৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচে বদলী খেলোয়াড়ের নিয়মের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। ১১ জনের ফুটবল ম্যাচে তাই একদলে ১১ জনকে দেখা গেলেও পুরো ম্যাচটা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একটা দলের ১৫ জনও খেলে থাকেন। নতুন খবর হলো, ফুটবলের এ ছোঁয়া আসছে এবার ক্রিকেটেও।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’-এর একটি ধারণা চালু করতে চলেছে বিসিসিআই। যার ফলে ১১ জন নয় ১৫ জন ক্রিকেটারই মূল একাদশে জায়গা করে নিতে পারবেন।
বিসিসিআই-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, টসের আগে দুই দলের খেলোয়াড় তালিকায় একাদশের বাইরেও কয়েকজনের নাম থাকে। তারা দ্বাদশ ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামেন প্রয়োজন হলে। নতুন নিয়মে একাদশের বাইরে চারজন বদলি খেলোয়াড়ের দেবে দুই দল। যাদের একজনকে ম্যাচে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
১১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি। আর এখান থেকেই নতুন এ নিয়ম শুরু হচ্ছে। জানা গিয়েছে সুফল পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও এই নিয়ম চালু করা যেতে পারে।
প্রতিটি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে বিসিসিআই-এর এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিনব নিয়ম আসার ফলে ইতোমধ্যেই সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির আকর্ষণ বাড়তে শুরু করেছে। নিয়ম অনুযায়ী উভয় ইনিংসের ১৪তম ওভারের আগে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার ব্যবহার করা যাবে। বদলি হিসেবে নামা ক্রিকেটার বাকি ওভার ব্যাট করার পাশাপাশি চার ওভার বলও করতে পারবেন। এমনকি একজন ব্যাটার আউট হয়ে গেলে তাঁর পরিবর্তে হিসেবেও ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নামানো যেতে পারে।
অবশ্য যাঁর পরিবর্তে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার মাঠে নামবেন ওই ক্রিকেটার আর বাকি ম্যাচে অংশ নিতে পারবেন না। তাছাড়া মাঠের মধ্যে সাসপেন্ডেড খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে কোনো ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নামানো যাবেনা।
ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের এ নিয়মটা আরেকটু পরিস্কার হবে একটা উদাহরণে। ধরা যাক, ভারতের রোহিত শর্মা ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়ে গেলেন। বেশিরভাগ সময় তিনি যেহেতু ব্যাটার হিসেবে খেলবেন। ভারত চাইলে ১৪ ওভারের আগেই তাঁর বদলি হিসেবে আরেকজন ব্যাটার নামাতে পারবে। সেই ব্যাটার ব্যাটিংও করতে পারবেন। তবে বদলি ব্যাটারসহ দলটির হয়ে ১১ জনের বেশি ব্যাটিং করতে পারবে না।
একই উদাহরণ প্রযোজ্য বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও। ধরা যাক, একটা দল টসে হেরে পরে বোলিং করবে। কিন্তু কন্ডিশন বলছে, পরে অনেক ডিউ ফ্যাক্টর থাকবে। স্পিনারদের বল গ্রুিপ করতে সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে ঐ দল চাইলে বোলারও রিপ্লেস করতে পারবে। যেটি ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে টসের গুরুত্ব অনেকখানি কমে যাবে- এটা নিশ্চিতভাবে বলাই যায়। কারণ কন্ডিশনের গুরুত্ব অনুযায়ী যেকোনো দলই তাৎক্ষণিক খেলোয়াড় বদল করে নিবে। যার কারণে কন্ডিশন তেমন কোনো প্রভাবই রাখবে না। একই সাথে গুরুত্ব কমে যাবে টসেরও।
আইসিসি ২০০৫ সালে একদিনের আন্তর্জাতিকে পরীক্ষামূলকভাবে সুপার সাব চালু করেছিল। তবে বছরখানেক পরই তা তুলে দেওয়া হয়। বিগব্যাশ টি-টোয়েন্টি লিগেও এক্স ফ্যাক্টর নামে একটি নিয়ম প্রবর্তিত আছে। সেখানে প্রথম ইনিংসের ১০ ওভারের মধ্যে যে ব্যাটিং করেনি তাঁর পরিবর্তে ব্যাটার আর ১ ওভার বল করাদের পরিবর্তে একজন বোলার নেওয়া সুযোগ আছে। যা এক্স ফ্যাক্টর নামে পরিচিত। এই এক্স ফ্যাক্টরের আদলেই সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম আনছে বিসিসিআই।
ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার আপাতত পরীক্ষামূলক একটা যাত্রা। এটার জন্য ক্রিকেটীয় কোনো স্পিরিট নষ্ট হবে কিনা সেটাও নিশ্চয় এই পরীক্ষণে উঠে আসবে। কারণ এক নিয়মের বেড়াজালে নির্দিষ্ট দিনে কোনো দল সুবিধা পেয়ে গেলে ঐ একটি নিয়মের দিকেই আঙুল উঠবে বেশি।
তখন মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে নির্দিষ্ট একটি নিয়ম নিয়ে চর্চা হবে বেশি। ফুটবলের ক্ষেত্রে বদলীর নিয়ম, একটি ঐতিহ্যগতভাবে পেয়ে আসা স্বীকৃত রুলস। কিন্তু শতবছরের ক্রিকেট ইতিহাস পেরিয়ে গেছে বদলীর এমন নিয়ম ছাড়াই। তাই নতুন এ ধারণা কতটা ফলপ্রসু আর সার্বজনীন হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।