রোমাঞ্চকর এক ফাইনাল দিয়ে পর্দা উঠল দশম পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল)। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পারফরমেন্সের কমতি অবশ্য ঘটেনি। তেমনই সব পারফরমারদের নিয়ে গড়া যেতে পারে, পিএসএল ২০২৫-এর সেরা একাদশ।
এই একাদশে সাজাতে গিয়ে দারুণ বেগ পোহাতে হয়েছে। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা পারফরমেন্সের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। বিদেশি খেলোয়াড়রা সেই অর্থে নিজের দ্যুতি ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। চারজন বিদেশিকে ঠাঁই দেওয়া ছিল ভীষণ কষ্টসাধ্য। তবুও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিয়ম মেনে চার বিদেশিও রয়েছেন দশম পিএসএলের সেরা একাদশে।
- ফখর জামান (লাহোর কালান্দার্স)
চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্সের ওপেনিং পজিশনটা টুর্নামেন্টের একেবারে শুরু থেকেই সামলেছেন ফখর জামান। বেশ দৃঢ়তার সাথে অধিকাংশ ম্যাচেই এনে দিয়েছেন দূর্দান্ত সূচনা। তার কল্যাণে বহু ম্যাচে লাহোরের জয়ের রাস্তা হয়েছে মসৃণ। দলকে সহয়তা করতে গিয়ে তার পরিসংখ্যানও হয়েছে পুষ্ট।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফখর। ১৩ ম্যাচে ৪৩৯ রান করেছেন তিনি ১৫২ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে। চার খানা ফিফটির কল্যাণে দলকে ফাইনাল অবধি নিয়ে যেতে সহয়তা করেছেন। যথারীতি তাই ফখর সেরা একাদশে থাকছেন ওপেনার হিসেবে।
- আবদুল্লাহ শফিক (লাহোর কালান্দার্স)
চ্যাম্পিয়ন দলের আরেকজন ব্যাটার আবদুল্লাহ শফিকও জায়গা পাচ্ছেন সেরা একাদশে। যদিও তিনি ব্যাট করেছেন তিন নম্বর পজিশনে। তবে সেরা একাদশে তিনি থাকছেন ফখরের উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে। তিনিও গোটা আসর জুড়েই লাহোরের আস্থার স্তম্ভ হয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন ব্যাট হাতে। ফাইনালের মঞ্চে ৪১ রানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন।
দলকে শিরোপার রাস্তা থেকে ভিন্ন পথে যেতে দেননি। সেই ইনিংসটি সহ ৩৯০ করেছেন আবদুল্লাহ শফিক। ১৩ ম্যাচে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪৮.২৮। দশম পিএসএলের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। এই সেরা একাদশের উইকেটরক্ষকও তিনি। যেহেতু কোন উইকেট রক্ষক ব্যাটারই সেই অর্থে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে উইকেটরক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
- জেমস ভিন্স (করাচি কিংস)
করাচি কিংস সফলতার দেখা না পেলেও জেমস ভিন্স ঠিকই নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন পিএসএলের মঞ্চে। করাচির হয়ে যতটুকু অবদান রাখা সম্ভব, তার সবটুকুই নিঙড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইংলিশ এই ব্যাটার। ১১ ম্যাচে ৩৭৮ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। তিনটি ফিফটি হাঁকানো ছাড়াও একটি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন জেমস ভিন্স। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ১৪৮.২৩ স্ট্রাইকরেট বজায় রাখা ভিন্সকে তাই সেরা একাদশ থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।
- শাহিবজাদা ফারহান (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)
এবারের পাকিস্তান সুপার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শাহিবজাদা ফারহান। তার দল ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ফাইনাল অবধি পৌঁছাতে না পারলেও ফারহান ঠিকই নিজের ছাপ ফেলে গেছেন। মিডল অর্ডারে দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। ব্যাট হাতে ছিলেন ইসলামাবাদের নিউক্লিয়াস।
১২ ম্যাচ খেলে ৪৪৯ রান করেছেন তিনি। ১৫২ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে চলেছে তার ব্যাট। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিনটি হাফ সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান। স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইবে ফারহানের এবারের পিএসএল যাত্রা। সেরা একাদশের মিডল অর্ডারে তাই তাকেই রাখা।
- হাসান নাওয়াজ (কোয়েট্টা গ্ল্যাডিয়েটর্স)
