ক্রিকেট মাঠে এক নতুন কাব্য রচনা করতে যাচ্ছেন বেন কুরান। তার রক্তে বয়ে চলেছে ক্রিকেটের উত্তরাধিকার। তার বাবা কেভিন কুরান জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেছেন ১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যদিও তার দুই ভাই, স্যাম ও টম কুরান, বেছে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার পথ। যদিও বেন হয়ত ফিরে গেলেন শেকড়ের কাছেই।
বাবার হাত ধরে ছোটবেলার কিছুটা সময় জিম্বাবুয়েতে কাটিয়েছেন বেন। সেখানকার মাটির গন্ধ, বাতাসের উষ্ণতা তার মনে গেঁথে ছিল চিরকাল। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম অধ্যায়টা তিনি শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের নর্দ্যাম্পটনশায়ারে। ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ইংলিশ ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে গড়ে তোলার পর, একদিন তিনি অনুভব করলেন, তার প্রকৃত জায়গা হয়তো জিম্বাবুয়ের মাটিতেই।
এই মৌসুমে বেন কুরান যেন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রথম-শ্রেণির লোগান কাপ প্রতিযোগিতায় ৭৪.১৪ গড়ে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একইভাবে প্রো৫০ লিস্ট-এ প্রতিযোগিতায় ৬৪.৫০ গড়ে রান করে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ও। এমন পারফরম্যান্সের পর, তিনি নিজেকে জাতীয় দলের জন্য উপলব্ধ করালেন। অবশেষে, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট তাকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাকল।
১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বেন কুরান তার অভিষেকের অপেক্ষায়। মনে হচ্ছে, তিনি তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবার জিম্বাবুয়ের জার্সি গায়ে নতুন ইতিহাস লিখবেন। কেভিন মালকম কুরান, যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ১১টি ওয়ানডে খেলেছিলেন এবং পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ের কোচও হয়েছিলেন, সেই রক্তই আজ বেনের শরীরে ক্রিকেটের সুর বুনছে।
এই গল্পটা কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়; এটি শেকড়ের ডাকে সাড়া দেওয়ার গল্প। ভাইদের মতো ইংল্যান্ডের পথে হাঁটেননি তিনি। বরং, নিজের দাদার এবং বাবার রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারকে বুকে ধারণ করে ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের মাটিতে। তার দুই ভাই, স্যাম ও টম, ইংল্যান্ডের হয়ে যথাক্রমে ১১৭ ও ৬০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু বেনের যাত্রা ভিন্ন—যেন তিনি চাইছেন তার বাবার সেই সুরেলা গল্পকে আবার জাগিয়ে তুলতে।
জিম্বাবুয়ের মাঠে বেনের অভিষেক যেন এক প্রতীকী ঘটনা। এটি কেবল একটি অভিষেক নয়, বরং প্রজন্মের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক সেতু। হয়তো এই সেতুর মাঝ দিয়েই কুরান পরিবারের ক্রিকেটীয় উত্তরাধিকার আবার জিম্বাবুয়ের গর্ব হয়ে উঠবে।