অনবদ্য ব্রেন্টফোর্ড চমক

প্রিমিয়ার লিগ, বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই লিগে খেলার স্বপ্ন দেখেনি বা দেখে না এমন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। এই লিগ থেকেই ফুটবলে তারকা তকমা পেয়েছেন হালের হ্যারি কেইন, রাহিম স্টার্লিং, ডেভিড ডি গিয়া থেকে শুরু করে স্টিভেন জেরার্ড, ডেভিড বেকহাম, ক্রিশ্চিয়ানোরো রোনালদো, ওয়েইন রুনি ও ডেনিস বার্গক্যাম্পের মত কিংবদন্তি খেলোয়াড়েরা।

গোটা ইংল্যান্ডের আনাচে-কানাচে যত ফুটবল ক্লাব রয়েছে তাঁদের সবার লক্ষ্য এক ও অদ্বিতীয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। কিন্তু ক’টা দলই বা পারে বিশ্বসেরা এই লিগে অংশ নিতে?

যদি স্বপ্ন পূরণও হয় তবুও কার এত সাধ্য যে খেলতে এসেই বুকে ভয় ধরিয়ে দেবে প্রিমিয়ার লিগে খেলা অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে ভরপুর এমনসব ক্লাবকে? কিন্তু এমনটা করে দেখিয়েছে পশ্চিম লন্ডনের ছোট্ট একটি ক্লাব ব্রেন্টফোর্ড এফসি।

সেই ১৮৮৯ সালে পথচলা শুরু ব্রেন্টফোর্ড এফসি-র। সেই থেকেই ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ডিভিশন লিগে খেলে আসছে তাঁরা। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই তাঁদের পথচলা চলতে থাকে। স্বপ্নে বিভোর ক্লাবটির আশা খেলবে তাঁরা প্রিমিয়ার লিগ। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু প্রিমিয়ার লিগে খেলা তো আর মামা বাড়িতে গিয়ে করা আবদার না, যে মামা চেষ্টা চালিয়ে তা জোগাড় করে দেবেন।

প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তার থেকেও বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো  সঠিক কার্যপরিকল্পনা। এই ব্রেন্টফোর্ড এফসি ইংল্যান্ড প্রথম ডিভিশন কিংবা দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলা প্রথম দল যারা তাঁদের একাডেমির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে মনোনিবেশ করেছে তাঁদের বি-দলে।

ব্রেন্টফোর্ড ক্লাব কর্তারা মনে করেন একাডেমির চেয়ে বি-দলকে প্রাধান্য দিলে তা প্রধান দলের জন্য অত্যাধিক ফলপ্রসু হবে। তাই হয়েছে তাঁদের জন্যে।

এর পেছনে বিশেষ কারণ রয়েছে, ব্রেন্টফোর্ড বিশেষ একটা পন্থা অবলম্বন করে থাকে। সাধারণত ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্কৃতিতে বি-দলের জন্যে আলাদা কোচিং স্টাফ থাকে না। থাকলেও তাঁরা একাধারে অনেক দিক সামলাতে গিয়ে হাপিয়ে উঠেন, শেষমেষ ফলাফল মেলেনা।

এক্ষেত্রে বব্রেন্টফোর্ড এফসি ভিন্ন। তাঁরা তাঁদের বি-দলের জন্যেও রেখেছেন পূর্ণ কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে ফিজিও, গণযোগাযোগ কর্মকর্তা। একটা বড় দলের যা যা থাকে তাই রাখার চেষ্টা করেছেন ক্লাব কর্তারা। তারউপর ব্রেন্টফোর্ড ক্লাবকর্তারা প্রধান দল আর বি-দলেকে মেলামেশার সুযোগ করে দিয়েছেন। যাতে করে বি-দলে থাকা খেলোয়াড়েরা শিখতে পারে, জানতে পারে প্রধান দলের খেলোয়াড় থেকে।

ক্লাবটির আয়ের প্রধান উৎস খেলোয়াড় দলবদল। তাতে বেশ সফল তাঁরা। তাঁদের সেরা গোলদাতা নেইল মওপেইকে বিক্রি করেছেন ব্রাইটন এফসির কাছে, অন্যদিকে আরেক সেরা খেলোয়াড় ওলি ওয়াটকিংসকে পাঠিয়েছেন অ্যাস্টোন ভিলার ঘরে।

প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এই ব্রেন্টফোর্ড  বন্দনা? কেন এত আলাপচারিতা? বিশেষ কারণ তো রয়েছেই। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের পর এবারই প্রিমিয়ার লিগে উন্নিত হয়েছে ব্রেন্টফোর্ড এফসি। প্রায় ৭৪ বছরের অপেক্ষার অবসান। ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। স্বভাবতই সবার ধারণা তাঁরা কি আর বিশেষ করবেন?

প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ওয়েস্ট হাম, আর্সেনাল ও উলভসের মতো টিমকে হারিয়ে এবং শক্তিশালী লিভারপুলের সাথে ড্র করে পয়েন্ট তালিকার সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ব্রেন্টফোর্ড এফসি। সাত ম্যাচে তিন জয়, তিন ড্র ও এক হার মিলিয়ে তাঁরা পয়েন্ট তুলেছেন বারো। সাত ম্যাচে গোল করেছেন দশটি। প্রশংসনীয়! অভূতপূর্ব!

এমন প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক লিগে এত বছর পর খেলতে আসা একটা দল স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা মানসিক অস্বস্তিতে থাকার কথা। মানসিক চাপে ভুল করার কথা, থাকার কথা রেলিগেশনের আশেপাশে। কিন্তু ব্রেন্টফোর্ড এফসি সব চাপ ঝেড়ে ফেলে খেলেছেন মনপ্রাণ দিয়ে।

গত পঁচিশ সেপ্টেম্বর লিভারপুলের সাথে ম্যাচটা তাঁরা খেলেছেন চোখে চোখ রেখে, লড়াই করেছেন সমানে সমানে। ৩-৩ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তাঁরা। ২-১ এ পিছিয়ে থেকে শেষমেশ ড্র করেছিল ব্রেন্টফোর্ড এফসি। প্রিমিয়ার লিগের আরেক জায়েন্ট আর্সেনালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে পশ্চিম লন্ডন থেকে আগত ক্লাবটি।

তাঁদের এমন দাপুটে পারফর্মেন্স রীতিমত অনুপ্রাণিত করবে অন্যসব ক্লাবদেরকে যারা এখনো উন্নিত হতে পারেনি প্রিমিয়ার লিগের মহামঞ্চে। তাছাড়া ব্রেন্টফোর্ড এফসির এমন সাহসী খেলার ধরণ ও তাঁদের পজিটিভ ফলাফল প্রমাণ করে ফুটবল খেলায় ছোট দল বড় দল বলতে কিছু নেই। ফুটবলের আয়তাকার সবুজ গালিচায় সবাই সমান, পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সাহস আর আত্মবিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link