ছবিটা এইতো কিছুদিন আগের। এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি। নিজের গতি ও স্যুইং দিয়ে লোকাল ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিলেন। পেসার সুমন খান ঠিক কতটা সম্ভাবনাময় সেই আলোচনাই চলছিল গত কয়েকদিন ধরে। ফলে বিপিএল প্লেয়ার্স ড্রাফটের ‘ই’ ক্যাটাগরিতে থাকা সুমন খান দল পাবেন সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দলগুলোর কাছে হয়তো সুমনের এমন পারফর্মেন্স ছিল মূল্যহীন।
সুমন খান নিজেকে প্রমাণ করেছেন লাল বলের ক্রিকেটে। তাঁর সাথে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের কিংবা সাদা বলের ক্রিকেটে পার্থক্য আছে সেটা সত্য। তবুও তো ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন অবিশ্বাস্য ছন্দে থাকা একজন ক্রিকেটারের প্রতি কোন আগ্রহই দেখালো না সাত দলের কেউই। সদ্য সমাপ্ত হওয়া এনসিএলের সেরা পারফর্মার সুমনের প্রতি দলগুলোর এমন অবহেলা অবাক করেছে দেশের ক্রিকেট ভক্তদের।
এবারের এনসিএলে ঢাকা ডিভিশনের হয়ে ৬ ম্যাচে এই পেসার পেয়েছিলেন ৩৩ উইকেট। একম্যাচে নয় উইকেট সহ দুইবার পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন এই পেসার। সবমিলিয়ে লম্বা সময় পর ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন পেসার বল হাতে এমন রাজত্ব করলেন। তবে এসবকিছুই বিপিএলের দল পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
বিপিএল ড্রাফটে পেসার সুমন খান ছিলেন ‘ই’ ক্যাটাগরিতে। তাঁকে দলে ভেড়ানোর জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিকে খরচ করতে হতো মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। ওদিকে একইরকম ভাবে অবাক করেছে পেসার মুশফিক হাসানের দল না পাওয়াও। এই পেসারও জাতীয় ক্রিকেট লিগে বল হাতে ঝড় তুলেছিলেন।
হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে থেকে নিজে গড়ে তোলা এই পেসার এবার নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। তিনিও ইনিংসে দুইবার পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন। এছাড়া তাঁর বোলিং গড় ছিল মাত্র ১৫.৯২। তবে মুশফিকের এমন পারফর্মেন্সও যথেষ্ট ছিল না বিপিএলে কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির মনোযোগ।
ওদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ অনেকদিন ধরেই। কোনভাবেই আন্তর্জাতিক মানের একজন লেগি খুঁজে পাইনি আমরা। এরইমাঝে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলেছেন। তবে একটা টি-টোয়েন্টি লিগে এই লেগ স্পিনারকেও দলে ভেড়ায়নি কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি। এছাড়া সম্ভাবনাময় আরেক লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে দলে নেয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখায়নি কোন দল।
সম্ভাবনাময় ও তরুণ এই ক্রিকেটাররা দল না পেলেও প্রায় প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই অবাক করার মত কয়েকজন ক্রিকেটার দেখা যায়। যারা আসলে কোথাওই পারফর্ম না করেও দল পেয়ে গিয়েছেন। তাঁরা আদৌ বিপিএলে খেলার যোগ্য কিনা সেই প্রশ্নও আসতে পারে।
ফলে প্রশ্ন উঠতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের নিয়েও। যারা দলগুলো সাজান তাঁরা আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটের খোজ কতটা রাখেন। নাকি শুধু নামের বিচারেই অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের দলে ভিড়িয়ে কোনরকমে দল গোছাচ্ছেন তাঁরা। সুমন খান, মুশফিক কিংবা বিপ্লবরা যদি এই প্রশ্ন করে বসে এড়িয়ে যাবার সুযোগ কী সত্যিই আছে?
এছাড়া বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও দল পাননি এবারের বিপিএলে। ওদিকে গতকালই বিসিএলে সেঞ্চুরি করা নাঈম ইসলামও ড্রাফট থেকে দল পাননি। এছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুল, শামসুর রহমান শুভ, জহুরুল ইসলাম অমি, হাসান মুরাদরাও দল পাননি এবারের বিপিএলে।
তবে এদের অনেককেই হয়তো ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে নিতে পারে দলগুলো। তাহলেও যদি সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা দল পান সেটাই দেশের ক্রিকেটের লাভ।