শেষ হল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসর। টানা দ্বিতীয় বারের মতো শিরোপা জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সাত দলের লড়াইয়ে নজর কেড়েছেন অনেকেই। তবে আগের আসরের তুলনায় এবারের বিপিএলে দেশি ক্রিকেটারদের আধিপত্য ছিল বেশি। আর সেই আধিপত্য শেষে চতুর্থবারের মত এই আসরের ট্রফি জিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
বিপিএলের নিয়মানুযায়ী একটি দলে সর্বোচ্চ ৪ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে পারেন। তো সেই নিয়ম মেনেই পারফর্ম্যান্সের বিচারে একটি একাদশ বানালে কেমন হয়? খেলা ৭১ তাই তৈরি করেছে বিপিএল সেরা একাদশ।
বিপিএলের নবম এই সেরা একাদশে সর্বোচ্চ তিন জন করে রয়েছেন দুই ফাইনালিস্ট দল সিলেট স্ট্রাইকার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স থেকে। দু’জন ক্রিকেটার রয়েছেন ফরচুন বরিশাল থেকে। আর একজন করে রয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, ঢাকা ডমিনেটর্স ও রংপুর রাইডার্স থেকে। অধিনায়কত্ব পেয়েছেন রানার আপ দলের মাশরাফি বিন মুর্তজা। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক খেলা ৭১ নির্বাচিত সেই একাদশ।
- নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট স্ট্রাইকার্স)
এবারের বিপিএলে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ব্যাটার। শুধু এই বিপিএলেই নয়, বিপিএলের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। প্রথম ব্যাটার হিসেবে পেরিয়েছেন ৫০০ রানের মাইলফলক। ১৫ ম্যাচে ৩৯.৬৯ গড়ে শান্ত এবারের আসর রাঙিয়েছেন ৫১৬ রানে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে শান্ত পুরো টুর্নামেন্টের মতোই ছিলেন উজ্জ্বল। সিলেটের ইনিংসের শুরুর গতি এনে দেন তিনি। খেলেন ৪৫ বলে ৬৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে। তাই খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে সেরা একাদশের উদ্বোধনী জুটিতে থাকছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
উদ্বোধনী জুটিতে শান্তকে সঙ্গ দিবেন কুমিল্লার হয়ে এবারের বিপিএল খেলতে আসা পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। পিএসএলের ব্যস্ততার কারণে প্লে-অফ ম্যাচগুলো খেলতে না পারলেও পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটিয়েছেন এ ব্যাটার। ১০ ম্যাচে ৫০.১৪ গড়ে করেছেন ৩৫১ রান। যার মধ্যে চারটিতেই ছিল পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস।
শান্ত’র সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাটিং ছাড়াও এ দলে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব সামলাবেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। যদিও কুমিল্লার হয়ে খুব কম ম্যাচেই উইকেটরক্ষকের ভূমিকার দেখা গিয়েছে তাঁকে।
- সাকিব আল হাসান (ফরচুন বরিশাল)
বরাবরের মতোই এবারের বিপিএলেও দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে এ আসরে ব্যাটার সাকিব নিজের আক্রমণাত্বক ব্যাটিং দিয়ে এসেছেন আলাদা নজরে। পুরো টুর্নামেন্টে ১৭৪.৪১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। সাথে গড়টাও রেখেছেন ঠিকঠাক, ৪১.৬৬। ব্যাট হাতে ৩৭৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১০ টি উইকেট।
তবে বিপিএলের এই সেরা একাদশে সাকিবের মূখ্য ভূমিকাটা হবে ব্যাটার হিসেবে। তিন নম্বরে ব্যাটিং করার জন্য খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে সেরা পছন্দ তিনি।
- নাসির হোসেন (ঢাকা ডমিনেটর্স)
এবারের বিপিএল টা ছিল নাসির হোসেনের জন্য নিজেকে ফিরে পাওয়ার মঞ্চ। গতবার দল না পাওয়া নাসির এ আসরে পুষিয়ে দিয়েছেন অলরাউন্ড নৈপুণ্যে। পুরো টুর্নামেন্টে ৩৬৬ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১৬ টি উইকেট। তবে ব্যক্তিগত অর্জনে সমুজ্জ্বল নাসির ঠিক দলগত সাফল্যে এবার সমৃদ্ধ হতে পারেননি। তবে বিপিএলের সেরা একাদশে ঠিকই নিজের জায়গাটা শক্তপোক্ত করার দাবিটা রেখে দিয়েছেন নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে।
- আফিফ হোসেন ধ্রুব (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)
