১০০-এর নিচে অল আউট হয়ে যেতে পারতো সিলেট স্ট্রাইকার্স। সেটা হয়নি একটা মানুষের জন্য। তিনি বেনি হাওয়েল। অবশ্য, এখানে বেন কাটিংয়ের নামও যোগ করা দরকার। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এই দ’জন মিলে ৬৯ রান যোগ না করলে লজ্জার চূড়ান্তটাই দেখতে হত সিলেটকে।
যদিও, এই গল্পটা কাটিংকে নিয়ে নয়, এটা শুধুই বেনি হাওয়েলের গল্প। টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় নামটা খুব অপরিচিত নয়। উপমহাদেশে না হলেও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে বেশ সুনাম আছে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের। অনেকের মতে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে উদ্ভাবনী ক্রিকেটারদের একজন বেনি হাওয়েল। সেই ভরসা থেকেই গত কয়েকটা আসর ধরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তাঁকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।। হাওয়েল যেন শপথ নিয়ে এসেছিলেন, উপমহাদেশের তাঁর নামটা উচ্চারণ হওয়া চাই।
তবে বেনি হাওয়ালের এই বিপিএল খেলতে আসার পথটা সহজ ছিল না। অনেক পথ ঘুরে তবেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন এই ক্রিকেটার। জন্ম হয়েছিল ক্রিকেটের সাথে সম্পর্কহীন এক দেশে। ফ্রান্সের বোরডক্স শহরে জন্ম নিলেও বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এরপর আর বেনি হাওয়েলকে আটকায় কে। যেখানেই ব্যাট বলের লড়াই হয় সেখানেই হাজির তিনি।
অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। সেখানেই প্রথম ব্যাট-বল হাতে নজর কাড়েন। এছাড়া বিগব্যাশেরও পরিচিত নাম বেনি হাওয়েল। আরব আমিরাতের টি-টেন কিংবা ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ দ্য হানড্রেডেও খেলেন তিনি। সব মিলিয়ে তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশ্ব নাগরিক।
আসলে তিনি হলেন যাযাবর ক্রিকেটার। বিপিএলে সিলেটের আগে খেলেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দল খুলনা টাইটান্সে। তিনি হলেন জলে ভাসা পদ্ম – যখন যেখানে সুযোগ পান খেলে আসেন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড – দু’টো দেশের পাসপোর্ট আছে তাঁর। তিনি আবার বিয়ে করেছেন আর্জেন্টিনায় – সেই অর্থে তাঁর শ্বশুরবাড়ি আর্জেন্টিনা!
তাঁর জীবনটা কতটা যাযাবরের মত সেটা বুঝতে একটা গল্প বলা দরকার। একবার আমেরিকায় গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। সেখানে একটা বেসবল ম্যাচ দেখতে গেলেন স্টেডিয়ামে। গ্যালারি থেকে দেখে বুঝলেন, এভাবে চাইলে তিনিও পেটাতে পারবেন। পরে বিষয়টা আরো ভালভাবে রপ্ত করতে তিনি মেলবোর্ন বেসবল ক্লাবের হয়ে কিছুদিন রিজার্ভ পিচারও বনে গিয়েছিলেন।
আর বেসবলের এই বলকে পেটানোর ধারাটা তিনি নিয়ে আসলেন ক্রিকেটে। সেই ধারাবাহিকতাটা বিপিএলেও বেশ ভালভাবে দেখা যাচ্ছে।