শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), কিন্তু নেই কোন উন্মাদনা। দেশে যে একটি ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চলছে সেটিও জানেন না অনেক ক্রিকেটপ্রেমী। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে বিপিএল যেমন দিন দিন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, তেমনি অন্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগের সাথে তুলনাতেও পিছিয়ে যাচ্ছে শতগুণ। আবার বিপিএলের প্রতি আসরেই বিভিন্ন অসঙ্গতি চোখে পড়ে, আর এসব কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টকে পড়তে হয় সমালোচনা আর ট্রোলের মুখে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না থাকায় প্রথমেই একদফা সমালোচনা হয়েছিল বিসিবির। এবার প্রথম ম্যাচের আগে আরো একবার অপেশাদার আচরণের প্রমাণ দিয়েছে সংগঠনটি। উদ্বোধনী ম্যাচের সময় নিয়ে রীতিমতো হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে তাঁরা। সিলেট স্ট্রাইকার্স এবং চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে বিপিএলের নবম আসর। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় ২টা ৩০ মিনিটে।
কিন্তু ম্যাচের দিন মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে হুট করে বদলে গিয়েছে ম্যাচ শুরুর সময়। আধাঘন্টা এগিয়ে দুপুর দুইটায় চট্টগ্রাম এবং সিলেটের খেলা শুরু হয়েছে। অথচ ম্যাচ শুরুর সময়ে পরিবর্তন কেন এনেছে সেটি ব্যাখ্যা করেনি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এমন ঘটনা নিশ্চিতভাবেই অবাক করার মত। বিশেষ করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে হুটহাট সূচির পরিবর্তন বিস্ময়কর বটেই। কাগজে-কলমে পেশাদার হলেও বিপিএল আসলে অপেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে চলছে।
ডিআরএস ছাড়া বর্তমান যুগের ক্রিকেট চিন্তা করা যায় না। অথচ এটির ব্যবহারও হচ্ছে না বাংলাদেশের জনপ্রিয় টি-টুয়েন্টি আসরটিতে। গতবারের মতো এবারও শুধু শেষের চার ম্যাচে থাকবে ডিআরএস। বাকি ম্যাচগুলোতে থাকবে নামে মাত্র বিকল্প পদ্ধতি – অল্টারনেট ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা এডিআরএস।
ফলে নিঁখুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেগ পেতে হচ্ছে থার্ড আম্পায়ারকে। ডিআরএস ব্যবহার করেও যেখানে সঠিকভাবে ম্যাচ পরিচালনা করা যায় না সব সময়, সেখানে এডিআরএস ব্যবহার করলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। এই যেমন খুলনা টাইগার্স বনাম ঢাকা ডমিনেটরস ম্যাচে দেখা গিয়েছে এডিআরএস নাটক; প্রথমে আউট দিলেও পরবর্তীতে সৌম্য সরকারকে আবার নট আউট ঘোষণা দেন থার্ড আম্পায়ার।
গতবার তড়িঘড়ি করে বিপিএল আয়োজন করেছিল বিসিবি। টুর্নামেন্ট জুড়ে ডিআরএস রাখতে না পারার কারণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছিল হুট করে আয়োজনের ব্যাপারটি। কিন্তু এবার দীর্ঘ পরিকল্পনা করার পরেই শুরু হয়েছে বিপিএল। তারপরও কেনো ডিআরএস রাখা সম্ভব হয়নি সে ব্যাপারে কোন জবাব দিতে পারেনি বিপিএল কর্তৃপক্ষ।
ডিআরএস না থাকার খবর পুরনো, বিপিএলের প্রথম ম্যাচে ছিল না স্পিডোমিটারও। ভাল মানের বিভাগীয় খেলাতেও এখন দেখা যায় স্পিডোমিটার, অথচ দেশের সর্বোচ্চ স্তরের খেলায় এই প্রযুক্তি রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। উদ্বোধনী ম্যাচে তাই রেজাউর রাজা, আমিররা কত গতিতে বল করেছেন সেটি বুঝতে পারেননি কেউই। যদিও এরপর স্পিডোমিটার যোগ করা হয়েছে তবে বিসিবির অপেশাদারিত্বের ব্যাপারটি রয়েই গিয়েছে।
এছাড়া সিক্স মিটার, বাউন্ডারি কাউন্ট, দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্স এগুলোর কিছুই ছিল না চট্টগ্রাম বনাম সিলেট ম্যাচে। বিশ্বের অন্য লিগের তুলনায় বিপিএলের এমন পিছিয়ে থাকার জন্যই ক্রিকেট ভক্তরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এই টুর্নামেন্ট থেকে।
ভাল মানের বিদেশী খেলোয়াড় আনতে না পারা বিপিএলের বড় ব্যর্থতাগুলোর একটি। আর এটির জন্যও দায়ী বিসিবির খামখেয়ালি মনোভাব। বিপিএলের সাথে প্রায় একই সময়ে অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে আরো দুইটি ফ্রাঞ্চাইজি লিগ মাঠে গড়াবে। অধিক পারিশ্রমিক সেসব টুর্নামেন্টে খেলা বেশি পছন্দ অধিকাংশ ক্রিকেটারের। তাই তো অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বিপিএলে বড় নামের বিদেশী খেলোয়াড় খুব একটা নেই।
শুধু বিসিবি-ই নয়, ফ্রাঞ্চাইজিগুলোও যথেষ্ট হ-য-ব-র-ল। কেউ খেলার আগের দিন পর্যন্ত জার্সি তৈরি করেনি; কেউবা খেলোয়াড়দের কিট ব্যাগ পৌঁছে দেয়নি সময় মত। সব মিলিয়ে তাদের পেশাদারি মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়।
সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি মুতর্জা তো আগেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন বিপিএল নিয়ে। সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের পেসার ম্যাকরেন মজা নিয়েছেন এডিআরএস নিয়ে; তবু উন্নতির কোন চেষ্টা নেই বিসিবির। বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি যে-ই ভালবাসা সেটি কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সুন্দর একটি বিপিএল আয়োজন করার। তাহলে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হবে বিসিবি, তেমনি নতুন ক্রিকেটাররাও বেরিয়ে আসবে।