নাসিরের মতোই আফিফ হোসেন ধ্রুবও দলগত সাফল্য পাননি। কিন্তু নিজের কাজটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ঠিকই করেছেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে ৩৮.২২ গড়ে করেছেন ৩৪৪ রান। তাই বিপিএলের এই দলটায় মিডল অর্ডার সামলানোর গুরুদায়িত্ব থাকছে আফিফের কাঁধে।
আফিফের জায়গায় অবশ্য জাকির হাসান বিবেচনায় আসতে পারতেন। তবে শুরুর ছন্দ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি ব্যাটার। তাই আফিফই থাকছেন এই একাদশে।
- ইফতিখার আহমেদ (ফরচুন বরিশাল)
প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে এসে দারুণ এক আসর কাটিয়েছেন পাকিস্তানি এ ব্যাটার। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়েছেন এই বিপিএলে। এক শতক আর তিন অর্ধশতকে ৫৮.৫০ গড়ে এবারের বিপিএল রাঙিয়েছেন ৩৫১ রানে। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ছক্কা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে(২৩ টি)।
মিডল অর্ডারে ব্যাটে এসে দলের ভিত্তি গড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বিধ্বংসী ফিনিশিংয়ের জন্য বিপিএলের সেরা একাদশে অবধারিতভাবেই থাকছেন ইফতিখার আহমেদ।
- খুশদিল শাহ্ (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
কুমিল্লার জার্সি গায়ে পুরো টুর্নামেন্টে ৪৭.৮০ গড়ে ২৩৯ রান করেছেন। তবে তার চেয়েও বড় কথা, কুমিল্লার হয়ে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই পিঞ্চ হিটারের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। সাকিবের পর এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তাঁর (১৬১.৪৮)। তাই খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে এবারের বিপিএলের সেরা একাদশে পিঞ্চ হিটারের ভূমিকায় থাকছেন খুশদিল শাহ্।
- মাশরাফি বিন মর্তুজা (সিলেট স্ট্রাইকার্স)
বিপিএল-২০২৩ এর সেরা একাদশে অধিনায়ক হিসেবে খেলা ৭১ বেছে নিয়েছে মাশরাফিকে। যদিও দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি। প্রথমবারের মতো বিপিএল ফাইনালে এসে পরাজয়ের মুখ দেখলেন। তারপরও এ বারের বিপিএলে কোনো সন্দেহ ছাড়াই সেরা অধিনায়ক তিনি।
পুরো টুর্নামেন্টে বলতে গেলে সামনে থেকে সিলেটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। বল হাতে ১২ টি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া সিলেটের হয়ে দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে কয়েকটি ছোট ইনিংস খেলেছেন তিনি। যেগুলো পরিস্থিতি বিবেচনায় ছিল খুবই গুরত্বপূর্ণ।
- তানভীর ইসলাম (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
টুর্নামেন্টের শুরুতে কুমিল্লার একাদশে জায়গা না পেলেও টুর্নামেন্ট শেষে সেরা একাদশে ঠিকই জায়গা পাচ্ছেন তানভীর ইসলাম। এবারের বিপিএলে বাঁ হাতে কব্জি ঘুরিয়ে পেয়েছেন ১৭ টি উইকেট। এর মধ্য দিয়ে হাসান মাহমুদের সাথে যুগ্মভাবে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। সাকিব, নাসিরের সাথে স্পিন আক্রমণে এই একাদশে তাই যুক্ত হবেন তানভীর ইসলাম।
- হাসান মাহমুদ (রংপুর রাইডার্স)
এই একাদশে পেসারদের নেতৃত্ব দিবেন হাসান মাহমুদ। পুরো টুর্নামেন্টে ১৭ টি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। ফাইনালের আগে তিনিই ছিলেনে এককভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার।
- মোহাম্মদ আমির (সিলেট স্ট্রাইকার্স)
হাসান মাহমুদের সাথে পেস বোলিং ইউনিটে থাকবেন মোহাম্মদ আমির। পুরো টুর্নামেন্টে ১৪ টি উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। আমিরের জায়গায় বিবেচনায় আসতে পারেন রংপুর রাইডার্সের আফগানি পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ১৫ টা উইকেট নিয়েছেন। তবে ইকোনমি রেট, আর দলের ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় মোহাম্মদ আমির কিছুটা এগিয়ে আছেন। তাই খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে, সেরা একাদশে থাকছেন মোহাম্মদ আমির।
- তৌহিদ হৃদয় ( দ্বাদশ ব্যক্তি)
তৌহিদ হৃদয়কে চাইলেই এই একাদশে অন্তর্ভূক্ত করা যেত। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৫ টি ফিফটি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু টুর্নামেন্টের শেষ ভাগে তাঁর ব্যাট জ্বলে ওঠেনি। ফাইনাল ম্যাচে ফিরেছেন শূন্য রান করেই। তাই এই দলে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবেই থাকতে হচ্ছে এ ব্যাটারকে।