অধীর অপেক্ষায় প্রহর চলে যায়। শঙ্কা জাগে, ভয় হয়। একটুখানি বিশ্বাস ডানা মেলে উড়তে চায়। তবে অপেক্ষার একটা অদৃশ্য শিকল জড়িয়ে ধরে, সময়ের পানে চেয়ে থাকে। তেমনই এক অপেক্ষার ক্ষণ গুনছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আরব আমিরাতের তপ্ত মরুভূমির উত্তাপ ছাপিয়ে এখন আলোচনার বিষয় এশিয়া কাপ। ছয় জাতির এই লড়াইয়ে শেষ মুকুট কার ভাগ্যে জুটবে সেটা নিয়েই চারিদিকে আলোচনার অন্ত নেই।
মাঝে আবার ভারত-পাকিস্তানের বহু আকাঙ্ক্ষিত মহারণের মঞ্চায়ন হয়েই গেল। সেখানে মধুর প্রতিশোধ নিয়েও ফেলেছে ভারত। কিন্তু এখন অবধি মাঠের নামার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। তবে তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী আফগানিস্তান। অন্তত ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে এ কথা দিনের আলোর মতই সত্য। একদিকে যখন আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কাকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে।
ঠিক তখন বাংলাদেশের অবস্থান দুশ্চিন্তার মহাসমুদ্রে। একে তো এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স খুব একটা সুবিধাজনক নয়। তার উপর দলে রয়েছে ইনজুরি আর অফ ফর্মের কাল ছায়া। সব মিলিয়ে একটা গোজামিল পরিস্থিতি। তবুও তো লড়াই করতে হবে। একটা একাদশ মাঠে নামাতে হবে। দুশ্চিন্তার যদি একটা মাত্রা করা যায় তবে সে মাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে ওপেনিং নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের দুশ্চিন্তা।
তামিম ইকবাল এই ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছেন। লিটন দাস ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন। আর মুনীম শাহরিয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারায় আজ দলের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে দলের ওপেনিংয়ে এনামুল হক বিজয়ের উপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। বড় মঞ্চে পারভেজ হোসেন ইমনের অভিজ্ঞতার অভাবে হয়ত তিনি থাকবেন না শুরুর একাদশে। সেদিক থেকে বিজয়ের সাথে ওপেনিংয়ে হয়ত দেখা যেতে পারে নাঈম শেখকে।
তবে নাঈমের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ প্রশ্নবিদ্ধ। অন্যদিকে বিজয় এখনও নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি। সেদিক বিবেচনায়, আফগানিস্তানকে ভরকে দিতে হয়ত সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের একটা উদ্বোধনী জুটি দেখা যেতেই পারে। তবে তা ম্যাচের আগে সুনিশ্চিত হওয়ার কোন উপায়ই নেই। তবে ওপেনিং জটের মাঝে একটা সুসংবাদ হচ্ছে আফিফ হোসেনের চারে খেলা। সেটা প্রায় নিশ্চিত।
এই সময়ে দলের সাথে থাকা সেরা ব্যাটারদের একজন আফিফ। তিনি স্লগার রোলে খেললেও তিনি আসলে সত্যিকার অর্থে মিডল অর্ডার ব্যাটার। বহুদিন বাদে হলেও ম্যানেজমেন্ট সেটা আন্দাজ করতে পেরেছে। আর আফিফকে চারে খেলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেদিক বিবেচনায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দেখা যেতে পারে আবারও স্লগার রোলে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, অভিজ্ঞতা কি পারবে হারাতে বয়সের ভার?
হাজারটা প্রশ্ন থাকলেও দলে সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ও সে সাথে মুস্তাফিজুর রহমান অটো-চয়েজ। তাঁরা তো থাকছেনই দলে। পরিবর্তনের বাকি সুযোগগুলোর মধ্যেও আফিফ তাঁর নামের মতই একাদশে ধ্রুব। তাছাড়া পিচ বিচারে বাংলাদেশ হয়ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে অতিরিক্ত একজন স্পিনার খেলানোর। সেক্ষেত্রে নাসুম আহমেদ হতে পারেন প্রথম পছন্দ। যদি তেমনটা না হয়, তবে মোসাদ্দেক ও শেখ মেহেদিকে দেখা যেতে পারে একইসাথে একাদশে।
তাসকিন আহমদে হয়ত তাঁর অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকবেন এবাদত হোসেনের থেকে। সাকিব যদি খানিকটা গ্যাম্বেল করতে চান তবে সাব্বির রহমান রুম্মানকেও হয়ত খেলাতে পারেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। সেক্ষেত্রে ওপেনিং পজিশন থেকে নাঈম শেখ হারাতে পারেন নিজের সুযোগ। অন্যদিকে দলে ভারসাম্য আনতে বহুদিন বাদে হয়ত সাইফউদ্দিনকে দেখা যেতে পারে।
দলের বোলিং বিকল্প বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে পারে বৈচিত্র। তাছাড়া শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রেও সাইফউদ্দিন হতে পারেন এক দারুণ পছন্দ। সাইফউদ্দিনের অন্তর্ভুক্তি হয়ত বাংলাদেশকে আরও একজন স্পিন বোলিং অপশন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তেমনটা হলে তাসকিনের পরিবর্তে নাসুম হয়ত খেলে ফেলতে পারেন মূল একাদশে।
তবে আসলেই বাংলাদেশ কেমন একাদশ নিয়ে মাঠে নামছে সেটা এখন দেখবার বিষয়। বাংলাদেশের বোলারদের শক্তিমত্তা ব্যবহারে সাকিব নিশ্চয়ই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবেন। তাঁরা জ্বলে উঠতে পারলেই বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে যত চিন্তা তা তো সব ব্যাটিং নিয়ে। তাসের মহল হয়ে যেতে তো বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করে না টাইগার ব্যাটিং লাইনআপ।
একাদশ যেমনই হোক। এশিয়া কাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচটা অবশ্যই জিততে চাইবে বাংলাদেশ। একটা ভাল শুরু একটা মোমেন্টাম এনে দিতে পারে। গেল তিন বারের আক্ষেপটা ঘুচাবার আরও একটা সুযোগ সামনে চলে আসার সম্ভাবনাকেও তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।