Social Media

Light
Dark

এক বিশ্বকাপ বঞ্চিত গ্রেট

একজন কোচের জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। মাঠের পারফরম্যান্সে বিন্দুমাত্র প্রভাব না ফেলে সমর্থক এবং ফুটবলারদের সন্তুষ্ট করে দল গঠন করা ভীষণ কঠিন কাজ।

বিভিন্ন সময়ে দলের ভালোর জন্য নিতে হয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত, বাদ দিতে হয়েছে তারকা সব ফুটবলারকে। আসুন দেখে নেয়া যাক, ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া দশ তারকা ফুটবলারকে।

  • কার্লোস আলবার্তো

১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে বুলেট গতির শটে দুর্দান্ত গোল করা কার্লোস আলবার্তো আশ্চর্যজনকভাবে বাদ পড়েছিলেন ১৯৬৬ বিশ্বকাপের দল থেকে। বরং তাঁর বদলে দলে জায়গা পেয়েছিলেন ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি ৩৭ বছর বয়সী জালমা সান্তোস। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আলবার্তোকে ছাড়া ব্রাজিল সেবার পার করেছিল তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসে বাদ পড়েছিল গ্রুপপর্ব থেকেই।

  • ডিয়েগো ম্যারাডোনা

বয়সটা মাত্র ১৭ হলেও বোকা জুনিয়র্স এবং বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু ঘরের মাঠে চাপ সামলাতে পারবেন না এই অজুহাতে তাকে দলে নেননি আর্জেন্টিনার কোচ মেনোত্তি। পরবর্তীতে অবশ্য ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আপন জাদুতেই একা হাতে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন ফুটবলের ঈশ্বর।

  • লিয়াম ব্রাডি

আর্সেনাল এবং আয়ারল্যান্ড কিংবদন্তি লিয়াম ব্রাডি তার ক্যারিয়ারে কখনোই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাননি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড কোয়ালিফাই করলেও কোচ জ্যাক চার্লটনের চাহিদা মত খেলতে না পারায় বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন তিনি।

পরে ব্রাডি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সে মাঠে সৃজনশীল কিছু দেখার চাইতে বরং চাইতো দ্রুত গতিতে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে। সে নিজে সুযোগ সৃষ্টি করার বদলে প্রতিপক্ষের ভুলের অপেক্ষায় থাকত। এই কারণেই বিশ্বকাপ দলে আমার জায়গা হয়নি।’

  • ফার্নান্দো রেডোন্ডো

ফিটনেস, ইনজুরি, মনোমালিন্য নানা কারণেই কোচেরা দল থেকে বাদ দিতে পারেন খেলোয়াড়কে। কিন্তু চুলের ছাটের জন্য কাউকে দল থেকে বাদ দিতে দেখেছেন? এমনটাই ঘটেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপে রিয়াল মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন স্টার ফার্নান্দো রেডোন্ডোর সাথে।

আর্জেন্টিনার কোচ ড্যানিয়েল প্যাসারেলা লম্বা চুল এবং কানের দুলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন দলের উপর। কিন্তু রেডোন্ডো তার চুল খাটো করতে রাজি হননি। রেডোন্ডো বলেন, ‘পাঁচ বছর কিংবা হয়তো দশ বছর আমি আফসোস করব, কিন্তু কিছু বিষয়ের সাথে আমি কখনোই আপোষ করব না। আমি আমার আর্মচেয়ারে বসেই বিশ্বকাপটা কাটিয়ে দেব।” এই জেদের কারণে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল।’

  • রোমারিও

যদিও বলা হয়েছিল কাফ ইনজুরি থেকে সময় মত সেরে না উঠতেই দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোমারিওকে। কিন্তু রোমারিও দাবি করেছিলেন তিনি সম্পূর্ণ ফিট আছেন। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন এই তারকা।

ইতিহাস যদিও আনফিট ফুটবলারদের দলে নেয়া সমর্থন করে না, তবুও ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জেতানো নায়ককে হয়তো দলে রাখাই যেত। ব্রাজিলিয়ান টিম চিকিৎসক লিডিও টলেডো বলেছিলেন, ‘এই ধরনের ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে ১০-১৫ দিন কিংবা কিছু ক্ষেত্রে এক মাসের বেশি সময় লাগে।’

ব্রাজিলের কোচ সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতেই হত। কেবলমাত্র দর্শকদের খুশি করতে স্টার ফুটবলারকে দলে নিতে পারি না। আমি অন্য লোককে খুশি কর‍তে পারব না। আমি বরং নিজেকেই খুশি করতে চাইব। ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে ছিলেন না এবং তবুও ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছিল।’

