মিথ্যা বিশ্বাস আর আশ্বাসের তাসের কেল্লা বানিয়ে বসে আছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। সামান্য বাতােসেই সেটা ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্পিন ভাল খেলে- এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। সেনা কন্ডিশনেও এক ইনিংসে দশটি উইকেট স্পিনারদের দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
এই তো বছর তিনেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে, কেশভ মহারাজ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন সাত উইকেট। এছাড়া সেই টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে সাইমন হার্মার নিয়েছিলেন সাত উইকেট।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ব্রেসওয়েলও শিকার করেছেন চার উইকেট। যার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে উইকেট সংখ্যা মাত্র ৩১ উইকেট। সেই চার উইকেট নিয়েই। এমন পার্টটাইমারদের শেন ওয়ার্ন বানিয়ে ফেলার উদাহরণ তো এবারই নতুন নয়।
কেদার যাদভের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের যমদূত। হুট করে এসে এই পার্টটাইমার ম্যাচের গোটা গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন। ওপেনিংয়ে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ২১ তম ওভারে সেই জুটিতে আঘাত করেন কেদার যাদব। এরপর হুরমুরিয়ে ব্যাটিং অর্ডার মাটিতে মিশে যায়। ২২২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
সেই ম্যাচে কেদার নিয়েছিলেন দুই উইকেট। কুলদ্বীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহালরা আরও চারটি উইকেট নিয়েছিলেন সেদিন। বাংলাদেশের স্পিন দূর্বলতার ফিরিস্তি এখানেই শেষ নয়। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। নিউউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে রাচিন রবীন্দ্রর মত পার্টটাইম বোলারও আনপ্লেয়েবল হয়ে উঠেছিলেন।
দুই ম্যাচে তিনি সাত ওভার করেছিলেন। একটি উইকেট নিয়েছিলেন। তার করা ১৭টি ডেলিভারিতে কোন রান নিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এই হচ্ছে বাংলাদেশের ভাল স্পিন খেলার নমুনা। কি ভাবছেন এখানেই শেষ? না, একটা পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে এখন অবধি ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই ১৪টি ওয়ানডেতে ১৯জন ভিন্ন ভিন্ন স্পিনার সামলেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাদের ছোড়া ১৭৪৪ বলের মধ্যে ১১২১টি বলই ছিল ডট। যার মধ্যে আবার রয়েছে ৩৮টি উইকেট টেকিং ডেলিভারি।
এই সময়ে ১৩৪৬ রান বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিয়েছেন বটে। যার অধিকাংশ ঘটনাতেই কোন একজন ব্যাটারের অতিমানবীয় আগ্রাসন চোখে পড়েছে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে দিশেহারা বানানো রিশাদের ইনিংসটি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। সেদিন পাঁচটি চারের বিপরীতে চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। সবগুলোই তিনি হাঁকিয়েছিলেন স্পিনারদের বিপক্ষে।
অথচ বাংলাদেশকে বলা হয় স্পিন বোলিংয়ের অন্যতম আধার। এখানে ঘরে ঘরে স্পিনার জন্মায়। সেটা কোন কোন অর্থে সত্য বটে। কিন্তু সেই স্পিনারদের অধিকাংশই অতি সাদামাটা। আর বাংলাদেশের ব্যাটারদের যে চরম টেকনিক্যাল দূর্বলতা রয়েছে, সেটা তো কেদার যাদব, মাইকেল ব্রেসওয়েলের মত পার্টটাইমাররা দেখিয়ে দেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে।
বাংলাদেশের কোন স্ট্রং জোন নেই। বাংলাদেশ দলটা সর্বক্ষেত্রেই দূর্বল। ও না, চাপার জোরটা বেশ ভালই আছে দলের।