প্রতিটি আইপিএল মৌসুম মানেই নতুন কিছু গল্প, নতুন তারকার জন্ম আর পুরনো তারকাদের নতুন করে চেনা। কিন্তু ২০২৫ আইপিএল যেন এক অচেনা গল্প হয়ে উঠেছে কারও কারও জন্য। তারা মাঠে নামছেন, কিন্তু নামের ভার যেন পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত হচ্ছে না। ম্যাচের পর ম্যাচ পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ ব্যাটে-বলে নেই তাদের স্বাভাবিক ছন্দ।
এবারের আসরে ফর্মহীনতায় ভুগছেন একাধিক তারকা ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে আছেন ভারতের ঋষাভ পান্ত, রোহিত শর্মা, আফগানিস্তানের রশিদ খান, ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল এবং অস্ট্রেলিয়ার জেইক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক। নামগুলো বিশাল, কিন্তু সংখ্যাগুলো বলছে অন্য কথা।
ঋষাভ পান্তকে লখনৌ এবারের আসরে নিয়েছিল ২৭ কোটি রুপির বিনিময়ে। আইপিএলের এবারের আসরে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় এই পন্থ। তাই তো লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বড় আশা ছিল তাকে নিয়েই। তবে সে আশা সেগুড়ে বালি। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৭টি ম্যাচ, রান করেছেন মাত্র ১০৩। স্ট্রাইক রেট ১০৪.০৪। বলার মতো শুধু একটি মাত্র অর্ধশতক। এখন পর্যন্ত ফ্লপ খেলোয়াড়দের তালিকায় শীর্ষেই থাকবে তার নাম। তবে কি টাকার হিসাব মেলাতে গিয়েই ভুল হচ্ছে রানের অঙ্কে?
অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যার আছে আইপিএলের একাধিক শিরোপা, ভারতের বিশ্বকাপ নেতৃত্ব, সেই রোহিত শর্মা যেন এবার ম্লান। ৬ ম্যাচে রান করেছেন ৮২, নেই কোনো অর্ধশতক। ব্যাট হাতে তার ভূমিকা এতটাই বিবর্ণ যে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—রোহিত কি তবে শেষের পথে?
আইপিএল মানেই রশিদ খানের উইকেট উৎসব। আফগানিস্তানের এই স্পিন জাদুকরের দিকে বরাবরই তাকিয়ে থাকে দল। কিন্তু এবার তার ঘূর্ণিতে নেই আগের মতো ধার। ৭ ম্যাচে উইকেট মাত্র ৪টি, ইকোনমি রেট ৯.৭৩। দেখেই বোঝা যায়, পরিসংখ্যানটা অন্তত রশিদ খানের সঙ্গে বেমানান।
আন্দ্রে রাসেল আইপিএলের হিট মেশিন। যেকোনো মুহূর্তে ঘুরিয়ে দিতে পারেন যেকোনো ম্যাচের ভাগ্য। তবে সেই ভাগ্যের পরিহাসেই এবারের আসরে একের পর এক ফ্লপ ইনিংস। ৭ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ৩৪, সর্বোচ্চ ইনিংস ১৭। স্ট্রাইক রেট ১০৯.৬৮—যা রাসেলের জন্য রীতিমতো অস্বাভাবিক। বোলিংয়েও নেই কোনো বড় প্রভাব।
জেইক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক—অস্ট্রেলিয়ার তরুণ এই ব্যাটারকে ঘিরে শুরুতে ছিল অনেক প্রত্যাশা। পাওয়ার প্লেতে ঝড় বইয়ে দিতে ওস্তাদ এই মারকুটে ব্যাটার এবারের আসরে খুঁজছেন নিজের অস্তিত্ব। ৬ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ৫৫, স্ট্রাইক রেট ১০৫।
আইপিএল এমন একটি মঞ্চ, যেখানে ‘নাম’ নয়, চলেছে ‘ফর্ম’। যত বড় তারকাই হোন না কেন, এই প্রতিযোগিতায় জায়গা পেতে হলে লাগবে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। ২০২৫ আইপিএলের মাঝপথে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে—এই তারকারা কি ফিরবেন নিজেদের ছায়া থেকে বেরিয়ে? নাকি এই মৌসুমটাই থেকে যাবে হতাশার এক অধ্যায় হয়ে?