‘বদলা’য় দিন বদলায়

আধুনিক পৃথিবী, ব্যস্তময় জীবন। দুনিয়া জুড়ে চলছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দাপট। ওয়ানডে নিয়েও কমে যাচ্ছে মাতামাতি। ছুটে চলা জীবনে টেস্ট ক্রিকেট যেন ছেড়ে যাওয়া প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমা।

অতীতে এই টেস্টের ছিল নিজস্ব সংস্কৃতি৷ সাদা পোশাকের ভিড়ে মিশে থাকতো রঙিন স্বপ্ন৷ এখন সেসব শুধুই স্মৃতি৷ রোমাঞ্চিত সময় হারিয়ে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে সংস্করণটা।

টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্যের অনেকটাই যেন পেসারদের আগ্রাসনে। বল হাতে গতি আর বাউন্স। আবার ইনসুইং আর আউট সুইংয়ে ব্যাটারদের শাসন। বর্তমানে এসব বিবেচনায় দুনিয়ার অন্যতম সেরা জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড জুটি।

অ্যান্ডারসন ও ব্রড ধারাবাহিকভাবে দাপট দেখাচ্ছেন বাইশ গজে৷ ভিনদেশের দুই মানুষ হতে পারে আপনার অনুপ্রেরণা৷ কেননা অ্যান্ডারসন ছাড়িয়েছে বয়সের সংখ্যা ৪০৷ সর্বকালের সেরা পেসারও বর্তমানে তিনি৷ আর সাঁইত্রিশ পূরণের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্রড৷ তারা অদম্য, তারা দুর্বার৷

ছোটবেলায় মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলতো ‘আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা’৷ চাঁদের নেই নিজস্ব আলো, তবে মা স্বপ্ন বুনতেন সন্তান নিজ আলোয় আলোকিত করবে সমাজকে ৷ অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি অনেকটাই এমন৷ নিজ আলোতে রাঙিয়ে দিচ্ছেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে৷

শতশত উইকেট আর অসংখ্যবার ৫ উইকেট প্রাপ্তি৷ এমন উপভোগ্য সময় রয়েছে দুজনের৷ একই সাথে রয়েছে তিক্ত এক অভিজ্ঞতা৷

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সম্মানের যুদ্ধ অ্যাশেজ৷ সবশেষ সিরিজে চাহিদার তুলনায় বাড়তি কিছু করতে পারেনি অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি৷ সিরিজের মাঝে বাদ পড়েছিল একাদশ থেকে৷ এরপর জাতীয় দল থেকেই৷ পরিস্থিতি এমন প্রত্যাবর্তনের সুযোগ যেন সোনার হরিণ৷

কথায় আছে খারাপ সময় নাকি মানুষ চেনা যায়৷ মানুষ চিনেছেন অ্যান্ডারসন-ব্রডও। অনেকে যেমন ছিলেন না পাশে, অনেকে আবার দিয়েছেন সাহস৷ অধিনায়ক হয়ে স্টোকস দলে ফেরালেন দুজনকেই।

চলতি মাসেই শুরু হবে অ্যাশেজ যুদ্ধ৷ দলে প্রত্যাবর্তনের পর অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি দেখিয়েছে চেনা রূপ৷ বড়জন ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ৪৫ উইকেট৷ ছোটজন সমান ম্যাচে ৪৪। গেলবারের আক্ষেপ দূর করতে একে অন্যকে বলতে পারে ‘চল ভাই বদলা নেই’।

টেস্ট ক্রিকেট আপনি, আমি উপভোগ না করলেও উপভোগ করছে ইংল্যান্ড দল৷ কোচ ম্যাককালাম আর অধিনায়ক স্টোকস মিলে চালু করেছে বাজবল নীতি৷ এই নীতিতে ‘ড্র’ ছাড়া রয়েছে সমস্ত কিছুই৷ কখনো সহজ ম্যাচ হতে পারে কঠিন, আবার কখনও কঠিন ম্যাচে জয়৷ স্টোকসের এই মানসিকতায় বড় সহযোদ্ধা অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি।

ইংল্যান্ডের হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার অ্যান্ডারসন ও ব্রডের৷ দুজনের ঝুলিতেই রয়েছে পাঁচ শতাধিক উইকেট৷ তবে আসন্ন সিরিজ দুজনের জন্যই প্রমাণের মঞ্চ৷ আগের আসরে পারফরম্যান্স হয়নি চাহিদা মাফিক৷ দলও হেরেছে ট্রফি৷ এবার ট্রফি রক্ষায় বাড়তি কিছু করতে হবে এই জুটিকে।

১৮৯০ দশকে প্রথমবার শুরু হয়েছিল দুই দলের লড়াই৷ মাঝের এই সময়ে হয়েছে ৭২ সিরিজে ৩৩৮টি ম্যাচ৷ তবে অতীতের সব সিরিজের চেয়ে এবারের সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অস্ট্রেলিয়ার মূল লড়াই হবে ইংল্যান্ডের বাজবল নীতির বিপক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link