সকাল থেকেই আবহাওয়াটা বেশ। অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। শীতল এক হাওয়ার বিচরণ ব্যস্ত নগরীতে। বৃষ্টি বিলাস ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সাকিব আল হাসানের ছবি। নিজের সমাবর্তনে অংশ নিতেই সিরিজের মাঝপথে সিলেট থেকে ঢাকায় সাকিব। আবারও সাকিব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এই আলোচনার ফাঁকে আরও এক গল্প আড়াল হয়েছে। সাকিবের অংশ নেওয়া সেই সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জাতীয় দলের আরও বেশ ক’জন ক্রিকেটার। ঘটনাটা ঠিক ততটুকু হলেই পারত। তবে ঘটনার ব্যপ্তি আরও বহুদূর। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচ রেখেই সমাবর্তনে এসেছিলেন এনামুল হক বিজয়।
সাকিব তো তবুও সিরিজের মাঝে এসেছেন। তবে বিজয় এসেছিলেন ম্যাচ ফেলে। এবারের ডিপিএলে ঢাকা আবাহনীর জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন বিজয়। এমনকি সে জার্সি গায়ে ইতোমধ্যেই তিনি পেয়ে গেছেন এক সেঞ্চুরির দেখা। সেই আবহানীর দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায়। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসের ফিল্ডিং পায় আবহানী।
তবে ফিল্ডিংয়ের পুরোটা সময়ই বিজয় ছিলেন না মাঠে। তিনি সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তখন অবস্থান করছিলেন রাজধানীতে। সেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্রই তিনি চলে যান মাঠে। গিয়েই বিজয় ব্যাট-প্যাড সজ্জিত হয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তবে এই নজির ভীষণ বিরল। কার্যত ক্রিকেটের নিয়ম অনুসারে একজন খেলোয়াড়কে ব্যাটিং করার পূর্বশর্ত তাঁকে নূন্যতম সময়ের জন্যে ফিল্ডিং করতে হবে।
তবে বিজয় তা করেননি। সোজা তিনি ব্যাট নিয়ে নেমে পড়েন ওপেনিং করতে। এমন বিরল ঘটনার মঞ্চায়ন ঘটিয়ে খানিকটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বিজয়। তবে এটাকে বিশেষ কারণ দেখিয়ে ছাড় দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তন একটি মানুষের জীবনের একটি বর্ণিল মুহূর্ত। সেই বর্ণিল মুহূর্তটুকু স্মৃতিতে আগলে রাখতে একটুখানি কোমলতার প্রত্যাশা করা নিশ্চয়ই খুব একটা বাড়াবাড়ি না। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারটাই করেছেন বিজয়।
গেল ডিপিএলে রান বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এক মৌসুমে লিস্ট এ টূর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান এখন বিজয়ের দখলে। সেই ধারাই অব্যাহত রাখতে মড়িয়া এনামুল হক বিজয়। এদিন এক ইনিংস মাঠের বাইরে থেকেও দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন বিজয়। চার ছক্কার সাথে একটি বাউন্ডারি দিয়ে তিনি তাঁর ইনিংস সাজিয়েছেন ৫৪ রানের।
অপরাজিত থেকেছেন তিনি। দলের জয় নিয়েই মাঠ ত্যাগ করেছেন তিনি। তবে তাঁকে ঘিরে আলোচনাটা হচ্ছে কম। তাঁর হাফসেঞ্চুরি নিয়েও কথা হচ্ছে না খুব একটা। এমন ঘটনার অবতারণা হয়ত সচারচর হয় না। তবুও একটা নজির থাকে। মানুষ চাইলেই সব পারে। এক সাথে দু’টো মুহূর্তও উপভোগ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই আশেপাশে থাকা মানুষদের।
কেননা বিজয়ের প্রতিপক্ষে থাকা শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের একটুখানি টু শব্দেও মাঠে নামা হত না বিজয়ের। তবে সেটি করেনি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রাও। ঠিক এসব কারণেই হয়ত ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। এই ঘটনাটা হয়ত ক্রিকেটের চিরায়ত নিয়ম পরিপন্থি। তবে সুন্দর, সাবলীল আর শুভ্র এক বার্তাবাহক।