রানার্সআপ দলের প্রথম সদস্য যিনি কি-না স্থান পাচ্ছেন সেরা একাদশে। হাসান নাওয়াজ তার ব্যাটের প্রতিটি প্রহারে নিজের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন। দশম পিএসএলে দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। বনে গেছেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩৯৯ রান করেছেন তিনি।
একটি রান করতে পারলেই ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার আফসোস সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে না পারায়। ফাইনালের মঞ্চে উঠে, শিরোপার খুব কাছ থেকেই যে তাকে ফিরতে হয়েছে শূন্যহাতে। ১৬২ স্ট্রাইকরেটের স্টিমরোলার নিয়ে তিনি হয়ত আবার ফিরবেন শিরোপার অন্বেষণে। ততদিন অবধি একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরি তার অনুপ্রেরণা হয়ে রইবে।
- সিকান্দার রাজা (লাহোর কালান্দার্স)
ফাইনালের মঞ্চে সিকান্দার রাজা যা করলে- তা বহুকাল বর্ণিল হয়ে রইবে তার নিজস্ব স্মৃতিতে, সেই সাথে পাকিস্তান সুপার লিগের ইতিহাসেও। ইংল্যান্ড থেকে সোজা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন ম্যাচ শুরু দশ মিনিট আগে। এরপর সাত বলে অপরাজিত ২২ রানের ইনিংসে লেখেন লাহোরের শিরোপা জয়ের কাব্য।
মাঝপথে জাতীয় দলের ডাকে চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তবে বাকিটা সময়জুড়ে লাহোরের জন্যে নিবেদিত প্রাণ হিসেবেই পারফরম করে গেছেন তিনি। স্রেফ ফাইনালের পারফরমেন্সের কারণেই সেরা একাদশে অনায়াসে জায়গা দেওয়া যায় তাকে। তবে ৭.৭৫ ইকোনমিতে দশ উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি ১৬৯.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ২৫৪ রানই তাকে যোগ্য দাবিদার বানিয়েছে।
- শাদাব খান (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)
ইসলামাবাদকে ইউনাইটেডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাদাব খান। দলকে প্লে-অফ পর্যন্ত তুলেছিলেন। কিন্তু ফাইনালে আর ওঠা হয়ে ওঠেনি তার। কিন্তু ব্যাটে বলে তিনি ঠিকই চেষ্টা চালিয়েছেন। ১৪ খানা উইকেট নিয়েছেন ৭.৯০ ইকোনমিতে। ব্যাট হাতেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। ১৭৩ রান করেছেন ১৫৫.৬৫ স্ট্রাইকরেটে। লোয়ার অর্ডার ব্যাটার হিসেবে মন্দ করেননি শাদাব।
- জেসন হোল্ডার (ইসলামাবাদ ইউনাইটেড)
ইসলামাবাদের বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেনানী ছিলেন জেসন হোল্ডার। বাকিদের তুলনায় কম ম্যাচ খেলেও উইকেট শিকারের তালিকাতে ঠিকই উঠে এসেছেন তালিকার উপরের দিকে। আট ম্যাচে ১৫টি উইকেট বাগিয়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে ইসলামাবাদকে দিয়েছেন স্বস্তি। এছাড়াও ১৬৪ স্ট্রাইকরেটে ৬৯ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। বোলিং ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বদায়িত্বে তিনি থাকছেন বিদেশিদের মধ্যে।
- শাহীন শাহ আফ্রিদি (লাহোর কালান্দার্স)
চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদি। দশম পিএসএলের সেরা একাদশেও তিনি আছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। লাহোরকে তৃতীয় শিরোপা জেতাতে তিনি সামনে থেকেই অবদান রেখেছেন বল হাতে। সবচেয়ে বেশি উইকেট গিয়েছে তারই পকেটে। ১৯ খানা উইকেট শিকার করে লাহোরকে চ্যাম্পিয়ন হতে সহয়তা করেছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
- রিশাদ হোসেন (লাহোর কালান্দার্স)
লাহোর কালান্দার্সের বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য যোগ করেছিলেন রিশাদ হোসেন। সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারলে হয়ত তিনি থাকতেন উইকেট শিকারি তালিকার বেশ উপরের দিকে। সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট গিয়েছে তার পকেটে।
এর মধ্যে লাহোরকে ফাইনালে তোলার পথে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট বাগিয়েছেন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। ব্যাট হাতে অবশ্য নিজের আগ্রাসন দেখানোর সুযোগ পাননি রিশাদ। তবুও বোলিং বৈচিত্র্যের বিচারে তিনি থাকছেন সেরা একাদশে।
- হাসান আলি (করাচি কিংস)
পাকিস্তানের অভিজ্ঞ পেসার হাসান আলির জন্যেও এবারের টুর্নামেন্ট কেটেছে দূর্দান্ত। বল হাতে ১৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। যৌথভাবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। করাচি কিংসের হয়ে বোলিং ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বদায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আলি। তাকে বাদ রেখে তাই সেরা একাদশ সাজানো ভীষণ মুশকিল।