এইতো ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) ইতিহাস তৈরী করে আশাজাগানিয়া গান গাইতে গাইতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ডিপিএলে এবারের আসরে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন এনামুল হক বিজয়। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের এই ওপেনার এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন। পনেরো ম্যাচে ৮১.২৮ গড়ে ১১৩৮ রান করেছেন বিজয়। বিজয়ের স্ট্রাইক রেট ছিলো ৯৮.৬১।
এই মৌসুমের পনেরোটি ম্যাচ মিলিয়ে বিজয়ের ঝুলিতে সেঞ্চুরির সংখ্যা তিনটি এবং অর্ধসেঞ্চুরির সংখ্যা নয়টি। একটি ম্যাচে তো ১৮৪ রান করে এসেছেন এই ব্যাটার! পঞ্চাশ ওভারের এই ফরম্যাটে দারুণ পারফরম্যান্সের দরুণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি খেলার জন্য জাতীয় দলে ডাক পড়ে বিজয়ের।
২০১২ এর শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক ঘটেছিল বিজয়ের। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন বিজয়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি করেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালে। সেই বছরের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটি হাঁকান বিজয়। বিজয় তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বশেষ অর্ধসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে ৯৫ রানের একটি ইনিংস খেলে। তারপর থেকে বিজয়ের ক্যারিয়ারের গল্পটা বেশ হতাশাজনক।
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পান। সেই চোট সেরে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ওয়ানডে দলে ফিরলেও প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি। ২০১৮ সালে ৭ ওয়ানডেতে যথাক্রমে করেছেন ১৯, ৩৫, ১, ০, ০, ২৩ ও ১০। এমন বাজে পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে সুযোগটা সোনার হরিণের মতো হয়ে গিয়েছিল বিজয়ের জন্য।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে এক ম্যাচে সুযোগ পেলেও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি বিজয়। তারপর থেকে জাতীয় দলে একেবারেই আর সুযোগ জুটেনি এই ক্রিকেটারের। ডিপিএল এ ভালো খেলার পুরষ্কারস্বরূপ ২০২২ এ জিম্বাবুয়ের সাথে ওয়ানডে দলের হয়ে আজকের ম্যাচটি তাই বিজয়ের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ ছিল। প্রত্যাবর্তনের গল্পটা সফলভাবে লিখতে পেরেছেন বিজয়- একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
২০২২ এর সময়টাই বিজয়ের ক্যারিয়ারে প্রত্যাবর্তনের সময়। ২০১৪ সালের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে ২০২২ এ এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। যদিও টেস্ট ফরম্যাটে ব্যর্থ হয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করতে। ২০১৫ সালের পর ২০২২ এ এসে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সুযোগ পেয়েছিলেন আবার। সেখানেও বিজয়ের প্রত্যাবর্তনের গল্পটা ব্যর্থতায় ভরা ছিলো।
শেষমেশ এনামুল হককে ফিরে পাওয়ার জন্য ওয়ানডে ফরম্যাটটির দিকে নজর ছিলো ক্রিকেটপ্রেমীদের। কারণ এই ওয়ানডে ফরম্যাটেই ডিপিএল দিয়ে আসার বাণী শুনিয়েছিলেন সবাইকে তিনি। নাহহ, এবার আর হতাশ করেননি বিজয়। ওয়ানডে প্রত্যাবর্তনটা শুরু করলেন দারুণভাবে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৬২ বলে ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেন বিজয়। চারটি চার ও তিনটি ছয়ের এই ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিলো ১১৭.৭। বিজয় সুন্দর এক আগমনীবার্তা দিয়ে আবার শুরু করলেন ক্যারিয়ারের এই অধ্যায়টা। বিজয়ের এই সফল কামব্যাকের পর সামনের পথটুকু বিজয় কিভাবে ঢেলে সাজাবেন তা দেখতে অপেক্ষায় থাকবে ক্রিকেটবিশ্ব।