  • রবার্তো ব্যাজ্জিও

১৯৯৪ বিশ্বকাপের ট্র‍্যাজিক হিরোকে বাদ দিয়েই ইতালি ঘোষণা করেছিল ২০০২ বিশ্বকাপের জন্য তাদের দল। ইতালিবাসী তো বটেই পুরো বিশ্বজুড়ে থাকা ফুটবলপ্রেমীরা অবাক হয়েছিলেন এই সিদ্ধান্তে।

বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগের দিন হাঁটুর ইনজুরির কারণে চার মাস বাইরে থাকার পর মাঠে ফেরেন ব্যাজিও। তার আগের তিন বছর অবশ্য জাতীয় দলে খেলেননি। সে কারণেই কিনা কোচ জিওভান্নি ট্রাপ্পাটোনি ‘দ্য ডিভাইন পনিটেইল’-এর দলে থাকা নিয়ে মাথা ঘামাননি। ব্যাজিও অবশ্য সব সময় দাবি করে গিয়েছেন তাঁর দলে থাকা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘এটা আমার চতুর্থ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছিল। আমার পূর্বের রেকর্ড বিবেচনায় আমি দলে জায়গা পেতে বাধ্য, এমনকি আমি যদি হুইলচেয়ারেও থাকি।’

  • হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে

হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে ছিলেন আর্জেন্টিনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তার প্লেমেকিং অ্যাবিলিটি ছিল অন্য পর্যায়ের। পায়ের জাদুতে মোহাবিষ্ট করে রাখতেন পুরো বিশ্বকে। মার্সেলো বিয়েলসা যখন কোরিয়া এবং জাপান বিশ্বকাপের দল থেকে তাঁকে বাদ দেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল সবাই।

পরবর্তীতে জানা যায়, সেই সময়টাতে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন রিকুয়েলমে। তাঁর অনুরোধেই দল থেকে বাদ দেয়া হয় তাঁকে। তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সেই সময়টাতে ঠিক ছিলাম না। আমার মাথা কাজ করছিল না।’

  • রোনালদিনহো

২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা দিয়েছিলেন রোনালদিনহোকে। অথচ এসি মিলানের হয়ে ২০০৫ সালে ব্যালনজয়ী এই তারকা ছিলেন বেশ ভাল ফর্মে। এক বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলে না খেললেও সবাই ভেবেছিল বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ এই ফুটবলারকে দলে রাখা হবে।

কিন্তু, কুশলী এই মিডফিল্ডারকে বাদ দিয়ে দুঙ্গা দলে ডাকেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফিলিপ মেলোকে। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মেলোর আত্নঘাতী গোলেই বাদ পড়ে সেলেসাওরা।

  • এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো এবং জাভিয়ের জানেত্তি

ইন্টার মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়ন লিগ জেতা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনার কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ দলে রাখেননি দুই তারকা ফুটবলার ক্যাম্বিয়াসো এবং জানেত্তিকে।

ক্যাম্বিয়াসোকে তো ম্যারাডোনা কখনোই পছন্দ করতেন না। আর জানেত্তিকে বাদ দেয়ার অজুহাত হিসেবে বলেছিলেন তিনি বড্ড বুড়িয়ে গিয়েছেন। অথচ মাঠের পারফরম্যান্সে তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরাদের একজন।

তারকা এই ফুটবলারদের বদলে ম্যারাডোনা দলে ডেকেছিলেন আর্জেন্টিনার ঘরোয়া লিগে খেলা ফুটবলারদের। পরবর্তীতে তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছিল এবং কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৪-০ গোলের লজ্জাজনক পরাজয়ে বিদায় নিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা।

  • করিম বেনজেমা

সতীর্থ ম্যাথিউ ভ্যালবুয়েনাকে সেক্স টেপ কেলেঙ্কারিতে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বিশ্বকাপের বছর তিনেক আগেই দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টার করিম বেনজেমাকে।

নিজেকে বরাবরই নির্দোষ দাবি করা বেনজেমা দলে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশ্যম এবং ফ্রান্স ফুটবলের সভাপতিকে। কিন্তু তাতেও মন গলেনি, দলে জায়গা হয়নি বেনজেমার। পরবর্তীতে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। তবে চার বছর বাদে ব্যালন ডি’অর জেতা বেনজেমার সাথে সবকিছু মিটমাট করে ফেলেছেন দেশ্যম। যদিও, ইনজুরির কবলে ২০২২ সালে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপও খেলা হয়নি বেনজেমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link