হীরক শূন্যের হতাশা

‘ডাক’ শব্দটা তো জানেন।

হাস নয়, ক্রিকেটের শূন্য রানে আউটকে ডাক বলা হয়। কিন্তু ডায়মন্ড ডাক ব্যাপারটা কী?

ক্রিকেটে ডায়মন্ড ডাক শব্দটা খুব কমই পরিচিত। এ ধরনের আউটও বেশ কম দেখা যায়। এই আউটে ব্যাটসম্যান কোনো বল না খেলেই শূন্য রানেই বিদায় নেন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঝুঁকিতে দ্রুত রান নেওয়াটা সাধারণ ব্যাপার তাই এই আউটটাও টি-টোয়েন্টি বেশ সাধারণ। কিন্তু ওয়ানডের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে রান না নিলেও চলে। তবুও বেশ কিছু ক্রিকেটার ওয়ানডেতে এই ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়েছেন। চলুন দেখে নেই তাঁর মধ্যে ৬ জন জনপ্রিয় ব্যাটসম্যানকে যারা এমন দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন।

  • মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ডের বেশ অভিজ্ঞ ওপেনার মার্টিন গাপটিল ওয়ানডেতে এই ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়েছেন। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি এই ডায়মন্ড ডাকে আউট হন।

২০৯ রানের টার্গেটে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ব্যাট করতে নামেন রবার্ট নিকোল ও মার্টিন গাপটিল। কোনো বল না খেলেই রান আউটের শিকার হয়ে ফেরত যান গাপটিল। যদিও সেই ম্যাচে কিউইরা জয় পায় তবে সেই ম্যাচে ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়েছিলেন গাপটিল।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড)

সাবেক কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একবার ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ভারতের বিপক্ষে এটা ঘটে! প্রথমে ব্যাট করে শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

মাত্র ১৩০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা। ল্যু ভিনসেন্টের সাথে ক্রিজে ছিলেন ম্যাককালাম। ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হয়ে ডায়মন্ড ডাকে আউট হন ম্যাককালাম এবং নিউজিল্যান্ড সেই ম্যাচে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

  • সনাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

ব্যাট হাতে ২২ গজে তাণ্ড চালানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন সনাথ জয়াসুরিয়া। এই লঙ্কান কিংবদন্তিও আছেন ওয়ানডেতে ডায়মন্ড ডাকের তালিকায়। আর তাঁকে সেই দু:স্বপ্ন উপহার দেয় বাংলাদেশ দল।

তখন ২০০৯ সাল। ঢাকার শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশিয় সিরিজের খেলছিলো লঙ্কানরা। মাত্র ১৫২ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ! জবাবে সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জয়সুরিয়াকে তুলে নেন বাংলাদেশের বোলাররা। উপুল থারাঙ্গা ও জয়াসুরিয়া নামেন ওপেনিংয়ে। আর কোনো বল না খেলেই রান আউটের শিকার হয়ে ডায়মন্ড ডাকে আউট হন জয়সুরিয়া।

ম্যাচটা জিততে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু, শেষের দিকে মুত্তিয়া মুরালিধরণের ১৬ বলে খেলা ৩৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে ছিটকে দেয়।

  • সাঈদ আনোয়ার (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ওপেনারদের এখন সাঈদ আনোয়ার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একবার নয় দুইবার তিনি ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়ে আউট হন। দুই আউটের মাঝের ফারাক ছিলো ১৩ বছরের! ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথমবার ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়ে কোনো বল না খেলেই আউট হন।

এরপর দ্বিতীয় বার ২০০২ সালে তিনি এই লজ্জাজনক আউটের শিকার হন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো দুইবারই তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ডায়মন্ড ডাকে আউট হন।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের একজন সাবেক অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। এই ক্রিকেট কিংবদন্তিও তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ডায়মন্ড ডাকের লজ্জায় পড়েছিলেন।

২০০৬ সালে অ্যাডিলেড ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলছিলো অজিরা। প্রথমে ব্যাট করে ২৭৫ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় লঙ্কানরা। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আউট হবার পর ক্রিজে আসেন রিকি পন্টিং। সায়মন ক্যাটিচের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়ে কোনো বল না খেলেই বিদায় নেন তিনি।

  • বিরাট কোহলি (ভারত)

বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেটারদের একজন এই বিরাট কোহলি। কোনো বল না খেলেই তিনিও শিকার হয়েছিলেন ডায়মন্ড ডাকের। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছিলো ভারত। প্রথমবারের মতো বিরাট সেখানে ডায়মন্ড ডাকের শিকার হন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ক্রিজে ছিলেন দীনেশ কার্তিক ও বিরাট কোহলি। দ্রুত সিঙ্গেল নিতে চাইলেও দুইজনই কনফিডেন্ট ছিলেন না! আর সেই সুযোগে দূর্দান্ত থ্রো’য়ে বিরাটকে শূন্য রানেই আউট করেন এল্টন চিগাম্বুরা। প্রথমবারের মতো ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়ে কোনো বল না খেলেই আউট হন বিরাট কোহলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link