাপ ছাড়িয়ে গেলেও কোনো সমস্যায় পরতে হয়নি বার্সেলোনাকে।
কিন্তু এই মৌসুম থেকে সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না কোনো দলকে। মাঠে দর্শক ফিরছে এই মৌসুম থেকেই। সে অনুযায়ী দ্রুতই নিজেদের সামলে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে লা লিগা বোর্ড। আর এতেই দূর্যোগের ঘনঘটা বার্সেলোনার সামনে।
বার্সেলোনা দলে এখন আর মেসি নেই, অন্তত কাগজে-কলমে নেই। এতে করে বিশাল বেতনের বোঝা নেমে গেলেও তা শান্তি দিতে পারেনি বার্সেলোনাকে। এখনও বছরে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো নেনে গ্রিজম্যান, ডি ইয়ং পান ২০ মিলিয়ন। উমতিতি, ডেম্বেলের মতন খেলোয়াড়; যাদের বেশিরভাগ দিনই কাটে বেঞ্চে পান ১২ মিলিয়ন। এছাড়াও বেশি বেতনে তরুণ খেলোয়াড়দের আনা তো আছেই।
সব মিলিয়ে বিশাল বেতনের বোঝা সামলাতে ব্যর্থ বার্সেলোনা। যে কারণে এই মৌসুমে ইতোমধ্যে চারটি সাইনিং করিয়ে ফেললেও কোনো লাভ হচ্ছে না তাদের। কারণ দিনশেষে কাউকেই দলে রেজিস্টার করতে সক্ষম হচ্ছে না তারা।
বার্সেলোনার হাতে এখন সর্বসাকল্যে সময় আছে ২৫ দিন। এই ২৫ দিনের মধ্যে বিশাল স্যালারি নিয়ে বসে থাকা খেলোয়াড়দের সরিয়ে নতুন খেলোয়াড় আর নিজেদের অধিনায়ককে দলের অন্যর্ভুক্ত না করতে পারলে কপালে শনিই লেখা আছে লাপোর্তার।