বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ! কিভাবে সম্ভব?

একদিকে স্বপ্নের আকাশে মেঘ জমেছে, অন্যদিকে রংধনু। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল- দুই দলই কাতার বিশ্বকাপে এসেছিল ফেবারিটের তকমা নিয়ে। কিন্তু দুই দলের পথযাত্রা শুরু হয়েছে একেবারে উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর মত। সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারে যেখানে ব্যাকফুটে চলে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা, সেখানে সার্বিয়ার বিপক্ষে সাম্বা জাদুতে ২-০ গোলের জয়ে পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে ব্রাজিল।

একদিকে স্বপ্নের আকাশে মেঘ জমেছে, অন্যদিকে রংধনু। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল- দুই দলই কাতার বিশ্বকাপে এসেছিল ফেবারিটের তকমা নিয়ে। কিন্তু দুই দলের পথযাত্রা শুরু হয়েছে একেবারে উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর মত। সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারে যেখানে ব্যাকফুটে চলে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা, সেখানে সার্বিয়ার বিপক্ষে সাম্বা জাদুতে ২-০ গোলের জয়ে পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে ব্রাজিল।

বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের দিক দিয়ে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার বিস্তর ব্যবধান। তারপরও যুগের পর যুগ ধরে এ দুই দলের মধ্যে চিরায়ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ একটুও কমেনি। তাই প্রতি বিশ্বকাপ আসলেই, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য ম্যাচের ভাবনার আবেশে আটকে থাকে পুরো বিশ্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত হওয়া ২২ বারের বিশ্বকাপে এ দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মাত্র ৪ বার।

শেষবার এ দুই দল বিশ্বকাপে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালে। এরপর সাত সাতটি বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেও লাতিন আমেরিকার এই দুই জায়ান্টের আর বিশ্বকাপ আসরে দেখা হয়নি। কাতার বিশ্বকাপে এসে সেই গেরো কি এবার তবে ছিঁড়বে? সম্ভাবনা আছে। তবে পেরোতে হবে অনেক বাঁধা আর মেলাতে হবে বহু সমীকরণ। কী সেই সমীকরণগুলো, চলুন সেটিই দেখে নেওয়া যাক।

কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই দেখার প্রথম শর্ত হল, দুই দলকেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। শুধু তাই নয়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দুই দলই যদি রাউন্ড অফ সিক্সটিন এবং কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব পার হয়ে আসে, তবেই এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালটা হতে পারে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মধ্যে।

আরেকটু খোলাসা করে বলা যাক। আর্জেন্টিনা সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হলে সেকেন্ড রাউন্ডে মুখোমুখি হবে ডি গ্রুপের রানার্সআপ দলের বিপক্ষে। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে ফ্রান্স, ডেনমার্ক কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কোনো একটি দল। আর্জেন্টিনা সেই বাঁধা পার করতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে গ্রুপ এ আর গ্রুপ বি তে থাকা দলগুলোর মধ্যে কোনো একটি। সম্ভাব্যতা বিবেচনায় কোয়ার্টার ফাইনালে সেই দুই গ্রুপ থেকে আসতে পারে নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, সেনেগাল, যুক্তরাষ্ট্র অথবা ওয়েলস।

এখন এমন পথযাত্রায় ব্রাজিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে সেকেন্ড রাউন্ডে তারা মুখোমুখি হবে গ্রুপ এইচের রানার্সআপ দলের সাথে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে উরুগুয়ে, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা ঘানা। আর সেই বাঁধা টপকে গেলে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হতে পারে জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, জাপান কিংবা ক্রোয়েশিয়া। এখন এই সমীকরণে দুই দলই যদি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব পার হতে পারে তাহলে সেমিফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার একটা লড়াই দেখতেই পারে বিশ্ব ফুটবল।

এ তো গেল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাব্যতা। এখন দুই দল গ্রুপ রানার্সআপ হলেও কিন্তু সেমিফাইনালে তাদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিভাবে? কারণ গ্রুপ রানার্সআপ হলেও সেকেন্ড রাউন্ড এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ঐ একই প্রতিপক্ষদের সাথে ম্যাচের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আর্জেন্টিনা সি গ্রুপের রানার্স আপ হলে ডি গ্রুপেরই এক দলের সাথে সেকেন্ড রাউন্ডে তারা মুখোমুখি হবে। একই সমীকরণ ব্রাজিলের জন্যও। তাই এ সমীকরণে দুই দলই কোয়ার্টার ফাইনালের বাঁধা পেরিয়ে আসতে পারলে সেমিতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার একটা লড়াই হতে পারে।

এতক্ষণ তো গেল সেমিতে দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাব্যতা। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মধ্যকার ফাইনাল কি হতে পারে? হ্যাঁ। অবশ্যই পারে। কিভাবে সেটি? আর্জেন্টিনা যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর ব্রাজিল যদি গ্রুপ রানার্সআপ হয় তাহলেই সম্ভব। আর্জেন্টিনা সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেকেন্ড রাউন্ড পার করলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, সেনেগাল, যুক্তরাষ্ট্র, অথবা ওয়েলস। এখন তারা এই বাঁধা টপকে গেলে সেমিতে পাবে জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, ক্যামেরুন অথবা পর্তুগালকে।

এখন গ্রুপ জি তে যদি ব্রাজিল রানার্সআপ হয় এবং তারা যদি সেকেন্ড রাউন্ড পার করতে পারতে তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া অথবা জাপান। আর সেই ধাক্কা সামলে ফেললে সেমিতে তারা পাবে নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক অথবা ফ্রান্স। এখন দুই দলই যদি তাদের জায়গা থেকে সেমিফাইনাল টপকে যাই, তাহলে আমরা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মধ্যকার একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতেই পারি।

একইভাবে ব্রাজিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর আর্জেন্টিনা গ্রুপ রানার্সআপ হলে, দুই দলই যদি ফাইনালের আগ পর্যন্ত সকল বাঁধা পার করে তাহলে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল হতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মধ্যে সুপার ক্লাসিকোর এক মঞ্চ।

তবে এগুলো দিনশেষে সম্ভাব্যতারই সমীকরণ। সম্ভাব্যতা তো আর সবসময় বাস্তবতায় রূপ নেয় না। তবে উপরের এই চারটি শর্ত পূরণ হলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ এবারের বিশ্বকাপে দেখা যেতেই পারে। যদিও এজন্য দুই দলকে নিজেদের জায়গা থেকে সমান তালেই এগোতে হবে। তবেই কাতার বিশ্বকাপে একটি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণের মঞ্চায়ন হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...