টি-টোয়েন্টির যুগে পাওয়ার হিটারদের কদর সবচেয়ে বেশি। আর পাওয়ার হিটারের প্রসঙ্গ আসলে সবার আগে আসবে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের কথা। ভৌগলিক কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের শারীরিক শক্তি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। যার কারণে সহজেই বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেন তাঁরা। ক্রিস গেইল, কাইরেন পোলার্ড, সুনিল নারাইন থেকে হালের শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, রভম্যান পাওয়েলরা সবাই পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য বেশ পরিচিত।
ক্রিস গেইল, কাইরেন পোলার্ডদের ব্যাটে বহুবার ছক্কাবৃষ্টি দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। গেইলের জন্য ছক্কা মারাটা রীতিমতো এক অভ্যাস ছিল। কাইরেন পোলার্ড, গেইলরা এখন ক্যারিয়ারের একদম শেষে। লম্বা সময় ধরেই তাদের ব্যাটে আর সেই ছক্কাবৃষ্টির দেখা নেই।
গেইল, পোলার্ডরা যখন ফুরিয়ে যাওয়ার পথে তখনই নতুন এক পাওয়ার হিটারের আবিভার্ব হয় ক্রিকেট দুনিয়ায়। যার ব্যাটে বলে হওয়া মানেই বুলেট গতিতে বল বাউন্ডারির ওপারে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিংয়েও দুর্দান্ত তিনি।
২২ গজে এসেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন এই ক্যারিবিয়ান তারকা। ব্যাট হাতে যেন আরেক দানবের আগমন। গেইল তো একজনই; তবে তাঁর মধ্যে গেইলের ছায়া দেখতে পেলেন অনেকেই। ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাতেন হরহামেশাই।
নিজের দিনে প্রতিপক্ষকে একাই গুড়িয়ে দেন। তাঁর ব্যাটে বল লাগা মানেই যেন বুলেট গতিতে ছুঁটছে বল। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে যেন ছিটকে গেলেন বহুদূরে। বোলাররাও তাকে আউট করার অস্ত্র বের করে ফেললেন। এখনও তিনি ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন তবে সেটা ঘূর্নিঝড়ের মতই হঠাৎ আসে। ধারাবাহিকতা নেই, আগের সেই আগ্রাসনও নেই।
তবে ঘূর্নিঝড়ের মত যেদিন তার ব্যাট কথা বলে সেদিন প্রতিপক্ষ থাকে নিরুপায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দানবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেল ইনজুরিতে পড়ে নিজেকে হারিয়ে এখন খুঁজছেন।
২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পরের বছর ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়ানডে অভিষেক। পরের বছর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে ৯৬ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর ব্যাট করতে নেমে খেলেন ৬৪ বলে ৯২ রানের তাণ্ডব ইনিংস। ওই সিরিজেই শেষ ওয়ানডেতে বল হাতে শিকার করেন ৩৫ রানে ৪ উইকেট।
পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের কারণে ২০১২ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ৪.৫ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় দিল্লি ডেয়ারডেভিলস।
২০১৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ভারত এ দলের বিপক্ষে প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে টানা চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন এই পেসার। পরের বছর আইপিএলে মাত্র ৬০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর থেকে কেকেআরের জার্সি গায়েই আইপিএল মাতাচ্ছেন তিনি।
২০১৪ সালে রেকর্ডিং আর্টিস্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সেখানেই ‘ড্র রাস’ নামে পরিচিতি পান রাসেল। ২০১৬ সালে কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি। একই বছর পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) খেলার সুযোগ পান এই তারকা। ওই বছরই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি করে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি।
এরপর নিষিদ্ধ ড্রাগ নেওয়ার প্রমাণ মেলায় এক বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন রাসেল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএলে। পিএসএল, আইপিএল, বিগব্যাশেই খেলে থাকেন বছরের বেশিরভাগ সময়।
জাতীয় দলের অনিয়মিত এক মুখ তিনি। অবশ্য ওয়েস্ট ক্রিকেটে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলা সব ক্রিকেটারেরই এক চিত্র। জাতীয় দলের চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেই তারা বড় করে দেখেন।
ক্যারিয়ারের শুরুটা একজন পেসার হিসেবেই। এরপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে বোলিং অলরাউন্ডার। কিন্তু পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের সবটা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে। মূলত একজন পেসার হিসেবেই জাতীয় দলে আসেন তিনি। ব্যাট করতেন নয়, দশের দিকে। সেখান থেকে তিনি বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি তারকার একজন বনে যান।
মাঝে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান রাসেল। ইনজুরি থেকে ফিরলেও আগের সেই আগ্রাসনটা দেখা যায়নি তাঁর মাঝে। জাতীয় দলে এখনও তিনি অধারাবাহিক আর অনিয়মিত। তবে আইপিএলে কলকাতার জার্সি গায়ে নিয়মিতই খেলছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে আন্দ্রে রাসেল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হট কেক। অফ ফর্মের রাসেলও ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর পছন্দের শীর্ষে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন তিনি। জাতীয় দলের প্রতি স্রেফ রাসেলই না ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের নিবেদনটা নেই বললেই চলে।
যদিও ইনজুরির সমস্যায় অনেকটাই ব্যাকফুটে তিনি। ব্যাট হাতে ঝড় তুলছেন ঠিক; কিন্তু সেটাও কালেভদ্রে। এই ইনজুরি কাঁধে চড়িয়ে ক্যারিয়ারে কতদূর যেতে পারবেন তিনি সেটা নিয়ে সংশয় তো আছেই। আহত বাঘকেও সবাই ভয় পাই। ইনজুরিতে কিছুটা দমে গেলেও রাসেলের সামর্থ্য আছে ২২ গজ ত্রাশ করার। তিনি স্বরূপে ফিরলে প্রতিপক্ষের জন্য তা হবে এক অশনি সংকেত।